ঢাকার নোংরা সরাবে অ্যাপস

ঢাকার নোংরা সরাবে অ্যাপস

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

ঢাকার আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য একটি অ্যাপস বানিয়েছেন তাঁরা। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির তাসফিকুল গনি, রাসিক নাহিয়ান ও আবু সুফিয়ানের এই অ্যাপস একটি প্রতিযোগিতায় সেরাও হয়েছে।


এক রাতের ঘটনা—তখন তাসফিকুল ফেসবুকিং করছিলেন। হঠাৎ দেখলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ অ্যাপস বানানোর প্রতিযোগিতা করছে। রেজিস্ট্রেশনও চলছে। নিয়ম-কানুন দেখে খবরটি পরদিন দলের অন্য দুই সদস্যকে জানালেন। তাসফিকুল গনি পড়েন দশম সেমিস্টারে, রাসিক নাহিয়ান ১১ সেমিস্টারে আর আবু সুফিয়ান পঞ্চম সেমিস্টারে পড়েন। তিনজনই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই ফাতিন হাসনাত চৌধুরীর মাধ্যমে তাঁদের পরস্পরের মধ্যে পরিচয়। তাঁর দল ‘টিম স্পার্ক’-এ কাজ করেছেন তাঁরা। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। দলের নাম রাখলেন ‘ক্লিন মাই ঢাকা’। এরপর উন্মুক্ত পরিকল্পনা বা ‘ওপেন আইডিয়া’ বিভাগে অ্যাপসের আইডিয়াসহ নাম জমা দিলেন।

প্রতিযোগিতায় শ পাঁচেক পরিকল্পনা জমা পড়েছিল। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর ৩৯টি দলকে নির্বাচন করা হলো। সেগুলোর একটি ‘ক্লিন মাই ঢাকা’। কী ছিল আপনাদের পরিকল্পনায়—এই প্রশ্নের জবাবে দলনেতা তাসফিক বললেন, ‘আমরা নতুন পরিকল্পনা জমা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কী হবে সেটি প্রথমে ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে মনে হলো, মানুষ যদি খেলার ছলে শহরের যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা আবর্জনাগুলো পরিষ্কার করে, তাহলে কেমন হয়? এই পরিকল্পনা নিয়েই আমাদের অ্যাপস।’ পরে তাঁদের জানানো হলো, আইডিয়াকে অ্যাপসে রূপ দেওয়ার জন্য ১৯ মে ফাইনাল হবে, তাঁরা কাজ ভাগাভাগি করে নিলেন। দলনেতা তাসফিক অ্যানড্রয়েড ডেভেলপমেন্ট, রাসিক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট আর সুফিয়ান গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত হলো। এই নিয়ে বলতে গিয়ে রাসিক জানালেন, ‘আসলে আমরা ভালো কিছু করতে চেয়েছিলাম, সে জন্যই সবাই মিলে পরিশ্রম করেছি। ’ সুফিয়ান বললেন, ‘একটানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে আমাদের আইডিয়াকে অ্যাপসে নিয়ে এসেছি। রাতভর আড্ডা দিয়েছি, কাজ করেছি। ’ অ্যাপস নিয়ে তাসফিক বললেন, ‘এটি আসলে গেমভিত্তিক অ্যাপস। কোনো এলাকায় ময়লা দেখলে অ্যাপসে সেটির ছবি তুলে ব্যবহারকারীরা আপলোড করবেন। এভাবে জমা হওয়া ছবিগুলো নিয়ে অ্যাপস নিজে থেকেই একটি তালিকা তৈরি করে ফেলতে পারবে। এলাকাভিত্তিক এই তালিকা থেকে অ্যাপস ব্যবহারকারীরা তাঁদের এলাকা কতটুকু নোংরা হয়ে আছে, সেটি জানতে পারবেন ও আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেবেন। এভাবে কোন এলাকা আগে পরিষ্কার করা যায়, সেই প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। সবচেয়ে নোংরা এলাকা চিহ্নিত করার মাধ্যমে দ্রুত ঢাকার ময়লাও পরিষ্কার করা যাবে। ’

ফাইনাল হয়েছিল ড্যাফোডিলের ধানমণ্ডির ক্যাম্পাসে। প্রথম দিন পোস্টার প্রদর্শনী, এরপর অ্যাপস প্রেজেন্টেশন। পরদিন ২০ মে চূড়ান্ত আসরে ছিল ফাইনাল প্রেজেন্টেশন। সেখানে ওপেন আইডিয়া বিভাগে মাত্র পাঁচটি দল টিকেছিল। তাতে ‘ক্লিন মাই ঢাকা’ও ছিল। সেদিন দুপুরে তাঁরা জানলেন, ‘ওপেন আইডিয়া’য় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। দলনেতা তাসফিক বললেন, ‘প্রতিযোগিতার সময়ই মেন্টররা আমাদের কাজ নিয়ে খুশি ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেনও। সারা রাত কাজ করে পরদিন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ আসলেই আলাদা। আমাদের এই জয় নর্থ সাউথের সব ছাত্র-ছাত্রীর। কারণ আমরা এমন এক সময় জিতেছি, যখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করছে।’ এখন তাঁরা অ্যাপসটিকে আরো উন্নত করছেন। তাসফিক বললেন, ‘মেন্টরদের কাছ থেকে আমরা অনেক পরামর্শ পেয়েছি। সেগুলো অ্যাপসে নতুন করে যুক্ত করে আগামী মাসে গুগল প্লে স্টোরসহ বিভিন্ন জায়গায় অ্যাপসটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এরপর এই অ্যাপস ঢাকার ময়লা পরিষ্কার শুরু করবে।’

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment