নতুন চাকরি ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুত তো ?

নতুন চাকরি ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুত তো ?

রবিউল কমল : একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু চাকরির খোঁজ পাচ্ছেন না ? ইন্টারভিউ দিতে দিতে হয়রান ? শেষমেষ হতাশ হয়ে ভাবছেন, আমাকে দিয়ে হবে না! আমার চাচা-মামার জোর নেই।

হতাশ হলে চলবে না, ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রশ্নকর্তা কী চান তা আগে জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী তৈরি হয়ে নিজেকে বুদ্ধিমত্তার সাথে ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে মেলে ধরতে হবে। তাহলেই পেয়ে যাবেন সোনার হরিণের খোঁজ। একজন ক্রেতা যেমন দোকানে গিয়ে তার পছন্দসই জিনিস খোঁজেন, তেমনি একজন নিয়োগকর্তা নিয়োগ বোর্ডে বসে তার প্রতিষ্ঠানের জন্য উত্তম ব্যক্তিটিকে খুঁজতে থাকেন। ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে উইন-উইন অবস্থায় যেমন ক্রয় বিক্রয় হয় তেমনি নিয়োগকর্তাও চাকরি প্রার্থীর মধ্যে উইন-উইন অবস্থায় একজন চাকরি প্রার্থী তার পছন্দের প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে পারেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির দরখাস্ত করলেন আর রোজ কেবল ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়ালেন, তাহলে হবে না।


Technical Job Interviewইন্টারভিউ দেওয়ার আগে আপনাকে জানতে হবে:

  • আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন।
  • কি তার ব্যবসা বা কার্যক্রম।
  • কি তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা, আপনি যে পদে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন তার কাজ কি ?
  • পদ মর্যাদা কি ?
  • কোন স্থানে কাজ করতে হবে বিভাগ না জেলা শহরে ?
  • আপনাকে কি কি দায়িত্ব পালন করতে হবে ?
  • এই পদে ভবিষ্যতে পদোন্নতির সম্ভাবনা কতটুকু ?
  • কতখানি কাজের চাপ নিতে হবে ইত্যাদি।

যদি ঐ প্রতিষ্ঠানে পূর্ব পরিচিত কেউ থাকে তাহলে আপনি তার কাছ থেকে এসব বিষয় আগে থেকেই জেনে নিতে পারেন। ঐ পদে কাজ করার জন্য আপনি যে যোগ্য তা বুঝানোর জন্য আপনার যোগ্যতাগুলো কি কি তা আগে থেকে ঠিক করে রাখুন যেন ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনি তা নিয়োগকর্তার নিকট তুলে ধরতে পারেন।

এর আগে আপনাকেও নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে। আপনার অভিজ্ঞতা, শারীরিক সুস্থতা, মানসিক সুস্থতা, সাধারণ জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, আপনার বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির চেষ্টা করতে হবে। নিয়োগকর্তা খুঁজছে কম্পিউটারে স্নাতক আর আপনি ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতক তবে ঐ চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়ে আপনার শুধুমাত্র সময় নষ্ট হবে। ইন্টারভিউয়ের আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি আপনার কাজ সম্পর্কে জানুন ভালভাবে, আপনি যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তার খুঁটিনাটি ও বেসিক বিষয়ে একটু ঝালাই করে নিন, অনেক সময় নিয়োগকর্তারা বিষয়ভিত্তিক অনেক প্রশ্ন করে থাকেন। ইন্টারভিউয়ের পোশাক পরিচ্ছদ সুন্দর হওয়া প্রয়োজন। এজন্য আগে থেকেই সুন্দর ও মার্জিত পোশাকের ব্যবস্থা করে রাখুন যাতে ইন্টারভিউয়ের দিন সমস্যায় পড়তে না হয়।

ইন্টারভিউয়ের ঢোকার পূর্বে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখুন বা সাইলেন্ট করতে পারেন। আপনি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন আর এসময় আপনার মোবাইল বেজে উঠলে আপনি বিব্রতকর অবস্থায় পড়বেন। সম্প্রতি একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ইন্টারভিউ বোর্ডে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন কিন্তু ভালো ইন্টারভিউ দেওয়ার পরও শুধু মোবাইল বেজে ওঠার কারণে তিনি ভালো চাকরিটি হাতছাড়া করেন। তাই মোবাইলের রিং বন্ধ রাখতে ভুলবেন না।

ইন্টারভিউতে কিছু কমন প্রশ্ন থাকে যা সব নিয়োগকর্তাই করে থাকেন। আগে থেকেই এসব প্রশ্নের উত্তর সাজানো থাকলে আপনার জন্য উত্তর দেওয়া সহজ হবে।
যেমন :

  • বর্তমানে কি করছেন ?
  • নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন ?
  • আপনি কেন এই চাকরিটি করতে চান ?
  • আপনি কত বেতন পেলে খুঁশি হবেন ?
  • আপনি কতদিন ধরে এ কাজ করছেন ?
  • পাঁচ বছর পর আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান ?
  • অন্য কোন চাকরিতে চলে যাওয়ার ইচ্ছা আছে কি ?
  • কোন অঞ্চলে কাজ করতে আগ্রহী এবং কেন ?
  • আপনি অনভিজ্ঞ কিভাবে কাজ করবেন ?
  • চাকরি পেলে প্রতিষ্ঠানে নতুন কি ভ্যালু যোগ করতে পারবেন ?
  • আপনি এত ঘন ঘন চাকরি পাল্টান কেন ?
  • আপনার ভাল গুণ কি কি অথবা চরিত্রের খারাপ দিক কি কি ইত্যাদি।

অনেকে ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকেন, তা না করে স্বাভাবিকভাবে স্মার্টলি ইন্টারভিউ ফেস করুন। ইন্টারভিউ বোর্ডে আই কন্টাক খুবই জরুরি। প্রশ্নকর্তার সাথে আই কন্টাক করে সহজ ও সাবলীল ভাষায় আপনি উত্তর দিয়ে যান আপনার চাকরি পাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।

Sharing is caring!

Leave a Comment