সিভি হওয়া চাই আকর্ষণীয়

সিভি হওয়া চাই আকর্ষণীয়

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

চাকরিজীবনে প্রবেশের প্রথম ধাপ হলো চাকরির জন্য আবেদন করা। আর এমই আবেদন করার জন্যই প্রয়োজন হয় জীবনবৃত্তান্তের। কোনো চাকরিপ্রার্থী প্রাথমিকভাবে মূলত তার জীবনবৃত্তান্ত দ্বারাই হাজির হন চাকরিদাতার সামনে। সেই হিসেবে একটি জীবনবৃত্তান্তকে চাকরিদাতার কাছে চাকরিপ্রার্থীর ‘ফার্স্ট লুক’ বললেও ভুল হবে না। কিন্তু অনেকেই সুন্দরভাবে একটি জীবনবৃত্তান্তকে তৈরির দিকে মনোযোগী হন না, যা তাদের ক্যারিয়ারের পথে একটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে হাজির হতে পারে। এই প্রতিবন্ধকতা এড়াতে কীভাবে একটি সুন্দর জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করা যায়, তা তুলে ধরা হয়েছে এই লেখায়।

আংশিক পরিচয়

জীবনবৃত্তান্তের শুরুতেই থাকবে আপনার পুরো নাম। এটি একটু বড় ফন্টে বোল্ড করে লিখতে হবে। সার্টিফিকেটের নামটি ব্যবহার করুন, ডাক নাম পরিহার করুন। নামের পর থাকবে আপনার বর্তমান ঠিকানা। যে ঠিকানায় আপনি চিঠি পাবেন, সেটিই রাখুন এই অংশে। এর পরে ফোন নম্বর আর ইমেইল ঠিকানা দিন। জীবনবৃত্তান্তের একদন ওপরে বাম পাশে বা মাঝখানে রাখুন এই অংশটি। আর ডানে যুক্ত করুন একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য

সদ্য পাস করা বা স্বল্প অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের জন্য এই অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কী ধরনের ক্যারিয়ার গড়তে চান এবং নিজের দক্ষতা, মেধা ও অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগাতে চান, তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরতে হবে এই অংশে। ভিন্ন ভিন্ন পদের চাকরির জন্য ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য ভিন্ন হলে ভালো হয়। আপনার নিজের লক্ষ্যের সাথে সাথে আপনি প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে লাভবান করতে পারবেন, সেটিরও ইঙ্গিত রাখুন ক্যারিয়ার উদ্দেশ্যে।

নিজের পরিচয় তুলে ধরুন

এখানে পরিচয় বলতে আপনার মা-বাবার নাম বুঝানো হয়নি। এই অংশে তুলে ধরতে হবে আপনার নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা ও গুণাবলীর কথা। আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করছেন সেই চাকরির সাথে সংশ্লিষ্ট কাজ করার জন্য আপনার মধ্যে কোন গুণ, দক্ষতা বা যোগ্যতা রয়েছে, তা তুলে ধরুন এই অংশে। এমনভাবে এই তথ্য উপস্থাপন করুন যাতে চাকরিদাতা মুগ্ধ হয় আপনার যোগ্যতা বা দক্ষতায়। সেইসাথে আপনার একটি সারসংক্ষেপও তুলে ধরুন এই অংশে। আপনি কবে, কোথায়, কী ধরনের কাজ করেছেন তার একটি নাতিদীর্ঘ বর্ণনা তুলে ধরুন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা

অভিজ্ঞ এবং অনভিজ্ঞদের জন্য এই অংশটি একটু ভিন্ন হবে। যাদের চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা চাকরির অভিজ্ঞতাকেই আগে উল্লেখ করবেন। সেক্ষেত্রে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কতদিনের জন্য কাজ করেছেন, তা আগে উল্লেখ করতে হবে। সেইসাথে কোন পদে কাজ করেছেন এবং আপনার ওপর কী কী দায়িত্ব অর্পিত ছিল, তা যতটাসম্ভব বিস্তারিত তুলে ধরুন। চাকরিজীবনে কোনো ধরনের বিশেষ অর্জন, পুরস্কার বা প্রাপ্তি থাকলে তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না। অভিজ্ঞরা এর পরে যুক্ত করবেন শিক্ষাগত যোগ্যতা আর প্রশিক্ষণের তথ্য। আর অনভিজ্ঞরা শুরুতেই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের তথ্য তুলে ধরবেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে আপনার অর্জিত প্রতিটি ডিগ্রির নাম, ডিগ্রি অর্জনের বছর, ফল প্রকাশের সময়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বোর্ড, ফলাফল প্রভৃতি লিখতে হবে। বিশেষ কোনো একাডেমিক অর্জন থাকলে তা উল্লেখ করুন। কোনো পরীক্ষার ফলাফল এখনও লাভ না করলে ‘অবতীর্ণ’ লিখে দিতে হবে। কোনো পরীক্ষার ফলাফল যদি খারাপ হয়, তা বাদ দিবেন না। হয় প্রতিটি পরীক্ষার ফলাফল লিখবেন অথবা কোনো পরীক্ষার ফলাফলই যুক্ত করবেন না।

কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ থাকলে তার বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করুন। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রশিক্ষণের মেয়াদ, প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু, প্রশিক্ষণে আপনার ফলাফল প্রভৃতি উল্লেখ করুন।

আপনার বিশেষত্ব উল্লেখ করুন

অনেকেই জীবনবৃত্তান্তে খোলাখুলি কিছু উল্লেখ না করে বিভিন্ন কাজের আবছা বিবরণ দিয়ে থাকেন। এটি সঠিক পদ্ধতি নয়। বরং খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন আপনি কী করেছেন, আপনি কী করতে চান এবং আপনি কী করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন। প্রতিটি মানুষের নিজের একটি দক্ষতার জায়গা থাকে। আপনার সেই দক্ষতার জায়গাটিকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন আপনার জীবনবৃত্তান্তে।

সাফল্য তুলে ধরুন সঠিকভাবে

নিজের সাফল্যের ঢোলটি পেটাতে পিছপা হবেন না। সাফল্য থাকলে সেই সাফল্যের পেছনে আপনার ভূমিকাগুলোও তুলে ধরুন স্পষ্ট করে। সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূলতা প্রভৃতি কীভাবে আপনি মোকাবেলা করেছেন, সেটিও জানিয়ে দিন আপনার জীবনবৃত্তান্তে।

অতিরিক্ত তথ্য

যেসব তথ্য এর আগের অংশগুলোতে উল্লেখ করা হয়নি কিন্তু চাকরির সাথে সংশ্লিষ্ট, সেগুলোকে এই বিভাগে যুক্ত করুন। পেশাগত অর্জন, পদক/সম্মাননা, ভাষাগত দক্ষতা, কম্পিউটারে দক্ষতা, লাইসেন্স, সরকারি পরিচয়পত্র, প্রকাশিত লেখা, স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড প্রভৃতি তথ্য এই অংশে যুক্ত করে দিন। এ ছাড়া পিতা-মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, ধর্ম, শখ প্রভৃতি তথ্য এখানে যুক্ত করুন।

রেফারেন্স

জীবনবৃত্তান্তে রেফারেন্স রাখাটা জরুরি। এই অংশে নিকটাত্মীয়দের না রাখাই ভালো। শিক্ষা বা কর্মজীবনে যাদের সাথে আপনার ভালো পরিচয় ছিল, তাদের নাম-ঠিকানা সংযোজন করুন। চেষ্টা করবেন প্রতিটি রেফারেন্সের ফোন নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানা যেন সংযুক্ত করতে পারেন। যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করবেন, সেখানে আপনার পরিচিত কেউ থাকলে তাকে রেফারেন্স হিসেবে রাখুন। ন্যূনতম দুইটি রেফারেন্স রাখতে হয় জীবনবৃত্তান্তে। কোনো প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট করে আরও বেশি রেফারেন্স দেওয়ার কথা বললে সেটি অনুসরণ করুন।

বানান, ব্যকরণ লক্ষ্য রাখুন

জীবনবৃত্তান্ত যেহেতু চাকরিদাতার কাছে আপনার ‘ফার্স্ট লুক’, তাই এতে কোনো ধরনের ভুল থাকা চলবে না। বানান এবং ব্যাকরণের দিকে মনোযোগী হোন। সেইসাথে চেষ্টা করুন যতটাসম্ভব স্মার্ট ভাষায় জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করার দিকে। নিজের সন্দেহ থাকলে ভাষাগতভাবে দক্ষ কাউকে দিয়ে জীবনবৃত্তান্তটি একবার দেখিয়ে নিন।

বিজ্ঞাপন বুঝতে হবে

নির্দিষ্ট চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে সেই চাকরির বিজ্ঞাপন অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত তৈরির চেষ্টা করুন। এর জন্য বিজ্ঞপ্তিটি ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিতে হবে। অনেকেই চাকরি বিজ্ঞপ্তিতে পদের নাম আর প্রয়োজনীয় যোগ্যতার বাইরে অন্য কোনো তথ্য খেয়াল করেন না। টি করবেন না। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত সব ধরনের যোগ্যতা বা দক্ষতার কথা ভালোভাবে পড়ুন। সেগুলো নিজের মধ্যে থাকলে তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করুন। এটি আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।

দেখতে সুন্দর, ছাপায় ঝকঝকে

জীবনবৃত্তান্তটি এমনভাবে ডিজাইন করুন যাতে এটি এক নজরে দেখে খুব এলোমেলো বা ঠাসা মনে না হয়। লাইন স্পেসিং সবক্ষেত্রে সমান রাখুন, ফন্টও এক রাখুন। ফন্টের আকার সকল সাব-হেডে এক হবে; আবার সকল সাধারণ লেখাতেও এক থাকতে হবে। অযথা রঙচঙা করতে যাবেন না জীবনবৃত্তান্তকে। আর এমন কোথাও থেকে প্রিন্ট করান যেখানে প্রিন্টের জন্য কোনো খুঁত থাকবে না।

ওপরের নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে আপনার জীবনবৃত্তান্ত আকর্ষণীয়ভাবে আপনার একটি পরিপূর্ণ উপস্থাপন হয়ে উঠবে চাকরিদাতার কাছে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment