কীভাবে এলো বই মেলা

কীভাবে এলো বই মেলা

মো. সাইফ: ১৯৭২ সালকে ইউনেস্কো আন্তজার্তিক গ্রন্থ বর্ষ হিসেবে ঘোষনা করলো। কথা-সাহিত্যিক সরদার জয়েন উদদীন গ্রন্থমেলা সম্পর্কে খুবই আগ্রহী ছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে আয়োজন করে বসলেন আন্তজার্তিক গ্রন্থমেলার। এভাবেই শুরু হয়েছিলো বাংলা একাডেমীতে বইমেলার। এই সরদার জয়েন উদদীন-ই ছিলেন বাংলাদেশে বই মেলার সর্ব প্রথম আয়োজক। তিনি ১৯৬৫ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরীর (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী) নিচ তলায় শিশু কিশোরদের বই নিয়ে আয়োজন করে ছিলেন শিশু-গ্রন্থমেলা। জানা যায় এটিই ছিলো দেশের প্রথম বই মেলা।

দেশ স্বাধীনের পর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে বইমেলা না হলেও ১৯৭২ সালে একাডেমীর দেয়ালের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী, বর্ন মিছিলের তাজুল ইসলাম এবং মুক্তধারার চিত্ত রঞ্জন সাহা কিছু বই নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন। কলকাতা থেকে আনা বাংলাদেশী শরনার্থীদের লেখা ৩২ টি বই যা স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত সেসব নিয়ে এক টুকরো চটের উপর বসেই মেলা শুরু করেন চিত্ত রঞ্জন সাহা। পাঠক এবং অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে মেলাকে ঘিরে। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে ক্ষুদ্র পরিসরের এই গ্রন্থমেলা।

১৯৭৬ সালে মেলাকে স্বীকৃতি প্রদান করে বাংলা একাডেমি। ফলে বেড়ে যায় মেলার গুরুত্ব। ১৯৭৮ সালে সরাসরি গ্রন্থমেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলা একাডেমি। বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি বই মেলায় যোগ দেয় ১৯৭৯ সালে। এভাবেই মেলার পরিসর বাড়তে থাকে। শুরু হয় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে নিয়মিত বইমেলার আয়োজন।

১৯৮৪ সালে বই মেলার নতুন নামকরন হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থ মেলা’। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণ করতেই ভাষার মাসে আয়োজিত বই মেলার এই নামকরণ করা হয়। প্রতি বছরই একটু একটু করে বিশাল থেকে বিশালতর হচ্ছে বই মেলা। দীর্ঘ এক মাসব্যাপী এই আয়োজন শুধু প্রকাশনা শিল্পের শক্ত অবস্থানই তৈরি করছে না, নতুন পাঠক, নতুন লেখক সৃষ্টিতে রাখছে উল্লেখযোগ্য অবদান।

বই মেলার জনপ্রিয়তা এবং প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা, পাঠকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃদ্ধি পেয়েছে এর আয়তন ও। ২০১৪ সালে বইমেলার একটি বড় অংশকে স্থানান্তর করা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

তথ্যসূত্র : ইউনেসকোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া ও বাংলা একাডেমি।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment