ল্যারি পেজের চোখে সাফল্য কী?

ল্যারি পেজের চোখে সাফল্য কী?

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

প্রতিষ্ঠানের রীতিনীতির ক্ষেত্রে একেবারে নতুন ধারণা নিয়ে এসেছিলেন ল্যারি পেজ। তিনি গুগলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষদের তালিকায় তাঁর অবস্থান দশম। বর্তমানে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তাঁর উক্তি নিশ্চয়ই নবীন উদ্যোক্তাদের পথ দেখাবে।


১. ভাবনার ডালপালা মেলতে ১০০ জন কর্মীর একটা বিশাল প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই:

গুগল, অ্যাপল, ডিজনি, অ্যামাজন—স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মিল কোথায় জানেন? এই সব কটি প্রতিষ্ঠানেরই জন্ম হয়েছিল গ্যারেজে। তেমন পুঁজি ছিল না, একদল কর্মী ছিল না, বিশাল অফিস ছিল না, তবে স্বপ্ন ছিল। একটা সফল উদ্যোগ নিতে হলে ওই স্বপ্নই সবার আগে জরুরি। বিশ্বাস, দৃঢ়তা ও পরিশ্রম থাকলে স্বপ্নপূরণ হবেই। ভেবে দেখুন, পর্যাপ্ত জনবল নেই বলে ল্যারি পেজ, স্টিভ জবস, ওয়াল্ট ডিজনি কিংবা জেফ বেজোসরা যদি পিছিয়ে পড়তেন, তাহলে নিশ্চয়ই তাঁরা আজকের সফলতা পেতেন না। কোনো অজুহাতই যেন আপনাকে লক্ষ্যচ্যুত না করে। নিজের ওপর বিশ্বাস না রাখা পর্যন্ত কখনো জানবেন না, আপনি আসলে কী করতে পারেন।

২. আমাদের লক্ষ্য ছিল, যতটা সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করা এবং তথ্যগুলোকে কাজে লাগানো।

গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হলো, তিনি জানতেন গন্তব্য কোথায়। আপনি যদি আপনার গন্তব্য জানেন, তাহলে পথচলাটা সহজ হয়। এক বাক্যে বলুন, আপনার লক্ষ্য কী? আপনি আসলে কী করতে চান? যদি এক বাক্যে বলতে না পারেন, তবে লক্ষ্য আপনার কাছে পরিষ্কার নয়।

৩. যখন আমরা শুরু করেছি, সবাই বলেছিল, “তোমরা ব্যর্থ হবে। কারণ ৫টা সার্চ ইঞ্জিন ইতিমধ্যে আছে।” আমরা বলেছিলাম, হ্যাঁ। আমরাও একটা সার্চ ইঞ্জিনই তৈরি করছি। কিন্তু আমরা হব অন্য রকম।

নতুন একটা প্রতিষ্ঠানকে সফল করার মূলমন্ত্র এটাই। আপনার প্রতিযোগীদের তুলনায় আপনি ব্যতিক্রম কেন? এই প্রশ্নের একটা জুতসই জবাব খুঁজে বের করুন। মনে রাখবেন, প্রতিযোগিতায় থাকা জরুরি। কারণ, প্রতিযোগিতা না থাকলে আপনি এগোতে পারবেন না। প্রতিযোগীদের দিকে নজর রেখে আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন, যেন আপনি সব সময় এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারেন। আপনার ‘ব্র্যান্ড’–এর চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব সময় গ্রাহককে নতুন কিছু দিন, যা আপনার প্রতিযোগী দিচ্ছে না।

৪. মানুষকে শ্রদ্ধা করুন। তাহলে আপনিও শ্রদ্ধা পাবেন:

একটা প্রতিষ্ঠানে কর্মীরাই সবচেয়ে বড় সম্পদ, এটা কখনোই ভুলে গেলে চলবে না। আপনার প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের আপনি যতটা গুরুত্বসহকারে দেখেন, কর্মীদেরও যদি ততটা গুরুত্ব দেন, তাহলেই বিনিময়ে তাঁদের সেরা কাজটা পাবেন। ভালো কাজের জন্য কর্মীকে পুরস্কৃত করুন, যেন সবাই মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে উৎসাহিত হন।

৫. যদি পৃথিবী বদলাতে চান, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করুন:

ব্যবসায় সফল হতে হলে এমন কিছু নিয়ে কাজ করুন, যা মানুষের সমস্যার সমাধান দেবে, প্রয়োজন মেটাবে। যদি মানুষের উপকার করতে পারেন, তার মানে আপনি ঠিক পথে আছেন। মানুষের কাজে এলে আয় স্বাভাবিকভাবেই হবে।

৬. প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি পরিবার হয়ে ওঠা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেন কর্মীরা নিজেকে প্রতিষ্ঠানের একটা অংশ ভাবতে পারেন।

প্রত্যেক কর্মী যেন নিজের গুরুত্বটা বোঝেন। উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে তাঁদের প্রয়োজন বুঝতে হবে, বুঝতে হবে কাজের ক্ষেত্রে তাঁরা কী কী সমস্যায় পড়ছেন। সবাই যদি শুধু নিজের কাজটা করে যায়, তাহলে হয়তো সফলতা আসবে, কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। একটা দল হয়ে উঠতে হবে, কাজে আনন্দ পেতে হবে। তবেই আপনি অনন্য সাধারণ হবেন।

৭. ব্যবসা করতে হলে ব্যবসায় শিক্ষায় পড়তে হবে, তা নয়, আমি শুধু এক শেলফভর্তি ব্যবসা–সংক্রান্ত বই পড়ে শেষ করেছি, এটাই যথেষ্ট ছিল।

ডিগ্রির পেছনে ছুটতে গিয়ে কত মানুষ যে তাঁদের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছেন! সফল মানুষদের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপারে মিল পাবেন সব সময়। তাঁরা কখনোই তাঁদের লক্ষ্য আর শিক্ষাকে আলাদা করে দেখেননি। বরং লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত শিখেছেন। সেই শিক্ষায় ডিগ্রি আসুক বা না আসুক, তাঁরা পরোয়া করেননি। যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে নিজের মধ্যে শেখার আগ্রহ তৈরি করুন। ল্যারি পেজ বলেন, ‘বাঁচো, শেখো, ভালোবাসো—এসবই তো জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রতিদিন কিছুটা সময় বই পড়ার পেছনে ব্যয় করুন।

৮.আমি জানি, একসময় আপনার মনে হতে পারে পুরো পৃথিবী এক দিকে আর আপনি এক দিকে, কিন্তু কখনো কখনো একটু পাগল হতে হয়। কৌতূহলকে অনুসরণ করুন, লক্ষ্যে অনড় থাকুন। স্বপ্ন হারাবেন না। পৃথিবীর আপনাকে প্রয়োজন।

স্বপ্নপূরণ কিংবা লক্ষ্যে পৌঁছানোর আনন্দের সঙ্গে আর কোনো আনন্দেরই তুলনা হয় না। অতএব নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন।

৯.মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে না পারলে টিকে থাকতে পারবেন না।

বিশ্বাস আদায় করে নিতে হয়। গ্রাহকের সঙ্গে মিশুন, কথা বলুন, তাঁরা কী চান বুঝুন। গ্রাহকের কাছাকাছি থেকে মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারলেই লোকে আপনাকে বিশ্বাস করবে।

১০. আপনার কাজ যেন একই সঙ্গে কঠিন ও রোমাঞ্চকর হয়

ব্যবসার ক্ষেত্রে আরাম-আয়েশ হলো সবচেয়ে বাজে বন্ধু। যদি মনে হয় সবকিছু খুব সহজে হয়ে যাচ্ছে, তাহলে নিজের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন। আরও একটু বেশি পরিশ্রম করুন। আপনার প্রতিটা দিন, প্রতিটা কাজ যদি রোমাঞ্চকর হয়, তাহলে কেউ আপনাকে আটকাতে পারবে না। একটা লক্ষ্য পূরণ হলেই আরেকটা লক্ষ্যের পেছনে ছুটুন।

সূত্র: প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment