যেভাবে ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠি

যেভাবে ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠি

  • নাসিরুল হক

আমি কীভাবে ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠলাম সেই গল্প একটু পরে শোনাই। তার আগে নিজের পরিচয়টা দিয়ে নেই।

আমার জন্ম ঢাকাতে। তবে দাদাবাড়ি রাজশাহীর জামিরা গ্রামে।বাবা ছিলেন ফরেস্ট অফিসার। চাকরি করতেন খুলনা ফরেস্টে। মুক্তিযুদ্ধর কিছু পরপর বাবা চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। সেটা আমার জন্মের আগের কথা।

বাবা ঢাকায় এসে ছোট এটা স্পঞ্জের কারখানা দেন। কিন্তু ওই কারখানা ভালো মত না চলায় আবার চলে যান রাজশাহীতে।

বাবার কথা থাক, এবার নিজের কথা বলি। আমার পড়াশোনা রাজশাহী কলেজে।  বিকম পাস করে আমি আইসিএমএ- তে ভর্তি হই। কিন্তু শেষ করার আগেই বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমরা আবার ফিরে আসি ঢাকায়।

২০০০ সাল। বাবা যা কিছু অর্থকড়ি জমিয়েছিলেন তার প্রায় সবই খরচ হয়ে গেল চিকিৎসার পেছনে।বাধ্য হয়ে আমি রাস্তায় নামলাম চাকরির খোঁজে। এ সময় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আইটি কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু শেষ করতে পারিনি।এটা ছিল জাভা প্রোগ্রাম কোর্স (course curriculum Basic IT training with programming curriculum with java, MS SQL, Visual basic –  IBM-ACE- BRAC BT) । কোর্সটা ব্র্যাকের পক্ষ থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।

যাইহোক, তারপর আমি প্রায় পনেরটা প্রতিষ্ঠানে আইটি আর মার্কেটিংয়ে কাজ করেছি। কিন্তু কনোটাই সফলতা এনে দেয়নি।

ভাবলাম, ব্যবসায় নামা যাক।আমার পরিবারের অনেকে ব্যবসায় অনেক ভালো করেছে। কিন্তু ব্যবসায় করতে দরকার অনেক টাকা। এত টাকা আমাকে দিতে কেউ রাজি নয়।

একদিন অফিস থেকে আসার পর ইন্টারনেটে ‘ফ্রিল্যান্সার ডটকম’সাইটটা দেখি। আগেও সার্ভিস ইঞ্জিনের ফারুক ভাইকে দেখতাম এখানে কাজ খুঁজছেন। আমি বেসিক এইচটিএমএল, সিএসএস জানতাম।

শুরু করে দিলাম কাজ খোঁজা। একদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটা ক্লায়েন্ট পেয়ে যাই। আমাকে জানায়  প্রতি মাসে ২০০ ডলার দিবে।তার ইমেইল, আর ওয়েবসাইটের ওয়েব মাস্টারিংয়ের জন্য।

নাসিরুল হক পেয়েছেন বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়াড।
নাসিরুল হক পেয়েছেন বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়াড।

২০০৮ সালের কথা। আমি তখন সর্বসাকুল্যে ১৫০০০ টাকা বেতন পাই। আমি কাজটা নিয়ে নেই আর চাকরি ছেড়ে দেই।

কাজটি ছিল ভার্চুয়াল অ্যাসেস্টিং জব। ভদ্রলোকের নাম আমির খান। তিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান। রিয়েল স্টেট বিজনেস করেন। আমির স্যারের কাজ করতে করতে আমি ফ্রিল্যান্সার ডটকমে ছোট ছোট কাজ করতে শুরু করি। একটা সময় পর আমি অনেক কাজ পেতে থাকি। ২০১০ থেকে আর কাজের জন্য চিন্তা করতে হয়নি।

ওই একই বছর আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং ম্যানেজমেন্টে এমবিএ শেষ করি। পাশাপাশি চলতে থাকে ফ্রিল্যাসিংয়ের কাজ।

আমি বেছে নিলাম প্রধান প্ল্যাটফর্ম জুমলা আর ওয়ার্ডপ্রেসকে। দেখলাম, অনেক বেশি কাজ পাওয়া যায় এসব সাইটে। এভাবেই শুরু। সব মিলিয়ে আড়াইশোর বেশি ওয়েব ডিজাইন করেছি আর প্রজেক্ট করেছি পাঁচ শতাধিক।আমি আরও কিছু কাজ করি যেগুলো ততটা জনপ্রিয় না। যেমন এলামুড নামে একটা সফটওয়ারে আমি অ্যাপ্লাই সাল রিপোর্ট তৈরি করি। কিছু একাডেমিক রিসার্চ পেপার নিয়ে কাজ করেছি। তবে সব সময় ওয়েবসাইট ডিজাইনকে অগ্রাধিকারে রেখেছি কারণ এখান থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হয়।

প্রতি মাসে আমি নির্দিষ্ট কিছু কাজ করি যা থেকে মোটামুটি ১২০০ থেকে ১৫০০ ডলার ( ১০০০০০ – ১২৫০০০ টাকা) আয় হয়। মাঝে মাঝে কিছু প্রজেক্টে বাড়তি আয় হয় যা দিয়ে আমার অফিস চলে। আমার অফিসটা ছোটভাবে শুরু করেছি। অফিসে দুইজন কর্মী অনিয়মিতভাবে আমার সঙ্গে কাজ করছে। কিছু খুব সাধারণ মানের কাজ করেছি। এসএও, ছোট কিছু লোকাল ওয়েবসাইট। ছোট পরিসরে হলেও প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। ইচ্ছা আছে, সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করবো একটা টিম নিয়ে।

বর্তমানের আমার ক্লায়েন্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহক বেশি। এছাড়া কানাডা, যুক্তরাজ্য, আর্জেন্টিনা ও পেরুর কিছু  গ্রাহক আছে।

যারা নতুন এই পেশায় আসতে চান তাদেরকে বলব, আপনি কী করতে চান সেটা আগে ঠিক করুন। তারপর সেই কাজে আপনি দেশে কী মূল্য পাচ্ছেন সেটা ভালমতো যাচাই করুন।কখনোই ভাববেন না, অনলাইনে যারা ফ্রিল্যান্সিং করছে তারা কিছু জানে না কিন্তু অনেক অনেক ডলার ইনকাম করে। তারা অবশ্যই কোনো না কোনো বিষয়ে দক্ষতা নিয়েই তাদের ক্যারিয়ার শুরু করেছে।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment