সহজ শর্তে অস্ট্রেলিয়ার ‘ওয়ার্ক ভিসা’

সহজ শর্তে অস্ট্রেলিয়ার ‘ওয়ার্ক ভিসা’

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

পৃথিবীর অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর একটি অস্ট্রেলিয়া। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা, লেখাপড়ার চমৎকার পরিবেশ এবং সমৃদ্ধশালী অর্থনীতি দেশটিকে সবার পছন্দের শীর্ষে রেখেছে।। গেলো বছর এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়া সরকার তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রাম সাবক্লাস ৪৫৭ বন্ধ করে দেয়।। অতঃপর বিপুল সমালোচনার মুখে অস্ট্রেলিয়া ৪৫৭ এর বিকল্প হিসাবে চালু করেছে সাবক্লাস ৪৮২ বা টি.এস.এস বা টেম্পোরারি স্কিলড শর্টেজ ভিসা।

টেম্পোরারি স্কিলড শর্টেজ ভিসার অন্তর্গত একটি ভিসা হচ্ছে সাবক্লাস ৪৮২। এর আওতায় বিদেশী শ্রমিকরা অস্ট্রেলিয়ায় যেকোনো বৈধ প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে পারে। এই সাব-ক্লাস ৪৮২-এর অধীনে এখন শর্ট টার্ম, মিডিয়াম ও শ্রমচুক্তিতে ভিসা হয়ে থাকে।

যা যা প্রয়োজন

এই ভিসার ক্ষেত্রে ভিসাপ্রার্থীকে অবশ্যই টিএসএস ভিসার পেশা তালিকার জন্য একটি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মনোনীত হতে হবে। সর্বনিম্ন স্বল্পমেয়াদী স্টিমে আইইএলটিএসে ৪.৫ বা সমমান এবং মধ্যম মেয়াদি স্টিমে ৫ বা এর সমমানের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে। এ ছাড়া দেখাতে হবে পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত অপরাধী নয় এমন চারিত্রিক সনদ। সাবক্লাস ৪৮২ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বলেন, এই শিক্ষিত ও দক্ষ বাংলাদেশীদের জন্য এটা বিরাট সুযোগ। মূলত ভারতীয়রা সাবক্লাস ৪৫৭ এ এগিয়ে থাকলেও বেশী গেলেও বাংলাদেশীরা যদি প্রথম থেকেই দ্রুত ও দক্ষতার সাথে ফাইল প্রসেস করে তবে স্বল্প সময়ে এই ভিসা পাওয়া নিশ্চিত। তিনি আরও বলেন যেহেতু অস্ট্রেলিয়া ডিমান্ড লিস্টে ৪৩২ টি পেশা রয়েছে সুতরাং অনেকেই বিভিন্ন সাবক্লাসে আবেদন করে পরিবার সহ অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে।

চাকরি নিয়ে প্রবেশ করেও অনেকে অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানান এই অভিবাসন আইনজীবী। তিনি বলেন, সঠিক চাকরি এবং সঠিক টেরিটরি বেছে নেওয়ার দক্ষতা এ ক্ষেত্রে নাগরিক হওয়ার বিষয়টি ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় শুধু গত বছর প্রায় চার লাখ স্থায়ী চাকরির পদ সৃষ্টি হয়েছে।

দেশটিতে যাওয়ার জন্য কয়েক ডজন ভিসা প্রোগ্রাম রয়েছে। তবে মূলত চার ভাগ প্রচলিত ক্যাটাগরিতে সেখানে যাওয়া তুলনামূলক সহজ। এগুলো হলো:

স্কিলড মাইগ্রেশন উইথ পিআর : সাব-ক্লাস ১৮৯, স্কিলড ইনডিপেনডেন্ট ভিসা

বিষয়টি সম্পূর্ণ পয়েন্টের ওপর নির্ভর করে। মোট ৬০ পয়েন্ট প্রয়োজন হয়। পয়েন্ট পাওয়া যায় বয়স, কাজের অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা, ভাষার ওপর চূড়ান্ত দখলের ওপর।

স্কিলড নমিনেটেড ১৯০ ভিসা

এই প্রোগ্রামটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এতে আবেদনের জন্য শর্ট লিস্টেড পেশাজীবী হতে হবে। টেরিটরি থেকে স্পন্সরশীপ থাকতে হবে, যা পাওয়া খুব কঠিন কাজ নয়।

টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট (সাব-ক্লাস ৪৮৫)

কারো যদি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান স্টুডেন্ট ভিসা থাকে বা কমপক্ষে দুই বছরের মধ্যে লেখাপড়া শেষ করে থাকে, তাঁরা এই কোটায় আবেদন করতে পারবেন।

মোট দুই ধরনের হয়। গ্র্যাজুয়েট ওয়ার্ক স্টিম ও পোস্টগ্রাজুয়েট ওয়ার্ক স্টিম এবং ভিসার মেয়াদ ১৮ মাস থেকে চার বছর পর্যন্ত হতে পারে। পিআরের জন্য আবেদন করা যায়।

স্কিলড রিকগনাইজড গ্র্যাজুয়েট ভিসা (৪৭৬)

শুধু সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছেলেমেয়েরা এই কোটায় আবেদন করতে পারবেন। বয়স ৩১ বছরের মধ্যে হতে হবে। গত ২৪ মাসের মধ্যে পড়াশোনা শেষ করা থাকতে হবে এবং অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।

এমপ্লয়ার স্পন্সরশীপ    

অস্ট্রেলিয়ান কোনও চাকরিদাতা যদি আপনাকে স্পন্সর করতে ইচ্ছুক হয়, তবে আপনার ভাগ্য খুলে গেল। এটি জোগাড় করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। এখানে অনেক ধরনের ভিসা হয়। সঠিক ভিসা খুঁজে পাওয়ার ওপর সবকিছু নির্ভর করে।

কোন ধরনের ভিসার জন্য আপনি উপযুক্ত, তা সঠিক ও বিস্তারিতভাবে জানাটা সবচেয়ে জরুরি। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ভিসা (৪০৭)-অকুপেশনাল ট্রেইনি স্কিম

এ ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় এসে দুই বছর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে বসবাস ও পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে। মেয়াদ শেষ হলে আবারও নবায়ন করা যায়।

সাব-ক্লাস ৪০৭ প্রশিক্ষণ বা ট্রেনিং ভিসা

এ ভিসায় প্রশিক্ষণটি দুভাবে হতে পারে। সরাসরি একই পেশায় অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করার মাধ্যমে অথবা কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে। কার্যকরী ইংরেজি ভাষা দক্ষতা (আইইএলটিএসে ৪.৫) থাকতে হবে। ১৮ বছর বয়সী বা তার ঊর্ধ্বে হতে হবে।

এমপ্লয়ার নমিনেশন স্কিম (১৮৬)

স্থায়ীভাবে পরিবারসহ এ স্কিমে আবেদন করে বসবাস ও কাজ করা যায়। নাগরিকত্ব লাভ করা সম্ভব। অস্ট্রেলিয়ায় দুই বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।

রিজিওনাল স্পন্সরড মাইগ্রেশন স্কিম (১৮৭)

স্কিল অ্যাসেসমেন্টের প্রয়োজন হয় না। বয়স ৫০ বছরের নিচে হতে হবে। চাকরিদাতার দায়-দায়িত্ব এই ক্ষেত্রে কিছুটা কম। স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। রিজিওনাল এরিয়া থেকে জব অফারের প্রয়োজন হয়। পড়াশোনা করার সুযোগ পাওয়া যায়।

স্কিলড রিজিওনাল ভিসা (সাব-ক্লাস ৪৮৯)

রিজিওনাল এলাকায় দুই বছরের পড়াশোনার অভিজ্ঞতা। আইইএলটিএসে কমপক্ষে ০৬ স্কোর থাকতে হবে। পড়াশোনার পর রিজিওনাল এলাকায় এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা। চাকরিদাতার বর্তমান কাজের ঠিকানা, কাজের ধরন ও অভিজ্ঞতার বছর, পড়াশোনার যোগ্যতা, চাকরির ধরন ও বেতনের ওপর পুরো বিষয়টি নির্ভর করে।

অস্ট্রেলিয়া মাইগ্রেশনের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আপনার সন্তানরা প্রতি মাসে সোশ্যাল বেনিফিট পাওয়া শুরু করবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেশটির বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা পরিবারের সব সদস্যের জন্য।

সুতরাং আর দেরি না করে যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক নতুন সময়

Sharing is caring!

Leave a Comment