মামুনের ভাইভা অভিজ্ঞতা

মামুনের ভাইভা অভিজ্ঞতা

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

চাকরি পরীক্ষার সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অনেকেরই হয় নানা অম্লমধুর অভিজ্ঞতা। ভাইভা বোর্ডে মুখোমুখি হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন ফরিদপুর সদরের সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বপন।


ছিলাম সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র। এরপর সুযোগ পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে পড়ার। আর সবার মতো মাথায় ছিল বিসিএসের ভাবনা। ক্লাসের পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতিও নিতাম নিজের মতো করে। সমস্যাটা বাধল ভাইভা নিয়ে। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি তো নিচ্ছি, ভাইভার প্রস্তুতি নেব কী করে? নিজেই উপায় বের করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভাইভায় ভালো পারফর্ম করার চেষ্টা করলাম। ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকা বাদ দিয়ে আস্তে আস্তে ক্লাস পারফর্ম করা শুরু করলাম। আমার মধ্যে ফর্মাল কমিউনিকেশনের যে জড়তাটা ছিল, আস্তে আস্তে কেটে গেল।

kalerkantho_com-07-06-17-15এরপর নেমে পড়লাম চাকরিযুদ্ধে। জীবনে ছয়টি চাকরির ভাইভা দিয়েছি। মজার ব্যাপার হলো, এর মধ্যে তিনটি ভাইভায়ই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদা ম্যাম ছিলেন। বিষয়টি কাকতালীয় মনে হয়েছে আমার কাছে।

প্রথম ভাইভা নিয়ে আমি অনেক নার্ভাস ছিলাম। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম, উত্তর দিচ্ছিলাম। পরে অবশ্য ভাইভা বোর্ডে ঢোকার পর নার্ভাসনেস কেটে গিয়েছিল। ভাইভা বোর্ডে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কী করতে ভালোবাসি। আমার এলাকার বিখ্যাত মানুষদের নাম জানতে চেয়েছিলেন ওনারা। ভাইভা বোর্ডে তিনজন ছিলেন। তাঁরা অনেক সময় একই সঙ্গে প্রশ্ন করতে থাকেন। আমি প্রথমে ভাইভা বোর্ডের প্রধানের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বাকি দুজনের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। যিনি প্রশ্ন করেন, তাঁর দিকে তাঁকিয়ে উত্তর দেওয়াটা ভাইভা বোর্ডের অন্যতম এটিকেট।

সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার পদে ছয় বছর ধরে কাজ করছি। হিসাবমতে, এই পদের জন্য দেওয়া ভাইভাটা সবচেয়ে ভালো হওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতি ভিন্ন। সেই ভাইভা বোর্ডে আমাকে শুধু জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, একজন থানা শিক্ষা অফিসারের কাজ কী? প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় মাঝেমধ্যে শিক্ষকরা বলতেন, ‘আজকে বড় স্যার আসবেন, কেউ দুষ্টুমি করো না। ’ সেই বড় স্যার আসতেন, আমাদের ট্রান্সলেশন জিজ্ঞেস করতেন, কবিতা শুনতেন। বেশ ভালোই কাটত ওই দিনটা। আমি নিজেও সেই কাজ করতে যাচ্ছি, বিষয়টা আমার জন্য রোমাঞ্চকর। প্রশ্নের উত্তরে এতটুকুই বলেছিলাম ভাইভা বোর্ডে।

আমার দেওয়া সবচেয়ে ভালো ভাইভা ছিল ত্রিশতম বিসিএসের ভাইভাটি। যদিও অনেক মজার একটা প্রশ্নের উত্তর আমি পারিনি। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘ধরুন আপনি একটি থানার অফিসার ইনচার্জ, আপনার অনুপস্থিতিতে একজন কনস্টেবল কি থানার ইনচার্জ হতে পারবে?’ উত্তরটি আমার জানা ছিল না।

সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। প্রায় প্রতিদিন অনেক শিশু, শিক্ষক, অভিভাবকের সঙ্গে আমার কাজ করতে হয়। অনেক মানুষের সামনে পারফর্ম করতে হয়। প্রতিটি দিনই আমার কাছে একেকটি ভাইভার মতো।

যারা ভাইভা দেবে, তাদের প্রতি আমার পরামর্শ, নিজের পড়ার বিষয়ে জ্ঞান বাড়াতে হবে এবং অবশ্যই আপনি যে পদের জন্য ভাইভা দিচ্ছেন, সেই কাজটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। ফর্মাল, মার্জিত ও আরামদায়ক যেকোনো পোশাকেই ভাইভা বোর্ডে যেতে পারেন। তবে এই সময় যতটা স্বাভাবিক থাকা যায় ততই মঙ্গল। ভাইভার সফলতা নির্ভর করে আপনি পরিস্থিতি কতটা নিজের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারছেন তার ওপর। ভারমুক্ত থাকুন, প্রতিটি সেকেন্ড পারফর্ম করুন আর সময়টা উপভোগ করুন। বেশি চাপ নেবেন না, চাকরি একটা না একটা হয়েই যাবে।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment