চাকরির ক্ষেত্রে সিভিটাই আসল

চাকরির ক্ষেত্রে সিভিটাই আসল

  • ক্যারিয়ার ডেস্কঃ 

গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলেই শুরু হয় চাকরি খোঁজাখুঁজি। আর চাকরি খোঁজার আগে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তা হলো সিভি বা বায়োডাটা তৈরি করা। নিখুঁত ও সফল সিভি তৈরির নিয়ম তুলে ধরা হলো:

১) খুব ঝকমকে বা রঙচংয়ের কাগজে সিভি লিখবেন না: একটি ভালো সিভি’র জন্য এর উপস্থাপনের প্রক্রিয়াতেও জোর দেওয়া জরুরি। আপনার সিভিটি যেন সুশৃংঙ্খল এবং চোখে পড়ার মতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। সিভিটি অবশ্যই কম্পিউটারে কম্পোজ করে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন। যে কাগজটিতে প্রিন্ট করবেন সেটা যেন ভাল মানের সাদা বা অফ-হোয়াইট কাগজ হয়। সিভিতে যেন কোনো বানান বা ব্যবকরণগত ভুল না থাকে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

২) ফ্রন্ট যেন খুব চেনা হয়: যে ফ্রন্টে সিভিটা লিখবেন সেটা যেন সহজ, সরল, চেনা হয়। ৩) হেডিংয়ে সিভি, বায়োডাটা, Resume এই ধরনের কথা লিখতে যাবেন না: অনেকেই আছেন যারা সিভির ওপর হেডিংয়ে CV, Curriculum Vitae and Resume জাতীয় কথা লেখেন, সেটার দরকার নেই।

৪) সিভিতে ছবি সংযুক্তকরণ: সিভিতে ছবি সবসময় ডানদিকে স্ট্যাপ্লার পিন বা জেমস ক্লিপ দিয়ে আটকে দিবেন। আর ছবিটি যেন সদ্য তোলা হয়, ৬ মাসের বেশি পুরনো ছবি না দেয়াই ভালো। ছবি তোলার সময় ফরমাল পোশাক পরে ছবি তুলবেন। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড যেন খুব বেশি রঙচঙে না হয়, সাদা বা হালকা নীল হলে ভালো হয়।

৫) অন্যান্য গুণাবলি বা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস: আপনার মধ্যে পড়ালেখার পাশাপাশি অন্য কি কি গুণাবলি আছে তাঁর উল্লেখ থাকলে ভালো। অন্য গুণাবলির মধ্যে থাকতে পারে-

– আপনি অতিরিক্ত চাপের মধ্যেও কাজ করতে পারেন

– আপনার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি আছে

– আপনি যে কোন পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন

– আপনি সৎ গুণাবলীর অধিকারী ও কাজের প্রতি যত্নশীল ইত্যাদি

এক্সট্রা কারিকুলাম বলতে বোঝায়, আপনি পড়ালেখার পাশাপাশি আর কি কি করেছেন। আজকাল সব প্রতিষ্ঠানেই এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের উপর জোর দেয়া হয় কারণ এ থেকে মানুষের ব্যাক্তিত্ব প্রকাশ পায়। এগুলো হতে পারে-

– বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা বা নতুন নতুন জায়গা পরিভ্রমণ করা

– বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন

– সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত

– লেখালেখিতে আগ্রহ ইত্যাদি

৬) আপনার আগ্রহ বা শখ: এরপর আপনার শখ বা অবসর সময়ে কি করেন তা উল্লেখ করুন। এক্ষেত্রে একটু চালাকি করতে হবে। সবসময় চাকরীর সাথে সংযুক্ত কোন শখ উল্লেখ করুন, যেমন আপনি যদি মার্কেটিংয়ের কোন চাকরীতে আবেদন করেন তবে আপনার শখ আড্ডা দেওয়া হলে ভাল। কারন আপনি আড্ডা দেন এর অর্থ আপনার নেটওয়ার্ক ভাল, আপনি ভাল যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে পারবেন। শেষে যুক্ত করুন আপনার যদি কোন অতিরিক্ত এবং উল্লেখযোগ্য কার্জকলাপ থাকে।

৭) কাভার লেটার: অবশ্যই এবং অবশ্যই আপনার সিভির সাথে একটা কাভার লেটার পাঠাবেন। এখানে আপনি বলতে পারেন সেই পোস্টটা সম্পর্কে যে পোস্টে আপনি আবেদন করছেন এবং কিভাবে আপনি এই চাকরির বিজ্ঞপ্তি খুজে পেলেন। এটা খুব বেশি বড় করবেন না আবার খুব বেশি ছোট ও করবেন না।

এবার জেনে নিই জীবনবৃত্তান্তের সঠিক বিন্যাস কিভাবে করবেন তা।

যদি খামে পোস্ট করেন-

বাদামী,সাদা বা হলুদ রঙের খাম হতে পারে। তবে রঙিন বা এয়ার মেইল জাতীয় খামে পাঠানো উচিত নয়। সতর্কতার সঙ্গে সমান ভাঁজ করে নিতে হবে আপনার সিভিটি যাতে খামের ভেতর অনাকাঙ্খিতভাবে ভাঁজ হয়ে না থাকে। খামের ডান পাশে স্পষ্টাক্ষরে প্রাপক এবং বাম পাশে আবেদনকারী কিংবা প্রেরকের নাম লিখতে কালো কালির কলম ব্যবহার করাই ঠিক হবে।

সিভি মেইল করা হলে-

সিভি যদি মেইল করে পাঠান তাহলে ভালো করে মেইল পাঠানোর ঠিকানাটা চেক করে নিবেন যেন ভুল না হয় তাহলে আপনার মেইল ফেরত আসবে। সাবজেক্ট-এর ঘরে কোন পোস্টের জন্য আবেদন করছেন তাঁর উল্লেখ থাকতে হবে। আর মেইলের বডিতে ভদ্রভাবে সম্বোধন করে আপনার মেইল এটাচমেন্টটা চেক করতে বলবেন এবং সবার শেষে ধন্যবাদান্তে আপনার নাম উল্লেখ করবেন।

৮) ‘আমি’, ‘আমার’ জাতীয় শব্দ এডি়য়ে চলুন- আমি অমুক কোম্পানিতে টিম লিডার ছিলাম, আমার অমুক ছিল। আমি, আমার শব্দ সিভিতে ত্যাগ করুন, এর বদলে বুলেট ব্যবহার করে পয়েন্ট অনুযায়ী সাজান।

৯) বানান ভুল বা ব্যাকরণগত ত্রুটি একদম যেন না থাকে: সিভিতে বানান ভুল বা বাক্য তৈরিতে ব্যাকরণগত ত্রুটি করে ফেলবেন না। একটা ছোট্ট ভুলের জন্য আপনার চাকরিটা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

১০) বর্তমান চাকরির যাবতীয় তথ্য: বর্তমানে যে চাকরিটা করছেন তার যাবতীয় তথ্য দিন। আপনার ‘জব রোল’ ঠিক কী সেটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।

১১) সিভি’র দৈর্ঘ্য: যারা সদ্য গ্র্যাজুয়েট, তাদের জন্য একপাতার সিভি’ই যথেষ্ট। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা যদি খুব বেশি হয়, তাহলে এর দৈর্ঘ্য বড়োজোর দুই পৃষ্ঠা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে পদটির জন্য আপনি আবেদন করছেন তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া দুই পৃষ্ঠার সিভি লেখার ক্ষেত্রে প্রথম পাতাতেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রাখার চেষ্টা করুন।

১২) মিথ্যা তথ্য বা তথ্য গোপন করবেন না: সিভিতে মিথ্যা কথা একদম বলতে যাবেন না। পরে ধরা পড়ে গিয়ে চাকরি খোয়াতে পারেন।

১৩) সাধারণ দিকনির্দেশনা: আপনার সিভি বা রিজিউমের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইন্টারভিউ পর্যন্ত আপনাকে পৌঁছে দেয়া। নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে সর্বদাই আপনার যোগ্যতাকে এমনভাবে তুলে ধরুন যেন তা খুব সহজেই আপনার সকল তথ্যের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। এজন্য প্রথমেই চিন্তা-ভাবনা করে আপনার সিভি’র কোন কোন জায়গায় আপনি জোর দেবেন তা ভাবুন।

১৪) আধেয় বা কনটেন্ট: সিভি তৈরির আগে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা অবজেকটিভ ঠিক করুন। পুরো সিভিতেই এই অবজেকটিভের কথা মাথায় রেখে পয়েন্টগুলো উপস্থাপন করুন। তথ্যগুলো সিভিতে দেওয়ার আগে আলাদা একটি কাগজে লিখুন এবং তারপর গুরুত্বের ক্রমানুসারে এগুলোকে সিভিতে উপস্থাপন করুন। অতিরিক্ত তথ্য দিয়ে কাউকে বিরক্ত করার চাইতে বাছাই করা তথ্যগুলোই কেবল সিভিতে রাখুন। নিজের দেওয়া তথ্যগুলো যাতে অতিরঞ্জিত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখুন।

১৫) প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ: সিভি তৈরির প্রাথমিক পরামর্শের পর আপনার প্রয়োজন হবে সিভিতে কোন কোন তথ্যগুলো রাখবেন, তা সঠিকভাবে নির্বাচন করা। এখানে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।

১৬) ব্যক্তিগত তথ্য: একটি সিভি হাতে নিয়ে চাকরিদাতার প্রথমেই নজর পড়বে সিভির একদম উপরের অংশে। কাজেই উপরের অংশটি একরকমভাবে চাকরিপ্রার্থীর ভিজিটিং কার্ড। এখানে প্রার্থীর প্রাথমিক ব্যক্তিগত তথ্য রাখতে হবে। এর মধ্যে থাকবে নাম, ফোন নম্বর বা মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা ও চিঠি পাঠানোর ঠিকানা। এসব তথ্য স্পষ্ট আর নির্ভুলভাবে উল্লেখ না করা হলে আপনাকে নিয়োগদাতার পছন্দ হলেও সে তথ্য আপনার অজানাই থেকে যাবে। আর ব্যক্তিগত তথ্যের এই অংশে বয়স, বৈবাহিক অবস্থা বা স্বাস্থ্যগত বর্ণনা প্রভৃতি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

১৭) উদ্দেশ্য বা অবজেকটিভ: আপনার সিভি বা রিজিউমে অবশ্যই অবজেকটিভ বা ক্যারিয়ার অবজেকটিভ শিরোনামে আলাদা একটি অংশ রাখতে হবে। এতে করে আপনার সিভিটি অনেক বেশি ফোকাসড এবং সুনির্দিষ্ট বলে মনে হবে। কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি থেকে আপনি কী অর্জন করতে চান, আপনার ওপর কতটুকু নির্ভর করা যায় প্রভৃতি বিষয় স্পষ্ট করে লিখুন এই অংশে।

১৮) শিক্ষাগত যোগ্যতা: আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতাগুলোকে উল্টোদিক থেকে উপস্থাপন করুন। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ডিগ্রিটিকে সবার আগে লিখুন এবং তারপর ক্রমে একই ধারাবাহিকতায় অন্যগুলোর কথা বলুন। গ্র্যাজুয়েশন করার সময় কোনো রিসার্চ বা থিসিস নিয়ে কাজ করলে সেটার কথাও উল্লেখ করতে পারেন এই অংশে।

১৯) কাজের অভিজ্ঞতা: আপনার যেকোনো কাজের ইতিহাস, স্বেচ্ছাশ্রমের বৃত্তান্ত কিংবা ইন্টার্নশিপের তথ্য দিতে পারেন এ অংশে। এ ক্ষেত্রে আপনি কী পদে কাজ করতেন, আপনাকে কী ধরনের কাজ করতে হতো, নিয়োগদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম এবং কাজের সময় অর্থাত্ কবে থেকে কবে পর্যন্ত কাজ করেছেন ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করুন। যে পদের জন্য আবেদন করছেন তার সাথে সংশ্লিষ্ট এমন কোনো অ্যাসাইনমেন্টও যদি কোনো সময় করে থাকেন, তবে তার কথাও উল্লেখ করতে পারেন। এমন কোনো অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভালো, যা চাকরির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

২০) রেফারেন্স: আপনার দেওয়া তথ্যগুলো সম্পর্কে যেন দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি থেকে জানা যায়, সেজন্যই এই রেফারেন্সের ব্যবস্থা। যাদের রেফারেন্স দিচ্ছেন অবশ্যই আগে থেকেই তাদের অনুমতি নেবেন এবং বিষয়টি তাদের জানিয়ে রাখবেন। মোট রেফারেন্সের সংখ্যা দু’টি থেকে পাঁচটির মধ্যে সীমিত রাখাই উত্তম। যাদের রেফারেন্স আপনার সিভিতে দিচ্ছেন তাদের নাম, কোন পদে কাজ করেন, ব্যবসায়িক বা অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।

২১) মনে রাখুন: সিভি হচ্ছে চাকরিদাতার সামনে আপনার প্রথম উপস্থাপনা। কাজেই চাকরিদাতার কাছে আপনার ‘ফার্স্ট লুক’ হচ্ছে আপনার সিভি। কাজেই এর সৌন্দর্যই হচ্ছে আপনার সৌন্দর্য। সিভিতে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোর সংযোজন যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি এর দেখতে সুন্দর হওয়া। বাড়তি তথ্য আর ডিজাইনের ভিড়ে সিভিকে ভারি করবেন না। ডিজাইনের দিক থেকেও পরিচ্ছন্ন রাখুন। তাহলে সহজে এটি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে।

সূত্রঃ সমকাল favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment