প্রোগ্রামিং দক্ষতা লাগে না যে সব চাকরিতে

প্রোগ্রামিং দক্ষতা লাগে না যে সব চাকরিতে

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

যে কোন কারণেই হোক, আপনি যদি প্রোগ্রামিং এর প্রতি আগ্রহী না হন বা মনে হয় এই সেক্টরে গিয়ে আপনি খুব ভাল কিছু করতে পারবেন না তাহলে হতাশ হয়ে যাবার কিছু নাই। ধরেই নিন প্রোগ্রামিং জিনিসটা আপনার সাথে ঠিক যায় না। বিরাট আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ধারণা প্রোগ্রামারের চেয়ে নন-প্রোগ্রামারদের সংখ্যাই বেশি। নিচের কোন একটা পজিশনের জন্য আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। অথবা গুগলে সার্চ করে এ বিষয়ে আরো তথ্য জানতে পারেন। অনার্স শেষ করার পর নিজেকে এই পজিশনে দাঁড় করাবেন না প্লিজ… যে, আপনি নিজেই জানেন না আপনি কী করতে চান বা আপনি নিজেই নিশ্চিত নন আপনার দক্ষতার ব্যাপারে।

Quality Assurance Engineer (QA Engineer) এর কাজ হচ্ছে ডেভেলপ করা সফটওয়্যার বা সিসটেমের quality check করা। বিভিন্ন টুলস বা মেথডের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরিক্ষা করা যে কোথাও কোন ত্রুটি রয়ে গেছে কিনা। QA হিসেবে যারা কাজ করেন তাদের সরাসরি কোড করতে হয় না বা প্রোগ্রামিং এর খুব বেশি গভীর জ্ঞান থাকাও জরুরি না। তবে কোম্পানি ভেদে হয়ত ভাল প্রোগ্রামিং জানাটাও একটা requirement হতে পারে। বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে কাজ করার অভিজ্ঞতাও চাওয়া হতে পারে। White box testing যেহেতু QA team এরই কাজ তাই প্রোগ্রামিং এর ব্যাসিক ধারণাটা অবশ্যই থাকা লাগবে।

UI/UX Designer এর চাহিদা সব ফার্মেই থাকে। UI ও UX ডিজাইন সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়। User Interface Designer যদিও কোড করেন তবে সেগুলো ঠিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ না বা এগুলো ডিজাইন করার জন্য problem solving skill প্রয়োজন হয় না। যেমন HTML, CSS, XML বিভিন্ন ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে কোন সফটওয়্যার/App/website এর Front end বা UI ডিজাইন করা। আর UX হচ্ছে আরো বিরাট একটা বিষয়। ইউএক্স ডিজাইনারের কাজ হচ্ছে পুরো সফটওয়্যারটা কিভাবে ডিজাইন করলে ইউজাররা সবচেয়ে বেশি কমফোর্ট ফিল করবেন সেটা ডিজাইন করা। ব্যবহারকারীদের বয়স, তাদের রুচি, তাদের পেশা ইত্যাদির কথা মাথায় রেখে ইউএক্স ডিজাইনাররাই সিদ্ধান্ত নিবেন কোন একটা এপের ব্যাকগ্রাউন্ড কালার কী হবে? বাটনগুলো কোথায় বসবে? বাটনের কালার কতটা লাইট বা ডিপ হবে ইত্যাদি। তো এই বিষয়ের জন্যেও প্রোগ্রামিং জানা থাকা প্রয়োজন নেই। তবে HTML, CSS, Photophop এই জিনিসগুলো জানা থাকা লাগে। আর ইউএক্সের উপর করতে হয় দীর্ঘ পড়াশোনা ও ব্যবহারিক গবেষণা।

Research Analyst হিসেবে কাজ করার জন্যও প্রোগ্রামিং দরকার হয় না। একজন রিসার্চ এনালিস্টের কাজ হচ্ছে কোম্পানি যে ধরণের কাজ করে সে সম্পর্কে বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহ ও এনালাইসিস করা। যেমন কোন একটা কোম্পানি একটা চ্যাটিং এপ বানাতে চাচ্ছে। তখন রিসার্চ এনালিস্টের কাজ হবে এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলোর উপর রিপোর্ট করা। এই ধরনের আর কী কী এপ আছে, সেগুলোর সুবিধা কী, অসুবিধা কী, মানুষ কেন সেগুলো ইউজ করে বা করে না, ওগুলোর রেভিনিউ মডেল কী? ইত্যাদি সকল তথ্য নিয়ে রিপোর্ট করা। এক কথায় বলতে গেলে এই পদের মানুষের কাজ হচ্ছে সারাদিন রীতি মত গুগল করা। আপনার যদি গুগল করতে মজা লাগে তাহলে এই জবের জন্য ফার্মগুলোতে এপ্লাই করতে পারেন।

Operation Executive নামের এই পদটির ব্যাপারে জানলাম এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে। তিনি টেলিকমুনিকেশন থেকে পাশ করে একটা নামী কোম্পানিতে উক্ত পদে চাকরি করছেন। তার কাজ হচ্ছে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ বুঝে ডেভেলপারদেরকে বুঝিয়ে দেয়া। আবার ডেভেলপারদের কাছ থেকে টাইম টু টাইম কাজগুলো বুঝে নিয়ে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভেরিফাই করে নেয়া। পুরোপুরি প্রোজেক্ট ম্যানেজার না। এটা প্রোজেক্ট ম্যানেজারের চেয়ে নিচের পজিশন। ক্লায়েন্টের সাথে ফোনে বা স্কাইপে মিটিং করা। বাজেটের ব্যাপারে কখনো সখনো নেগোসিয়েশন করা। দুই পক্ষের মধ্যকার চুক্তিপত্র প্রস্তুত করা ও সকল ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করা ইত্যাদি কাজকর্ম তাদের করতে হয়। এই পজিশনের জন্য কোন প্রোগ্রামিং নলেজ থাকা লাগে না। তবে কমুনিকেশন স্কিল হতে হয় দূর্দান্ত লেভেলের! আপনার বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতে কথা বলা আর লেখার দক্ষতা থাকলে আল্লাহ চাইলে দুনিয়ার যে কোন নন-টেকনিক্যাল কাজে আপনি ফিট হতে পারবেন।

IT Support Executive নামের একটা পজিশন প্রায় সব সফটওয়্যার ফার্মেই থাকে। বা একই কাজের জন্য ভিন্ন নামের পদও থাকতে পারে। ইনার কাজ হচ্ছে কোম্পানির ক্লায়েন্টদেরকে যে কোন সমস্যায় সাপোর্ট দেয়া। যেমন কোন ক্লায়েন্ট একটা সফটওয়্যার নিয়েছেন আপনার কোম্পানির থেকে, এখন কোন একটা অপশন খুঁজে পাচ্ছে না বা কোন একটা ফাংশন কাজ করছে না। তখন ফোনে, স্কাইপিতে বা Team viewer এর মাধ্যমে যেভাবেই হোক সেটা সমাধান করা। অথবা ক্লায়েন্টের প্রবলেমটা টুকে নিয়ে ডেভেলপার বা সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের কাছে পাঠানো। কোম্পানি ভেদে সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়াররাও কল সেন্টার বা হেল্প ডেস্কে বসতে পারেন।

Documentation Writer নামে কোন জব পোস্ট আছে কিনা নিশ্চিত না কিন্তু এই পোস্টের কাজ সব ফার্মেই আছে। কোন একটা সফটওয়্যার বা সিসটেম ডেভেলপ করা হলে এর ডকুমেন্টেশন বা ইউজার ম্যানুয়াল রেডি করতে হয়। এছাড়াও প্রোজেক্ট প্রোপজাল তৈরি করা, সেগুলো মেইল-টেইল করার কাজও ইনাদের করা লাগতে পারে।

IT Executive পদটি মাঝারি থেকে বড় প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেই থাকে। কোন একটা কোম্পানি যেখানে ৩০-৪০ টা কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এরকম যে কোন ধরণের প্রতিষ্ঠানেই আইটি এক্সিকিউটিভ প্রয়োজন হয়। এই চাকরির দায়িত্ব হচ্ছে কম্পিউটারগুলোর দেখা শোনা করা। সেগুলোর কোনটায় কোন রকম ঝামেলা হলে সেটা ঠিক করা। এগুলোকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা। কোম্পানির বিভিন্ন ডকুমেন্টসগুলো সফট কপি আকারে সংরক্ষণ করা। মোট কথা আইটি এক্সিকিউটিভ এমন একটা পদের নাম যে পদের মানুষটার কাজ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আইটি সাপোর্ট দেয়া। প্রতিষ্ঠান ভেদে এই চাকুরিরও দায়িত্ব কম-বেশি হয়। নেটওয়ার্কিং, অপারেটিং সিসটেম এই বিষয়গুলোর উপর দক্ষতা থাকতে হয়। তবে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই এই পদে চাকুরি শুরু করার পর গুতাগুতি করতে করতেই শেখা হয়।

DBA (Database Administrator) পদটি বেশ সম্মানজনক। আর এই পদের দায়-দায়িত্বও অনেক বেশি। ডেটাবেজ নিয়ে কাজ করার জন্য সরাসরি সেরকম প্রোগ্রামিং জ্ঞান প্রয়োজন হয় না। এই বিষয়ের উপর বিভিন্ন কোর্স করা যায়। Query language জানা থাকতে হয় খুব ভাল মত। সার্ভার সংক্রান্ত জ্ঞান যেমন পারফর্মেন্স ইস্যু বা ডেটাবেজে কিভাবে ডেটা থাকে ইত্যাদি বিষক জ্ঞান থাকতে হয়। বড় বড় সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণত ওরাকল ডেটাবেজ ব্যবহার করা হয়। ওরাকল জানা DBA এর বেশ ভাল চাহিদা রয়েছে।

Network Engineer এর কাজ হচ্ছে কোন একটা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দেখ ভাল করা। অবস্থা ভেদে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সার্ভার স্থাপন, কনফিগারেশন ইত্যাদির কাজও নেটওয়ার্জ ইঞ্জিনিয়ারের করা দরকার হয়। পুরো নেটওয়ার্কের সিকিউরিটি, ইফিসিয়েন্সি, ব্যান্ডউইথ ম্যানেজমেন্ট বিবিধ ব্যাপার নিশ্চিত করাও এই পদের লোকদের কাজ। নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার জন্য সাধারণ CCNA কোর্স করার প্রয়োজন হয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এ ব্যাপারে তেমন কিছুই জানি না। CCNA Vendor করা এক ছোট ভাই বলল নেটওয়ার্কিং লাইনে খুব ভাল কিছু করার জন্যেও প্রোগ্রামিং জানা দরকার।

Tech Writer হিসেবে কাজ করতে পারেন যদি আপনার লিখালিখি করতে ভাল লাগে। অসংখ্য পত্রিকা, ওয়েব পোর্টাল, ব্লগ বা টেকনোলজি সাইট রয়েছে। চাইলে নিজেই ব্লগ খুলে টেকনিক্যাল বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের ব্লগ লিখে আয় করতে পারেন যে কোন চাকরির চেয়ে বেশি। বাংলাদেশেও কয়েকটি প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল রয়েছে বা পত্রিকাগুলোতেও আইটি পাতা রয়েছে। এগুলোর জন্য লিখতে পারেন।

Telecommunication sector এর চাকুরি অনেকের কাছেই লোভনীয়। প্রোগ্রামিং জানা লোকজন যেমন দরকার, নন-প্রোগ্রামার কিন্তু আইটি সম্পর্কে, নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন লোকেরও দরকার। এর পাশাপাশি দেশে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ও মোবাইল কোম্পানি কাজ করছে। এসব কোম্পানিতেও EEE, CSE graduate-দের কদর রয়েছে।

Banking sector ব্যাংক সহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েট বা আইটির জনবল প্রয়োজন হয়। ব্যাংকের ডেটাবেজ রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য লোক দরকার হয়, ব্যাংকের নিজস্ব সিসটেমের সাপোর্ট দেয়ার জন্য লোক দরকার হয়, তাদের ওয়েব সাইট বা মোবাইল এপের দেখাশোনার জন্যেও লোকজন প্রয়োজন হয়। বর্তমানে সকল ব্যাংকই পুরোপুরি ভাবে সফটওয়্যার ও ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। তাই এখানে কী পরিমাণ আইটি স্পেশালিস্ট প্রয়োজন তা অনুমান করা যায়। যদিও অধিকাংশ ব্যাংকের সুদী লেনদেনের কারণে অনেকেই ব্যাংকিং সেক্টরটা এড়িয়ে চলেন।

আরো রয়েছে শিক্ষকতা, কোন প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট বিষয়ে ট্রেইনার হিসেবে কাজ করা, স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বা গবেষণার জন্য বিদেশে যাওয়া, ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সার হওয়া, টিম ফর্ম করে আইটি ফার্ম দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্র বিদ্যমান।

এগুলো ছাড়াও খুঁজলে হাজারটা চাকরির পদ পাওয়া যাবে।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment