‘লেগে থাকতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে’

‘লেগে থাকতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে’

  • জি. সামদানি ডন

ডন সামদানি ফ্যাসেলিটেশন অ্যান্ড কনসালটেন্সি তাদের কার্যক্রম শুরু করে ২০১৪ সালে। এরপর থেকে দলীয়ভাবে কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য সহকারে কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে এই পর্যন্ত আসা। প্রতিষ্ঠানটি মূলত কর্পোরেট ট্রেনিং, ওয়ান টু ওয়ান কোচিং প্রদান করে থাকে। এর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্পিকিং সেশন নিয়ে থাকেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ ইন্সপাইরেশনাল অফিসার জি. সামদানি ডন। ৩ বছরের মাথায় চলতি মাসেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের নতুন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান WiKreate চালু করে, যা একটি ইভেন্ট ও অ্যাক্টিভেশন ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারের গল্প ও স্টার্টআপ-এর দিক নির্দেশনামূলক নানা ভাবনার কথা জানিয়েছেন জি. সামদানি ডন


‘ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে আমি ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনালে ম্যানেজার ফর কনজ্যুমার অ্যাঙ্গেজমেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলাম। তখন যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি প্রাইভেট কার কিনেছিলাম। একরাতে বাসায় ফেরার সময় দুষ্কৃতিকারীরা আমার পায়ে গুলি করে গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এরপর হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম অনেক দিন। তখনই আমার চিন্তা ভাবনা বদলাতে শুরু করে। আমি ভাবতে শুরু করলাম, কেন আমি এখানে, আমার জীবনের মানে কী? যেখানে সারা জীবনের সঞ্চয় মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে জীবনে অর্থপূর্ণ কিছু করতে হবে। আমাকে বাঁচতে হবে আজকের জন্য, আমার পরিবারের জন্য, আগামীর জন্য। ভাবনায় আসে আমার ক্যারিয়ার এমন হওয়া উচিত, যা অন্যের জীবনে ভ্যালু অ্যাড করবে। সেই চিন্তা ও নিজের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে আমি এই কর্পোরেট ট্রেইনারের পেশা বেছে নিই। তারপরই বাবা-মাকে বোঝাই আমার ক্যারিয়ারটা আসলে কী নিয়ে। এছাড়া বাংলাদেশে স্টার্টআপ শুরু করলে অনেক ধরনের বাধা বা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে যেতে হয় এবং অনেক স্যাক্রিফাইস করতে হয়। ম্যালকমগ্ল্যাডওয়েল তার বই ‘টিপিং পয়েন্ট’-এ বলেছেন, ‘একটি রকেট যতক্ষণ না বায়ুমণ্ডলের বাইরে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি দিয়ে এগিয়ে যায়। বায়ুমণ্ডলের বাইরে গিয়ে রকেটটি নিজের মতো চলার ক্ষমতা অর্জন করে।’ ঠিক সেরকম, নতুন কোনো কিছু করতে হলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানো পর্যন্ত অমানবিক পরিশ্রম করে যেতেই হয়। এরপর আমি চাকরি ছেড়ে দিই এবং পরবর্তী বছরের জুনে, মানে প্রায় এক বছরের মধ্যে আমার নিজের প্রতিষ্ঠান ডন সামদানি ফ্যাসিলিটেশন অ্যান্ড কনসালটেন্সির যাত্রা শুরু করি।

1492348777আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হবে নিজের স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে পারা। আমি প্রফেশনাল ট্রেনিং শুরু করার পর থেকে ছোট-বড় যেই লক্ষ্য ঠিক করেছি, সেটাই অর্জন করতে পেরেছি। তবে উল্লেখযোগ্য অর্জন আমার এবং আমার টিমের লেখা পকেট বুক সিরিজ। যা চীনের আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং একুশে বইমেলাতেও পাওয়া গিয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে আমার নিজের রেডিও শো, জে সি আইয়ের TOYP (Ten Outstanding Young Persons in Bangladesh) অ্যাওয়ার্ডসহ আরও অনেক কিছুই।

নতুন উদ্যোক্তারা যা করছে তাতে সফলতা না পেলে তারা সেই কাজ থেকে শিক্ষা নিতে পারছে না। আমার পরামর্শ হলো—হাল ছেড়ে না দেওয়া, সময় যতই কঠিন হোক না কেন, লেগে থাকার মাধ্যমেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। লেগে থাকতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে এবং ধৈর্য ধরে থাকতে হবে। আমাদের সকলের মাঝে একটা প্রবণতা থাকে—আমাদের জীবন একসময় ভালো হবে সেই আশায় অপেক্ষা করতে থাকা। এক ধরনের ভুল ধারণার মাঝে আমরা থাকি এবং ভাবতে থাকি ‘একদিন’ আমাদের জীবন আগের থেকে ভালো হবে, আরও আর্থিক সচ্ছলতা আসবে, আমাদের সম্পর্কগুলো আরও মজবুত হবে, স্বাস্থ্যের আরও উন্নতি হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই ‘একদিন’ আর আসে না। আমরা একটা চক্রের বা সাইকেলের মাঝে জীবনটা পার করে দিই। এই কারণে আমরা বলি, আজকের জন্য বাঁচুন। আমাদের জীবন খুব ভালো হবে না, খুব খারাপও হবে না, জীবন জীবনের মতোই থাকবে, আমাদের এই জীবন নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। সুতরাং, আজকের জন্য বাঁচুন, যা সবসময় করতে চেয়েছেন, সেটা করুন, আপনার স্বপ্নের পিছনে ছুটুন এবং যে জীবনটা সবসময় চেয়েছিলেন সেটার জন্য চেষ্টা করুন।

আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্রেনিং কোম্পানিতে পরিণত হওয়া। এর জন্য যা যা করার প্রয়োজন, তা আমি ও আমার টিম করতে প্রস্তুত। সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা হলো, আমরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে চাই এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনে ভ্যালু অ্যাড করতে চাই।’

লেখক: চিফ ইন্সপাইরেশনাল অফিসার, ডন সামদানি ফ্যাসেলিটেশন অ্যান্ড কনসালটেন্সি

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment