প্রশ্ন করো, পুরস্কার নাও

প্রশ্ন করো, পুরস্কার নাও

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

বুদ্ধিদীপ্ত ও মজার মজার প্রশ্ন করছেন শিক্ষার্থীরা আর জিতে নিচ্ছেন পুরস্কার। সেই পুরস্কারের নগদ অর্থ আবার তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন স্বনামধন্য নারী উদ্যোক্তা, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনার্সের চেয়ারম্যান এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান! এমনও হয় নাকি? হ্যাঁ, এমনই এক অভুতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মিলনায়তনে।

সেদিন ছিল শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি)। রোকেয়া আফজাল রহমান এসেছেন রাজধানীর সোবহানবাগে অবস্থিত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার (আইআইসি) আয়োজিত লোকবক্তৃতা সিরিজের ৭ম অনুষ্ঠানে একক বক্তৃতা দিতে। কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তন। সেই অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ এই অনুষ্ঠানে যে শিক্ষার্থী রোকেয়া আফজাল রহমানের কাছে সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করতে পারবে তাকে দেওয়া হবে ৩ হাজার টাকার নগদ অর্থ পুরস্কার। দ্বিতীয় সেরা প্রশ্নকারীকে দেওয়া হবে ২ হাজার টাকা পুরস্কার এবং তৃতীয় সেরাকে দেওয়া হবে ১ হাজার টাকা পুরস্কার। শুধু তাই নয়, রোকেয়া আফজাল রহমানের বক্তৃতা শুনে নিজের চিন্তার জগতে কী পরিবর্তন এলো তা প্রতিবেদন আকারে লিখে জমা দিতে হবে আইআইসি দপ্তরে। পরে আইআইসি সেখান থেকে সেরা প্রতিবেদনদাতাকে দেবে সনদপত্র।’

প্রশ্ন করছেন এক কৌতুহলী শিক্ষার্থী।
প্রশ্ন করছেন এক কৌতুহলী শিক্ষার্থী।

এই পুরস্কার ব্যবস্থা আগামী বক্তৃতা অনুষ্ঠানেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।এরপর মো. সবুর খান মঞ্চে আহ্বান জানান রোকেয়া আফজাল রহমানকে শিক্ষার্থীদের সামনে তাঁর সফল হয়ে ওঠার গল্প শোনানোর জন্য।

রোকেয়া আফজাল রহমান তাঁর জীবনের নানা বাঁক বদলের গল্প শোনান শিক্ষার্থীদের। তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৬২ সালে তৎকালীন মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে। তারপর একটা পর্যায়ে গিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন শুধু সন্তান মানুষ করবেন বলে। তাঁর ভাষায়, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আমি সবচেয়ে বড় যে উপহার পেয়েছি সেটা মাতৃত্ব। সেই উপহারের সঠিক ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করি। জীবনের আর সব ক্ষেত্রে যতই সফল হইনা কেন, মা হিসেবে সফল হতে না পারলে নারী জীবনের কোনো স্বার্থকতা নেই।’

এই দর্শনের সঙ্গে আর একটি যুক্তি দাঁড় করান রোকেয়া আফজাল রহমান-‘নিজে ব্যবসা করলে নিজের সময়ের ওপর নিজের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। চাকরি করলে সেটা থাকে না। চাকরি করতে হয় প্রতিষ্ঠানের সময় ও নিয়ম মেনে। অতএব আমার চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়া উচিত।’

যথা ভাবনা তথা বাস্তবায়ন। ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে মুন্সিগঞ্চে গড়ে তোলেন ‘আর আর কোল্ড স্টোরেজ’। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রোকেয়া আফজাল রহমানকে। এর পরের গল্প শুধুই এগিয়ে চলার।

গল্প শেষে সেই কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নত্তোর পর্ব। শিক্ষার্থীদের কৌতুহলের শেষ নেই। নানা জনের নানা প্রশ্ন। কেউ জানতে চান, আমি উদ্যোক্তা হতে চাই কিন্তু মা-বাবা চান বিসিএস ক্যাডার হই। আমি এখন কি করব? কেউ জানতে চান, সফল হওয়ার গোপন রহস্য কি?

সবার কৌতুহলের জবাব দেন রোকেয়া আফজাল রহমান। অতঃপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। চেয়রম্যান মো. সবুর খান নিজে মাইক্রোফোন হাতে তুলে নেন। বলেন, ‘আজকে অনেকেই মজার মজার প্রশ্ন করেছে। তাই তিনজন নয, মোট ছয় জনকে পুরস্কৃত করা হবে। ছয় জনের প্রত্যেকে পাবে ১ হাজার টাকা।’

এরপর তিনি পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করেন-রফিকুল, পাপিয়া, আকাশ, শিমুল… এবং একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় বিশেষ পুরষ্কার। তাঁর নাম তানজুমুল ইসলাম। তিনি এন্ট্রাপ্রেনার্স বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে নগদ অর্থের খাম তুলে দেন রোকেয়া আফজাল রহমান। আর এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় লোকবক্তৃতার আয়োজন।

বলে রাখা ভালো, ‘ডিআইইউ ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া লেকচার সিরিজ’ শিরোনামে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নিয়মিত লোকবক্তৃতার আয়োজন করে আসছে। এ পর্যন্ত এই সিরিজে এসে বক্তব্য দিয়েছেন পিএইচপি ফ্যালিমির চেয়ারম্যান আলহাজ সুফি মিজানুর, অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, বিআরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান, এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান এম. আনিস উদ দৌলা, হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান একে আজাদ এবং অ্যাডকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী।

আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন, মোট ১২ জন সফল উদ্যোক্তার বক্তৃতা নিয়ে পরবর্তী সময়ে একটি বই প্রকাশ করবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে, বইটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ব্যবসা, অর্থনীতি ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই ১২ জন উদ্যোক্তার ওপর ডিআইইউ থেকে ১২টি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment