স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা কমেছে ১০%

স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা কমেছে ১০%

  • অর্থ ও বাণিজ্য 

২০১৬ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা ১০ শতাংশ কমেছে বলে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) জানিয়েছে। খবর মেটাল ডটকম।

চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৯৯২ দশমিক ৮ টন। ২০১৫ সালের একই সময়ে যেখানে ১ হাজার ১০৪ দশমিক ৮ টন স্বর্ণের চাহিদা ছিল। ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ২০১৫ সালের একই সময়ের চেয়ে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা ১১২ টন কমেছে। এদিকে স্বর্ণে কৌশলগত বিনিয়োগ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছেন ব্যবসায়ীরা, যার ধারাবাহিকতায় পণ্যটির বিনিয়োগ চাহিদা ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৩৩৬ টনে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর স্বর্ণের বার ও কয়েন ব্যবহার কমেছে। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে স্বর্ণের বার ও কয়েনের মোট চাহিদা ছিল ১৯০ টন। ২০১৫ সালের একই সময়ের চেয়ে যা ৩৬ শতাংশ কম।

চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বর্ণের চাহিদা ছিল ৮২ টন। ২০১৫ সালের একই সময় যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পণ্যটির চাহিদা ছিল ১৬৮ টন। ২০১৬ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে মূল্যবান ধাতুটির মোট সরবরাহ ৪ শতাংশ কমে ৮৩২ টনে পৌঁছায়। আগের বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যেখানে সরবরাহ হয়েছিল ৮৬৬ টন স্বর্ণ।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে স্বর্ণের দাম রয়েছে বাড়তির দিকে। এ অবস্থায় ভোক্তাদের মধ্যে ব্যবহার করা জিনিসকে আবারো ব্যবহার উপযোগী করে তোলার প্রবণতা বাড়ছে। এ কারণে এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে পুনর্ব্যবহূত স্বর্ণের সরবরাহ দাঁড়িয়েছে ৩৪১ টনে, যা ২০১৫ সালের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। আর এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ভারতে। গত প্রান্তিকে ভারতে পুনর্ব্যবহূত স্বর্ণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯ টনে, যা ২০১২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের পর সর্বোচ্চ।

বেক্সিট, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট এবং আগামী বছর ফ্রান্স ও জার্মানিতে নির্বাচন ইত্যাদি ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। নেতিবাচক সুদহারের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক চাহিদা অব্যাহতভাবে বাড়ছে বলে ডব্লিউজিসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের প্রধান অ্যালিস্টেয়ার হিউইট মনে করছেন।

স্বর্ণের অন্যতম ভোক্তা দেশ ভারত। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটিতে ধাতুটির চাহিদা ছিল ১৯৫ টন। যেখানে গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭১ টন। সে হিসাবে, ২০১৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে তুলনায় এবার ভারতে স্বর্ণের চাহিদা কমেছে ২৮ শতাংশ।

ডব্লিউজিসি চলতি বছর ভারতে স্বর্ণের চাহিদা ৬৫০-৭০০ টনে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছে। যেখানে গত বছর এর চাহিদা ছিল ৭৫০-৮০০ টন। ২০১৬ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে ভারতে গহনা তৈরিতে স্বর্ণের চাহিদা ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫৫ টনে। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ভারতে স্বর্ণের দাম ২২ শতাংশ কমে প্রতি ১০ গ্রাম ২৮ হাজার ৭৩৪ রুপিতে লেনদেন হয়। উচ্চমূল্যের কারণে চাহিদায় মন্দাভাব বিরাজ করছে মূল্যবান ধাতুটির বাজারে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় মূল্যবান ধাতুটির বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জুনে ব্রিটেনে বেক্সিট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দরপতনে ছিল এর বাজার। নিউইয়র্কের কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (কোমেক্স) গত মঙ্গলবার স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৩৭ ডলার ৩৮ সেন্টে, যা জুনের পর সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি। অন্যদিকে লন্ডনের স্থানীয় সময় ৬টা ৫০ মিনিটে একই পরিমাণ পণ্য ১ হাজার ৩১৯ ডলার ৯৯ সেন্টে বিক্রি হয় বলে জানা গেছে।

নির্বাচনের আগে ২০ জনের বেশি বিশ্লেষক এবং ব্যবসায়ীদের ওপর জরিপের ভিত্তিতে ব্লুমবার্গ জানায়, যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হন, তাহলে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম বেড়ে ১ হাজার ৩৯৫ ডলারে পৌঁছবে। ভোটের আগে সিডনিভিত্তিক ফ্যাট প্রফিটসের বিশ্লেষক ডেভিড লেননাক্স নির্বাচনের আগে জানান, যদি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, তাহলে স্বর্ণের বাজারদর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা কিছুটা কঠিন হবে। তিনি দাম বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ১ হাজার ৩৪০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনার কথা জানান। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment