বিজ্ঞানে ‘ভয়’ কেন ?

বিজ্ঞানে ‘ভয়’ কেন ?

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

‘বিজ্ঞান’ বা ‘সাইন্স’ শব্দটি আমাদের তাড়িত করে। মানুষের সকল কর্মযজ্ঞ ও আবিষ্কার বিজ্ঞানের হাত ধরেই হয়েছে। এমন কোনো সৃষ্টি আছে যা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে। এই কথা অনুসন্ধান করতে গেলেও বিজ্ঞানের সাহায্য অনিবার্য। আর এ বিজ্ঞানে ভয়, শিক্ষার্থীদের জন্য অতি স্বাভাবিক। কেননা শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক বিজ্ঞান তেমন জানেন না। পাঠ্য বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে পড়ে বিজ্ঞানের উপর মস্ত ভয় জমেছে। বিজ্ঞানে ভয় কাটাতে কাজ করে যাচ্ছে ‘কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি সাইন্স ক্লাব’।

২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি সাইন্স ক্লাব’ নামক বিজ্ঞান পাগলদের কারখানা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি মুহূর্ত বিজ্ঞানের জ্ঞান বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে ক্লাবটি। বিজ্ঞান মনস্ক শিক্ষার্থীদের যেন নিঃশ্বাসের সাথে মিশে আছে সাইন্স ক্লাব। বিজ্ঞানকে কত ভালোবাসা যায় তা এদের দেখলে সহজেই বোঝা যায়। ক্লাসের সদস্যদের মতে সাধারণ বিজ্ঞান সকলের জানা উচিত। আর এ জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্কুলে স্কুলে, বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে সাইন্স ক্লাব পদক্ষেপ ফেলেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানকে জানতে চান ও ভালোবাসেন তারা সাইন্স ক্লাবের সদস্য হতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিমাসে সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেই বিজ্ঞান পাঠচক্রে মিলিত হন ক্লাবের সদস্যরা। এই মহাবিশ্ব, মহা জগত্, সৃষ্টি কতটুকুই বা আমরা জানি। জানা থাকলে চোখের বাইরের অনেক কিছুই বেশ সহজেই অনুধাবন করা যায়। বিজ্ঞানকে জানার কারণেই না দেশের তরুণরা কাজ করছে নাসার মত প্রতিষ্ঠানেও। শুধু দরকার স্রেফ জানা এবং জানতে চাওয়া। মনে আছে বলছিলাম বিজ্ঞানের ভয়ের কথা। এ ভয় কাটাতে তাদের রয়েছে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ কর্মসূচি। বিজ্ঞান জনপ্রিয় করতে সায়েন্স ক্লাবের সদস্যরা প্রতি মাসে যান কুমিল্লা বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের সামনে দেখান নানান পরীক্ষণ। যা তাত্ত্বিকভাবে জানে সবাই তবে পরীক্ষণেই ঘটে বুদ্ধিমত্তার উত্তরণ। খবর পেয়ে আমি এক দিন চললাম ক্লাবের সদস্যদের সাথে বিজ্ঞানের ভয় কাটাতে। তাদের পরীক্ষণ দেখে সত্যিই আমার ভয় কেটেছে। স্কুলে স্কুলে এ কর্মসূচিতে তারা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন ম্যাগাজিনও প্রদান করে থাকেন। সুমাইয়া হাসনাত সময়, তন্ময় কুমার সরকার, সঞ্জিপ মণ্ডল, সাবিকুন নাহার, সুবাহ ইয়াসমিন, ইসরাত জাহান, সোহান, ইমরুল, হামিদ কাওসার জীবনের মত অনেকেই কাজ করেন প্রতিটি জনপ্রিয়করণ কর্মসূচিতে।

ক্লাবের সদস্যদের উদ্ভাবনও কম নয়। যেমন, যানজট নিরসনের জন্য তৈরি করেছেন ‘মাইক্র ক্লোভার লিপ’ নামক একটি মাস্টারপ্লান। ফ্লাইওভার বা ওভারব্রিজ নির্মাণের তিনগুণ কম খরচে এটি তৈরি করা যাবে। একটি সেমি আন্ডার পাস ও সেমি ফ্লাইওভার সিস্টেম যানজট নিরসন করবে। যেখানে থাকবে ফুটপাত, ড্রেনেজসহ সকল কিছু। কোনো সংগঠনের আর্থিক মেরুদণ্ডই সংগঠনকে চালিয়ে নেয় বহুদূর। সে দিক থেকে এ সংগঠনটি পিছিয়ে রয়েছে। ক্লাবটির নেই বড়সর তহবিল। সদস্যদের পকেটের টাকায় কষ্ট ক্লেশে চলছে কার্যক্রম। টাকার অভাবে অনেক উদ্ভাবনই আটকে যায় শেষ পর্যন্ত।

‘বিজ্ঞান কোন ক্ষেত্রে লাগে না। মানুষের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডের প্রতিটি পদক্ষেপে বিজ্ঞান আছে। কিন্তু যেটা নেই সেটা হলো ‘জানা নেই’।’ বলছিলেন বাংলাদেশ সাইন্স সোসাইটির চট্টগ্রাম জোনের প্রধান ও ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর তাহরিমা তাহসিন লিমা। ক্লাবের সভাপতি জানান, বিজ্ঞান মনস্ক এক জাতি তৈরি করতে তারা কাজ করছেন। একদম প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত কাজ করছেন তারা। ক্লাবের মডারেটর ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের প্রভাষক হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শুধু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য নয় সাইন্স ক্লাব বিজ্ঞান মনস্ক সকল শিক্ষার্থীর জন্য। সাইন্স ক্লাবের সদস্যরা এক সময় আন্তর্জাতিক অলেম্পিয়াডে যোগ দিবে এটাই স্বপ্ন।’

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment