পুরকৌশলে পড়ি

পুরকৌশলে পড়ি

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

সৃষ্টি যেখানে শুরু বলা চলে পুরকৌশল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সূচনা সেখানে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পুরনো শাখাগুলোর লিস্টে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অবস্থান অন্যতম। কোনো কিছু নির্মাণের আগে সর্বপ্রথম একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কথাই মাথায় আসে। কেননা তার নকশা, পরিকল্পনা ও দিক নির্দেশনা ছাড়া কাজটি প্রায় অসম্ভবই। যতই দেখতে সহজ মনে হয় না কেন, যে কোনো নির্মাণ কাজে গভীর জ্ঞান এবং কৌশলের পরিকল্পনা আপনার-আমার সাধারণ মস্তিষ্কের কাজ নয়। নকশা, ব্যবস্থাপনা, গঠন, নির্ধারণ তদারকি, পরিকল্পনা ইত্যাদি একজন পুরকৌশলীর প্রধান কাজ। দেশ ও দেশের বাইরে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গুরুত্ব অনেক। সভ্যতার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ ও সঠিক নগরায়ণের পরিকল্পনায় আমরা পুরোপুরিভাবে তাদের ওপর নির্ভরশীল।

পুরকৌশলের ইতিকথা
প্রাচীন শতাব্দীতে যখন মানুষ নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসের চিন্তা করে পরিকল্পিত জীবন-যাপনের ভাবনা থেকেই পুরকৌশলের যাত্রা শুরু। ধারণা করা হয় মিসরে প্রাচীন ইরাকে ৪ হাজার ও ২ হাজার পুরকৌশলবিদ্যার প্রসার ঘটে। আর প্রাচীন পুরকৌশলের অবদান স্বরূপ পিরামিড তো আছেই। এরপর আস্তে আস্তে রোম, ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই বিষয়। আর প্রথম ১৮২৮ সালে লন্ডনে ইন্সটিটিউট অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এটিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আর বর্তমানে আমাদের দেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই বিষয় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।

পুরকৌশলীর কাজের ধরন
সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই কাজ করতে পারেন। তার কাজের ধরন অনুযায়ী তাকে মাঠ ও অফিস এই ক্ষেত্রেই থাকতে হয়। এছাড়া তাদের থাকতে হয় সদা প্রস্তুত। কেননা দুর্যোগকালীন সময়েও তাদের উপস্থিতি ও পরিকল্পনার দরকার হয়। এছাড়া চাইলে স্ব স্ব ফার্মের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। বাড়ি, সড়ক, ব্রিজ, পোতাশ্রয়, বাঁধ, রেলপথ, কারখানা, হাউজিং কমপ্লেক্স, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থাপনাতে নকশা ও কাঠামো তৈরিতে তাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আর রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে সেখানে চাইলে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা তাদের অবস্থান করে নিতে পারে। এছাড়া কাঠামোটি কতটা টেকশই ও সহনশীল হবে সেটাও অনেকাংশে তাদের ওপর নির্ভর করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা পরামর্শকের ভূমিকা পালন করে। সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা হাইওয়ে ইঞ্জিনিয়ার, ভূ-প্রকৌশল ইঞ্জিনিয়ার, বিদ্যুৎ ইঞ্জিনিয়ার, কনস্ট্রাকসন ইঞ্জিনিয়ার, গণপূর্ত ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে।

কোথায় পড়বেন
আমাদের দেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশ ভারী। দেশের প্রায় সব প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকেও এ বিষয়ে পড়া যায়।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ যথেষ্ট। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। দেশের বাইরে ইউকে, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, চীনেও এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়া যায়। আর এ বিষয়ে অনেক পুরনো ও চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় এর অনেক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে স্থাপত্য প্রকৌশল, জিওট্যাকনিক্যাল প্রকৌশল, ভূপ্রকৃতিবিদ্যা প্রকৌশল, নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল, স্ট্রাকচারাল প্রকৌশল, ভূমিকম্প প্রকৌশল, পরিবেশ প্রকৌশল, পানিসম্পদ প্রকৌশল, পরিবহন প্রকৌশল উল্লেখযোগ্য।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং
কেউ চাইলে এসএসসি-এর পরও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া যায়। এক্ষেত্রে পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ২.৫ থাকতে হবে। এরপর চাইলে যে কেউ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করতে পারে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এক্ষেত্রে ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সুযোগ দিয়ে থাকে।

ভর্তি যোগ্যতা
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে একজনকে পরিকল্পনা ও ড্রইয়িংয়ে পারদর্শী হতে হবে। এর পূর্বশর্ত হচ্ছে, শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আসতে হবে। পরীক্ষার্থীকে গণিত, রসায়ন, পদার্থ, বাংলা, ইংরেজি এই ৫ বিষয়ে ২৪ থাকতে হয় বুয়েটে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। এছাড়া অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলোতে জিপিএ ৫ চেয়ে থাকে।

চুয়েট, রুয়েট, কুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ভর্তি যোগ্যতা এইচএসসির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয়। ডিপ্লোমায়ের ক্ষেত্রে ২.২৫ হতে হবে জিপিএ।

আয়-রোজগার
একজন নতুন পুরকৌশলীর বেতন ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার হয়ে থাকে। তাছাড়া অভিজ্ঞতার ঝুড়ির দিক থেকে সেই আয় বেড়ে ৫০ হাজার থেকে লাখ ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া একজন নিজের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আয় করতে পারেন।

সূত্র: যুগান্তরfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment