সোনালির ২ কোটিও গেছে সুইফট কোডেই

সোনালির ২ কোটিও গেছে সুইফট কোডেই

  • নিউজ ডেস্ক :

২০১৩ সালে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের অর্থ লোপাটের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির যোগসূত্র রয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখছে  নিরাপত্তা বাহিনী। পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্থিক লেনদেনে বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফটের মাধ্যমে আড়াই লাখ ডলার ছাড়ের জন্য ভুয়া আবেদন সোনালী ব্যাংকে এসেছিল। বড় অর্থ জালিয়াতির এ ঘটনাটির এখনো কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বাইরে বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনাও হয়নি। বিষয়টি একেবারে থমকে গিয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে সুইফট কোড ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়ার পর পুনরায় ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।

সোনালী ব্যাংকের একটি সূত্র জানান, ২০১৩ সালে ওই অর্থ জালিয়াতির ঘটনার পর সে সময় সুইফটকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তুরস্কে চলে যাওয়া ওই অর্থ গ্রহীতার কাছ থেকে ফেরত পাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ব্যাংকটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সুইফটের অর্থ ছাড়ের পদ্ধতি ব্যবহার করে রিজার্ভ চুরির যে কৌশল দুর্বৃত্তরা গ্রহণ করে, সোনালী ব্যাংক জালিয়াতি ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এ দুটি বিষয়ে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা সেটা উদ্ঘাটনে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনর্তদন্ত করছে।

ব্যাংকের আইটি অংশের দায়িত্ব পালনকারী ওই কর্মকর্তা আরো জানান, পাসওয়ার্ড পেতে হ্যাকাররা সোনালী ব্যাংকের একটি কম্পিউটারে কে-লগার সফটওয়ার ইনস্টল করে। তারপর সুইফটের মাধ্যমে ভুয়া অর্থ ছাড়ের আবেদন পাঠায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ ছাড়ের পদক্ষেপ ও অনুমতিদানের দায়ে পুলিশ প্রথমে ব্যাংকের দুইজন কর্মকর্তাকে আটক করেছিল। তবে কোনো মামলা করা ছাড়াই পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত রয়টার্সকে জানান, জালিয়াতি চক্র এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে এবং কোনো অর্থও উদ্ধার করা এখনো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা কীভাবে ঘটেছে তার কারণও আমরা এখনো খুঁজে পাইনি।’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যার কারণে বিষয়টি আমাদের কাছে এসেছে। আমরা সেটা তদন্ত করব।’

বিশ্বের প্রায় ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনলাইন সুবিধা দেওয়া সুইফটের মুখপাত্র নাতাশা ডি তেরান সোনালী ব্যাংক জালিয়াতির বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এ রকম জালিয়াতির বিষয় অনুসন্ধানে সক্রিয়তার সঙ্গে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু কোনো একক বিষয়ে আমরা মতামত দেব না।’ সোনালী ব্যাংক জালিয়াতির বিষয়টি বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে। কিন্তু তাদের মতামত তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া যায়নি এল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের নিউইয়র্ক শাখায় রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়ে যায়। চুরি যাওয়া ওই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। আর ফিলিপাইনে চলে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের কিছু অর্থ ফেরত পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ অর্থের কোনো হদিস মিলছে না।

Sharing is caring!

Leave a Comment