দুই সেরা দলের গল্প

দুই সেরা দলের গল্প

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

ভারতের হরিয়ানার ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে ‘বিশ্ব মিল’ নামের আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হয়ে গেল। ১৪ থেকে ১৬ অক্টোবরের এই আসরে ৫৮টি দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বুয়েট, রানার-আপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


মায়ের গল্পই সেরা নাটক

মঞ্চনাটক বিভাগে সেরা হয়েছে ‘বুয়েট ড্রামা ক্লাব’। তাদের নাটকটি নারীকেন্দ্রিক। ওরিয়ানা ফাল্লাচির বিখ্যাত ‘হাত বাড়িয়ে দাও’ বইয়ের নাট্যরূপ দিয়েছেন তাঁরা। ইংরেজিতে অভিনীত এই নাটকের পাত্রপাত্রী ছিলেন—আনিকা অনিন্দিতা আলমগীর, নুসরাত জাহান, ফাহিম ফয়সাল খান, সোমা রায়, ইশতিয়াক হোসেন, তানজিব আহমেদ, প্রেমকুমার ঘোষ, আদিব ইবনে আলম, রাফসানজানি, পার্থসারথি সরকার, দিব্যাঙ্গনা কর, মাসুদ জাবেদ, অভিষেক মুহুরি, অরণ্য অনুপম, মাসিরুল আফরোজ ও সাইয়্যেদুল কিবরিয়া। তাঁরা সবাই বুয়েট ড্রামা ক্লাবের সদস্য। মা চরিত্রে ছিলেন অনিন্দিতা ও নুসরাত। তাঁরা একই নারীর আলাদা আলাদা রূপ—কখনো মা, কখনো কুমারী হয়েছেন। অন্যরা ছিলেন নানা চরিত্রে। নাটকটি শেষ হওয়ার পর বিচারকরা মঞ্চে ডেকে তাঁদের প্রশংসা করেছেন। দর্শকরাও নাটকটি উপভোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন মা চরিত্রের অভিনেত্রী অনিন্দিতা।

মূর্ছনার জাদু

মূল পারফরম্যান্সের আগের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত টানা রিহার্সাল করেছেন তাঁরা। তাঁরা সাতজনই বুয়েটের মূর্ছনার সদস্য—অরণ্য অনুপম, চয়ন চক্রবর্তী, মির্জা তানজীব শরীফ, সৌমিত্র শুভ্র, দীপ্ত প্রীতমনাথ ও নুসরাত জাহান। তাঁদের পারফরম্যান্সের দিন একে একে গাইলেন—মেঘ দলের অনির্বাণ, হাসানের যারে যা উড়ে যা, চলো না ঘুরে আসি। দর্শকরাও তাদের সঙ্গে গেয়েছেন। এমনকি বিচারকরাও মোবাইলে তাঁদের গান ভিডিও করেছেন। আর এসবের ফলই হলো আনপ্লাগড বিভাগে সেরা বাংলাদেশের ‘মূর্ছনা’।

তানজীবই সেরা

অডিশনেই যাঁরা তাঁর গান শুনেছেন, তাঁরা বলেছেন—চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই গেয়েছ তুমি। তাঁর বিষয় ছিল ‘ইন্ডিয়ান সলো’। সেখানে ভারতের নানা ভাষার গান ছিল। বাংলা গানের গায়ক হলেও মীর্জা তানজীব শরীফের মনে হয়েছে, ওদের ভাষায় গাইলে দর্শক-বিচারকদের বুঝতে সুবিধা হবে। ফলে শুরু করলেন মান্না দের বিখ্যাত ‘লাগা চুনারি ম্যায় দাগ’ দিয়ে। গানের শেষদিকে খেয়াল করলেন, মার্কস দেওয়া বাদ দিয়ে বিচারকরাও গানের তালে তালে হাততালি দিচ্ছেন। দর্শকরাও গানটি গাইছেন। আর গানের পালা শেষে তাঁরা বলেছেন, ‘তোমার গান খুব উপভোগ করেছি।’ স্টেজে ওঠার পর বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই ছাত্রকে সবাই একে একে জড়িয়ে ধরেছেন। ইন্ডিয়ান সলো মিউজিকে প্রথম হওয়া তানজীব তাঁর এই সাফল্যের জন্য তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভানসহ অন্যান্য মিউজিশিয়ানের সহযোগিতার কথা জানাতে ভোলেননি। তিনি এ-ও স্বীকার করলেন, ‘ভিসা থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক সব কাজে আমাদের নাটক ক্লাবের ফাহিম ফয়সাল, তানজিম ভাই আর নাশিয়াত ফাইজা আপু অনেক সাহায্য করেছেন।’

বিভেদ মুছে যাক

হঠাত্ করেই চেইন পড়ে গেল। রিকশা থামিয়ে চেইনটি তুলে নিলেন তরুণ চালক। পরে এক যাত্রী উঠলেন। তার সিটটি নিজের হাতে মুছে দিয়ে চালানো শুরু করলেন রিকশাচালক। নামার সময় পেছন দিকে তাকিয়ে তো যাত্রীর মেজাজ ভীষণ খারাপ—তার সাদা পাঞ্জাবির পেছনটায় কালো দাগ লেগে গেছে। রেগে রিকশাওলাকে মারধরই করল সে। চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে আছেন রিকশাচালক। আর হেঁটে যাওয়া আরোহীর গায়ে কাদা ছিটকে দিল একটি গাড়ি। তাঁর সেই ময়লা গামছা দিয়ে মুছে দিলেন রিকশাচালক। মানুষে মানুষে বিভেদ ও সেটি মুছে দেওয়ার এই গল্পই স্বল্পদৈর্ঘ্য শাখায় সেরা হয়েছে। ১০ হাজার রুপি পুরস্কার পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাইফুল্লাহ মাহফুজ। ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে পেছনে ফেলা ‘ইনভিজিবল লাইন’ নামের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের।

সর্বরোগের মহাচিকিৎসক

‘মাইম’ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘সর্বরোগের মহাচিকিৎসক’। এর গল্পটি হলো—এক হাতুড়ে ডাক্তারের নানা বিষয়ে ডিগ্রি আছে। সেগুলো আবার বিরাট করে লেখা আছে সাইনবোর্ডে। নিজেকে সে সর্বরোগের মহাচিকিৎসক বলে দাবি করে। একদিন তাঁর চেম্বারে এলো—পাগল, মৃগী ও পেটের অসুখের রোগী। পাগলের চিকিৎসা করতে গিয়ে তার বিতিকিচ্ছি অবস্থা। দুই সহকারীর কেউই ভয়ে পাগল ধরবে না। তাতে ডাক্তার রেগে একজনকে চড় মারতে গিয়ে সেটি পড়ে পাগলের গালে। পাগলামো আরো বেড়ে যায়। সে ডাক্তারকে কানে ধরে উঠবোস করায়। মৃগীরোগীর হৃৎপিণ্ডটাই খুলে সেটি ছোট করে কেটে আবার জোড়া লাগায়। ততক্ষণে রোগী মৃত। অনেক দিন ধরে ভুয়া ডাক্তারকে খুঁজে বেরিয়ে অবশেষে পেয়ে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। ‘সর্বরোগের মহাচিকিৎসক’ নামের এই মূকাভিনয়ের চিত্রনাট্যটি বছর তিনেক আগে লিখেছিলেন মীর লোকমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্মতত্ত্ব ও সংস্কৃতি বিভাগে মাস্টার্সে পড়েন। তিনি তাঁর এই নাটকের মাধ্যমে বলেছেন, একজন মানুষের সব কিছু পারার কোনো উপায় নেই, সেই চেষ্টাও করতে নেই। তাতে সমাজ ও তার নিজের অনেক ক্ষতি হয়। ১৫ অক্টোবর জিন্দাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ মিনিটের এই মূকাভিনয়ের দলগত পারফরম্যান্স করেন তাঁরা। দুই বিচারক সেই পারফরম্যান্স দেখে বলেছিলেন, ‘তোমরা অনুশীলন করে এসেছ। মাইমের ইলিউশনগুলোও ভালোভাবে তুলে ধরেছ।’ মাইম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দলে ছিলেন—খায়রুল বাশার, শাহরিয়ার শাওন, ফরিদ উদ্দীন, কামরুন্নাহার, মৌসুমী মৌ, রায়হান বাশার ভুঁইয়া, সানোয়ারুল হক, সাইফুল্লাহ সাদেক ও মীর লোকমান। আবহসংগীত করেছেন জুম্মন সাদিক। কারিগরি সহযোগিতায় ছিলেন সাইফুল্লাহ মাহফুজ, ইসরাত জাহান ও জেরিন মারজান। এর বাইরে জুম্মন একক গান ও মনোলগে রানার-আপ হয়েছেন। লোকমান রানার-আপ হয়েছেন ওয়েস্টার্ন ডান্সে।

তাৎক্ষণিক সেরা অতসী

মনোলগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন নাট্যকলার চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী অতসী আমিন। তিনি বললেন, ‘প্রতিযোগিতার ধরনটি সম্পর্কেই আমার পরিষ্কার ধারণা ছিল না। কেউ বলছিলেন মনো-অ্যাকটিং, কেউ মনোলগ। মনোলগ হলো সংলাপনির্ভর একক অভিনয়।’ তাৎক্ষণিকভাবে অংশ নিয়ে তিনি এখানে সেরা হয়েছেন। নাটকে সিরিয়ার উদ্বাস্তু সমস্যার ওপর নির্ভর করে তাঁর অভিনয় পরিবেশন করেছেন।

মডারেটর ঢাবির উপাচার্য যা বললেন

বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দলের মডারেটর ফাদার তপন ডি রোজারিও বললেন, ‘আমরা সেখানে একটি মাইমোড্রামা করতে গিয়েছিলাম। তবে উপস্থিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নানা বিভাগে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ও রানার-আপ হয়ে ছেলেমেয়েরা তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বললেন, ‘টাকার অভাবে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে পারি না। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আরো আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হবে।’

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment