তুরস্কে আইএলটিএস ছাড়াই পড়ার সুযোগ

তুরস্কে আইএলটিএস ছাড়াই পড়ার সুযোগ

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক 

প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করে থাকে  তুরস্ক সরকার। এসব শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ থাকে তুরস্কের  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সুবিধার  মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার মান যেমন যুগোপযোগী হয়, তেমনি পাওয়া যায়  তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা। আর এবিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন তুরস্কের এস্কেশাহীর আনাদলু ইউনিভার্সিটির স্নাতক শির্ক্ষাথী ফরিদুর রেজা ।

আমি তুরস্ক সরকারের স্কলারশিপ পেয়েই দেশ ছেড়েছি ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম।  পরে তুরস্ক সরকারের স্কলারশিপ পেয়ে যাই।  স্কলারশিপে মাসিক ৬০০ লিরা পাই যা বাংলাদেশি টাকায় ১৮ হাজার। টিউশন ফি, হল সুবিধা, চিকিৎসা বীমাসহ তার্কিশ নাগরিকদের মত করেই সব সাধারন সুবিধা পাওয়া যায়।

তুরস্কের শিক্ষার মান এবং স্কলারশিপ :   

তুরস্কের শিক্ষার মান যথেষ্ট ভালো।  ইউরোপের দেশগুলোর দশম স্থানের মধ্যে।  তুরস্কে ৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিংয়ের প্রথম সারির মধ্যে। তুরস্ক সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে স্কলারশিপ দিয়ে তুরস্কে পড়ালেখা করার ব্যবস্থা করছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান।  সম্প্রতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এশিয়া ও ইউরোপ দুই মহাদেশজুড়ে অবস্থিত এ দেশটি।  এজন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক এমন শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে তুরস্ক। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরগুলোই বেশ উন্নত। তুরস্কে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে শ খানেক।  আর পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৭০ টির মতো। তুরস্ক সরকারের বৈদেশিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর ১৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী আসেন পৃথিবীর অর্ধশতাধিক দেশ থেকে।  এখানে বাংলাদেশ থেকে পড়তে আসাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে ৫০ হাজারের অধিক বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন তুরস্কে। প্রতি বছরই এর সংখ্যা বাড়ানো হয়। মার্চ পর্যন্ত চলে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া।

কখন কোথায় এবং কিভাবে আবেদন:

প্রতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে ওয়েবসাইটের (www.turkiyeburslari.gov.tr)  মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া চলে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের লিংকও থাকে সেখানে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করে আবার পড়ার বিষয়ও পছন্দ করা যায় আবেদনের সময়। আবেদন যাচাইয়ের পরে দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। আইএলটিএস না থাকলেও আবেদন করা যায়। সব নিয়মকানুন বিস্তারিত দেয়া থাকে এখানে। এ ছাড়া হেল্পলাইনও থাকে।  আবেদন করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে সহযোগিতা চাইলে পাওয়া যায়।  বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকেও অনেক সময় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

স্কলারশিপের ক্যাটাগরি :

অনার্স, মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি ক্যাটাগরিতে স্কলারশিপ দেওয়া হয়।

সময়কাল :

স্নাতক :  এক বছরের তুরস্ক ভাষার কোর্স + ৪, ৫ অথবা ৬ বছরের ব্যাচেলর কোর্স (বিশ্ববিদ্যালয়ে যত দিন)।  মাস্টার্স :  এক  বছরের তুরস্ক ভাষার কোর্স + দুই  বছরের মাস্টার্স কোর্স।  পিএইচডি :  এক  বছরের তুরস্ক ভাষার কোর্স +  চার বছরের পিএইচডি কোর্স।

আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র :

সব পরীক্ষার সার্টিফিকেট। সব পরীক্ষার মার্কশিট। পাসপোর্ট/ জন্মনিবন্ধনের ইংরেজিতে অনুবাদ করা কপি।  আইএলটিএস বা ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোনো সার্টিফিকেট যদি থাকে তার কপি।  এক্সট্রা কারিকুলামের সার্টিফিকেট যদি থাকে তবে তার কপি। দুটিটি রেফারেন্স লেটার।  এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপক হলে ভালো হয়।

বৃত্তির আওতায় সুযোগ-সুবিধা :

টিউশন ফিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ বহন করা হয়। একোমোডেশন তথা থাকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে।  আর খাবারের একটি বড় অংশ সরকার বহন করে বা ভর্তুকি দেয়।  প্রথমবার যাওয়া ও পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফেরার বিমান টিকেট। স্বাস্থ্যবিমা তথা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা।  মাসিক সম্মানি ভাতা অনার্সে প্রায় ২০ হাজার টাকা, মাস্টার্সে প্রায় ৩০ হাজার টাকা এবং পিএইচডিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা হারে প্রদান করা হয়।

আবেদন করতে মৌলিক কিছু শর্ত :

তুরস্কের নাগরিক হতে পারবে না।  আবেদন করার সময় তুরস্কের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়া যাবে না।  উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রিধারী হলেই অনার্স পর্যায়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন।  অনার্স পর্যায়ের জন্য আবেদন করতে হলে প্রার্থীর ২১ বছরের নিচে বয়স হতে হবে।  মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ৩০ বছরের নিচে হতে হবে। পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য ৩৫ বছরের নিচে হতে হবে।  যে পর্যায়ের জন্য আবেদন করবেন প্রার্থী তার বিগত অর্জনকৃত ডিগ্রিগুলোর মোট ৭৫% নাম্বার থাকতে হবে। আর প্রার্থীকে অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment