ফরমালীন পরীক্ষাকারী কাগজ উদ্ভাবন

ফরমালীন পরীক্ষাকারী কাগজ উদ্ভাবন

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

খাবারে ফরমালিনের উপস্থিতি এখন ভোক্তারা নিজেরাই পরীক্ষা করতে পারবেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তিন গবেষকের উদ্ভাবন করা লিটমাস কাগজের মত একটি কাগজের স্ট্রিপ দিয়ে এখন থেকে সহজেই বোঝা যাবে খাবারে ফরমালিন রয়েছে কিনা।

ফরমালিন রয়েছে এমন পানীয়ের এক ফোটা এই কাগজের ওপর দিলেই বিষয়টি ধরা পড়বে। আর ফল, শাকসবজি বা শক্ত খাবার ধোয়া পানি ব্যবহার করে ফরমালিনের উপস্থিতি বোঝা যাবে।

ফরমালিন সনাক্তের কাজটি খুব অল্প খরচে করা যাবে। বিশেষ এই কাগজের প্রতিটি স্ট্রিপের দাম পড়বে মাত্র এক টাকা।

রাসায়নিক পদার্থ মেশানো কাগজটির ওপর কিছু বৃত্ত আঁকানো থাকবে। ফরমালিনের সংস্পর্শে আসলেই এই বৃত্তগুলো বেগুনী রঙ ধারণ করবে। বৃত্তগুলোর রঙ যত গাঢ় হবে বুঝতে হবে তত উচ্চ মাত্রায় ফরমালিন রয়েছে। এই পদ্ধতিতে মাত্র কয়েক পিপিএম এক হাজার পিপিএম পর্যন্ত ফরমালিনের মাত্রা সনাক্ত করা যায়।

কিছু খাবারে প্রাকৃতিকভাবেই স্বল্প মাত্রায় ফরমালিন থাকে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে খাবার সংরক্ষণের জন্য এর ব্যবহার বেআইনি। আশার কথা হচ্ছে, নতুন এই আবিষ্কারটি ফরমালিনের অসাধু ব্যবহারে লাগাম টানতে সহায়ক হতে পারে।

formalinফরমালিন সনাক্ত করার এই স্ট্রিপ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিদুস সামাদ খান। এই গবেষণায় তাকে সহায়তা করেছেন বুয়েটের এক শিক্ষার্থীসহ দুই জন। মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণা ও ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট ডক্টোরাল করার সময়ও তিনি বায়ো-অ্যাকটিভ পেপার নিয়ে দুটি শীর্ষস্থানীয় গবেষক দলের সঙ্গে কাজ করেছেন।

পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টোরাল প্রোজেক্টের অংশ হিসেবে সামাদ খান তখন এমন কিছু ডায়াগনস্টিক পেপার তৈরি করেন যা দিয়ে রক্তের গ্রুপ, এনজাইম ও ভাইরাস সনাক্ত করা যায়।

রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের তার গবেষণাটি এমআইটি টেকনোলজি রিভিউতে প্রকাশিত হয়েছে। স্বীকৃতি হিসেবে দেশে বিদেশে বেশ কিছু পুরস্কার ও গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দও পেয়েছেন তিনি।

বুয়েটের এই শিক্ষক জানান তিনি ও তার দল যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন ও ইউরোপে আবিষ্কারের পেটেন্ট পেয়েছেন।

২০১৩ সালে দেশে ফিরে আসেন সামাদ খান। সে সময় খাবারে ফরমালিন নিয়ে দেশে ব্যাপক হৈচৈ চলছিল। তখনই বিষয়টি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরের বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফোরাম ও কমিটি ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ থেকে পাওয়া অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। গবেষণায় মো নাজিবুল ইসলাম ও মেহনাজ মুরসালাত সামাদ খানকে সহায়তা করেন। এই দুজনও এর সহ উদ্ভাবক।

ফরমালিন সনাক্তের এই পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনাতে বেশ কিছু কোম্পানি ও উদ্যোক্তা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে এখন তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

সামাদ খান বলেন, “ফরমালিন সনাক্ত করার কাগজ উদ্ভাবন আমার পেশাগত দায়িত্ব ছিলো। সহজে ব্যবহার করা যায় ও স্বল্প খরচের পদ্ধতি উদ্ভাবনে আমার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চেয়েছি আমি।”

এক্ষেত্রে লক্ষ্য ছিলো এমন কিছু তৈরি করা যা দেশেই উৎপাদন করা যায় ও দেশের মানুষয় প্রায় নিখুঁতভাবে ব্যবহার করতে পারে, যোগ করেন তিনি।

সূত্র: দ্য ডেইলি স্টারfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment