‘কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা : দেশের সার্বিক উন্নয়নের অণুঘটক’

‘কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা : দেশের সার্বিক উন্নয়নের অণুঘটক’

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

ঢাকা শহরে বসবাস করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এই শহরের দুঃসহ যানজট মোকাবেলা করা। দ্রুত নগরায়ন ও অস্বাভাবিক জনঘনত্বের কারণে ঢাকার যানজট এক অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় চলে গেছে। যার ফলে শহরের উন্নয়ন তো বটেই সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অতএব বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ট্রাফিক ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময়। এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কার্যকর পথ আবিস্কারের লক্ষ্যে গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে, তাদের গবেষণার ফলাফল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান, নীতিনির্ধারক, পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।

এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আজ ২১ অক্টোবর, ২০১৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা : দেশের সার্বিক উন্নয়নের অণুঘটক’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার রাকিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান এবং মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ এম ইসলাম, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহবুব-উল-হক মজুমদার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক শামসুল হক। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান, পরিচালক  (এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রফেসর ড. এ আই মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম, বিপিএম, যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-ঢাকা উত্তর) মো. মোসলেহ উদ্দিন, যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) ঢাকা দক্ষিণ মফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডয়িার জেনারেল আলী আহমেদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মোহাম্মদ মাহাবুব-ই রাব্বানী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান রেজাউল আলম ফারুকী প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়কে বিশৃঙ্খলা ও জানজটের জন্য অবকাঠামোগত সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যাই বেশি দায়ী। পথচারীরা সচেতন নয়, চালকরা সচেতন নয় এবং সাধারণ মানুষ সচেতন নয় বলে রাস্তার জানজট দূর করা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে চায় না, ভিআইপি গাড়ির চালকরা সিগন্যাল মানতে চায় না, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলো উল্টোপথে চলে। এসব সমস্যা সবার আগে দূর উচিত বলে মনে করেন সেতুমন্ত্রী।

সরকার জানজট নিরসনে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রো রেলের কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, মহাসড়কগুলো চার লেন হচ্ছে, অসংখ্য ফ্লাইওভার তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে জানজট ব্যবস্থার পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। তবে মানুষ সচেতন না হলে মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, ফোরলেন যা কিছুই করা হোক না কেন, তা সুফল বয়ে আনবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় ওবায়দুল কাদের ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান, এরকম জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করার জন্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই গবেষণার ফলাফল সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের যানজট নিরসনের উপায় উদ্ভাবনে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, যানজট সমস্যা আমাদের দেশে একটি দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা সমস্যা। এই সমস্যা দীর্ঘ হতে হতে এখন এক অসহনীয় পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালে ঢাকায় গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। সেটা ২০১৮ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৬ কিলোমিটারে। এ অবস্থার আশু উত্তরণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ড. মো. সবুর খান। এজন্য ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।

ড. মো. সবুর খান তাঁর প্রবন্ধে যানজট নিরসনে বেশকিছু প্রস্তাব উল্লেখ করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, স্টিলের তৈরি বহুতলবিশিষ্ট গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, সিসি টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো শহরের রাস্তাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সিসি টিভিগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার আওতায় রাখা, রাস্তায় ইউলুপের ব্যবস্থা করা, উন্নত দেশের মতো র‌্যাপিড ট্রানজিট ব্যবস্থার প্রবর্তন করা, পুলিশ বক্সগুলোকে আধুনিকীকরণ করা, গুগল ম্যাপের সাহায্য নেওয়া ইত্যাদি।

ড্যাফোডিল চেয়ারম্যান আরো বলেন, তারা দেশের কোনো একটি জেলাকে মডেল জেলা হিসেবে গ্রহণ করতে চান এবং সেই জেলাকে যানজটমুক্ত করার মাধ্যমে একটি আদর্শ জেলায় পরিণত করতে চান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই কাজ করতে পারলে অন্যান্য জেলাও উদ্বুদ্ধ হবে। এজন্য তিনি জেলা প্রশাসকদের সহায়তা কামনা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো  সাধারণত থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে সেই সংস্কৃতি এখনো পাকাপোক্ত হয়নি। তবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভানিভার্সিটির এই গবেষণা উদ্যোগ দেখে তিনি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বলে জানান।  খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও এরকম বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কার্যকর গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশা করা যায়।

খন্দকার রাকিবুর রহমান আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হওয়া উচিত। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাডেমিক লিংকেজ তৈরি হলে অনেক জনসম্পৃক্ত সমস্যার সমাধান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মাধ্যমে করা সম্ভব।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার আলী আহমেদ খান, প্রতিদিন সড়কে শুধু ট্রাফিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অন্তত ১০-১২জন মানুষ মারা যাচ্ছে। যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে। কর্মজীবী মানুষের শত শত কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। কিন্তু সমস্যা পুরোপুরি এখনো দূর হয়নি। এজন্য আরও বৃহৎ পরিসরে গবেষণা ও পর্যালোচনা হওয়া দরকার। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বৃহৎ পরিসরে সেই গবেষণার কাজ শুরু করেছে বলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান।

দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রমেও গুরুত্বপর্ন ভুমকিা রেখে চলেছে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এ গবেষণার ফলাফল অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে। গবেষণা কার্যক্রম গবেষণাভিত্তিক সমাধানের একটা উপায় বের করে থাকে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের

উন্নয়নমূলক গবেষণা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে যা সরকার বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে এবং নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকান্ডে ও প্রকল্পে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে সহায়তা করবে। এধরনের গবেষণা কার্যক্রম ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা ক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তৈরীরর পাশাপাশি বাস্তব ভিত্তিক গবেষণার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও গবেষণায় মনোযোগী হতে এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটির গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে ঢাকা শহরের যানযট সমস্যা ও  এর সুষ্ঠব্যবস্থাপনার বিষয়টি। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বর্তমান সময়ে ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম যানজট। দ্রুত গতির নগরায়ন ও বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রবাহ ঢাকা শহরের যানযট ব্যবস্থাকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় নিয়ে গেছে, যা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এই যানজট সমস্যা নিয়ে একটি মানসম্মত গবেষণা করেছে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আশা করছে, এই গবেষণা ফলাফলের মাধ্যমে সারা দেশের যানজট সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পওয়া যাবে।

এ গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল্ইুনিভার্সিটির উদ্যোগে একটি অনলাইনভিত্তিক  ট্রাফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে http://traffic.daffodil.family/index.php যেখানে এ বিষয়ে আগ্রহী যে কেউ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যাদি সন্নিবেশিত করে কার্যকরী ভমিকা রাখতে পারবেন যা দেশের নীতি নির্ধাক, গবেষকদের জন্য সহায়ত হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে।

এই গবেষণার সঙ্গে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাদের মেধাবী গবেষকদের সংযুক্ত করেছে যাতে তারা একটি সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করেন এবং সেই পথটি সম্পর্কে পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ সক্ষম হয়।

Sharing is caring!

Leave a Comment