গুগলে চাকরির সাক্ষাৎকার অভিজ্ঞতা

গুগলে চাকরির সাক্ষাৎকার অভিজ্ঞতা

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

গুগলের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনআপনার হাতে এক বাক্স পেনসিল দেওয়া হলে প্রচলিত ব্যবহার বাদে তা দিয়ে আর কী করবেন, তার ১০টির তালিকা করুন—চাকরির সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্নের কী জবাব দেবেন? গুগলের প্রশাসনিক সহকারী পদে চাকরি পেতে এ ধরনের মাথা ঘোরানো অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। শুধু এ পদেই নয়, অন্যান্য পদের জন্য জটিল সাক্ষাৎকার পর্ব পার হলেই তবে মেলে চাকরি। গত এক দশকে গুগল অবশ্য সাক্ষাৎকার পর্বের প্রশ্নগুলো কিছুটা সহজ করে ফেলেছে। তাই বলে একেবারে ডাল-ভাত নয়।

যদি সাধারণ ব্যবস্থাপক পদের জন্য জটিল এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তবে ভাবুন তো গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ আর সের্গেই ব্রিন যদি সাক্ষাৎকার নেন, তবে কেমন হবে? এ প্রশ্নের উত্তর সবচেয়ে ভালো জানা আছে মার্কিন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এওএলের প্রধান নির্বাহী টিম আর্মস্ট্রংয়ের। ২০০৯ সালে এওএলে যোগ দেওয়ার আগে তিনি প্রায় এক দশক গুগলে কাটিয়েছেন। গুগলের কোটি কোটি ডলারের বিজ্ঞাপন ব্যবসা প্রসারে একেবারে শুরু থেকে কাজ করেছেন। ২০০০ সালের আগে তিনি গুগলে যোগ দেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন গুগলের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা।

আর্মস্ট্রংকে চাকরির জন্য প্রথম সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছিল গুগলের প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা অমিড করদেসতানির কাছে। বর্তমানে করদেসতানি টুইটারের নির্বাহী চেয়ারম্যান। করদেসতানির সঙ্গে নিউইয়র্কের কার্লিজল হোটেলে সাক্ষাৎ করেছিলেন আর্মস্ট্রং। গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যবসায় আসা উচিত কি না, সে বিষয়ে করদেসতানির সঙ্গে আলাপ করেছিলেন তিনি। তখন গুগলের আয়ের জায়গা ছিল কেবল সফটওয়্যার লাইসেন্স থেকে আসা অর্থ। এর আগে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেনের স্টার ওয়েভ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপনকর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন আর্মস্ট্রং। ওই সময় গুগলের চাকরির সুযোগ ছাড়াও আরও একটি ভালো চাকরির সুযোগ তাঁর হাতে ছিল। শেষ পর্যন্ত চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য আর্মস্ট্রংকে হাজির হতে হলো গুগলের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতার সামনে।

সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আর্মস্ট্রং বলেন, সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়াটি প্রচলিত সাক্ষাৎকারের মতো ছিল না। শুরুতে টুকটাক কিছু প্রশ্ন করলেন তাঁরা। কিছু কথা বললেন। তারপর বললেন, আপনাকে কী জিজ্ঞাসা করব বুঝতে পারছি না। তার চেয়ে ভালো আপনি নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করুন আর উত্তর দিন। মনে করুন, আপনি যদি আমাদের জায়গায় থাকতেন, তবে যা প্রশ্ন করতেন, সেই প্রশ্নের উত্তর দিন।
আর্মস্ট্রং বলেন, তাঁদের কথা শুনে আমি বলেছিলাম, দেখুন, আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি, আর খুব সৎ মানুষ। এটাই আমি পরের প্রশ্ন হিসেবে জিজ্ঞাসা করতাম। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম সাক্ষাৎকার বেশ মজার হবে।

চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আর্মস্ট্রং বলেন, সাক্ষাৎকারে আমাকে প্রশ্ন না করে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে বলাটা ছিল তাঁদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের একটি পদ্ধতি। তাঁরা যে অপ্রস্তুত বা অলস ছিলেন তা নয়। কোনো চাকরিপ্রত্যাশীর চরিত্র বা বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণের জন্য তাঁদের এটা সাধারণ একটি পদ্ধতি ছিল, যা পরে তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম। এখন অবশ্য তাঁরা এ পদ্ধতি কাজে লাগান কি না, তা পরিষ্কার নয়।
প্রথম সাক্ষাৎকারটি খুব স্বাভাবিক না হলেও শেষ পর্যন্ত আর্মস্ট্রংয়ের ওপর দীর্ঘস্থায়ী ও ইতিবাচক ধারণা করতে পেরেছিলেন গুগলের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা।

ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আর্মস্ট্রং বলেন, ওই সাক্ষাৎকারের পর আমার চাকরি হয়েছিল। এখন তাঁরা দুজন আরও বেশি স্মার্ট ও সৃজনশীল হয়ে উঠেছেন। তাঁরা এখন ইতিবাচক প্রতিযোগিতাও করেন। আমি মনে করি, তাঁরা সবার অনেক খেয়াল রাখেন। গুগলের আকার এখন এতটাই বিস্তৃত আর তাঁরা যা করছেন, তা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া পান। কিন্তু আমি মনে করি, মন থেকে তাঁরা খুবই ভালো মানুষ।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডারfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment