শিক্ষার্থীদের আকুতি

শিক্ষার্থীদের আকুতি

  • মারওয়া হক

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন দিক থেকে নানান প্রশ্ন উঠছে। পড়ালেখার ধরন, প্রশ্নপদ্ধতি, প্রশ্ন-ফাঁসসহ বিভিন্ন দিক উঠে আসছে আলোচনায়। গত ১৮ জুন দৈনিক ইত্তেফাকের মতামত বিভাগে প্রকাশিত একটি লেখায় (আনোয়ার জাহানের ‘শিক্ষার্থীদের দৈনিক রুটিন ও কিছু দীর্ঘশ্বাস’) চোখ আটকে গেল। পড়ে ফেললাম। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জীবনে কী প্রভাব ফেলছে তার একটি ছবি এই লেখা থেকে পাওয়া যায়। স্কুল-কোচিং আর প্রাইভেট শিক্ষকের পড়ার চাপে আমাদের শিক্ষার্থীদের সব সময় যেন হারিয়ে যাচ্ছে, চুরি হয়ে যাচ্ছে। দু-চোখ ভরে প্রকৃতি দেখা, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার সময় নেই এসব শিক্ষার্থীর। লেখাটি পড়তে পড়তেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ছে। এক ধরনের দায়বোধ থেকে সেই অভিজ্ঞতাগুলোর কিছু অংশ বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তির পর থেকে টিউশনি করছি বা ছাত্র পড়াচ্ছি। যে ক’জনকে পড়িয়েছি তাদের বেশিরভাগই ঢাকার স্বনামধন্য বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী। বাংলা কী ইংরেজি, যে মাধ্যমেরই হোক না কেন এদের প্রায় সকলের দৈনন্দিন রুটিনে অবসর বলে কিছু খেয়াল করিনি! নেই প্রকৃতির মাঝে বা গল্পের বইয়ে, রূপকথার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ। স্কুল, কোচিং আর প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়া শেষ করে রাতের শেষে ‘হোমওয়ার্ক’ বা বাড়ির কাজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাদের প্রতিটি দিন। অধিকাংশ সময় পড়াতে গিয়ে দেখতে হয় শিক্ষার্থী আতঙ্কিত মুখে অপেক্ষা করছে। আতঙ্কিত সে মুখের পেছনে ছিল বাড়ির কাজ করতে না পারা, ইচ্ছার অভাবে নয়, সময়ের অভাবে, অথবা ক্লান্তির কারণে হয়তো। (আতঙ্কিত শিক্ষার্থীকে বাড়ির কাজ না করতে পারায় কাঁদতেও দেখেছি!) কেবল একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন ছিল। শিক্ষকের মাইনে দিতে পারবে না বলে এই পরিবারের দুটি মেয়ে কেবল আমার কাছেই পড়ত। হয়তো তাদের খেলাধুলার সময় ছিল! তবে পড়ালেখার ক্ষেত্রে যে আতঙ্ক তা সবার মাঝেই কমবেশি লক্ষ করেছি, তা কখনোই আনন্দের বিষয় ছিল না।

পড়াতে গিয়ে একবার এক শিক্ষার্থীর ছবি আঁকবার হাত দেখে অবাক হই। অথচ স্কুলের ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় পর্যন্ত তাকে অংশ নিতে দেননি অভিভাবক (পড়াশোনায় ক্ষতি হবে বলে!)। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া সেই শিক্ষার্থী মন খারাপ করে বলেছিল যে সে আর কখনো ছবি আঁকবে না!

অমলকান্তির কথা কবিতায় কখনো পড়েনি এই শিক্ষার্থীদের কেউ। কিন্তু একদিন আনমনা হয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ওদের একজন বলছিল, ‘আমি যদি মেঘ হতে পারতাম!’ ‘কেন?’ জিজ্ঞাসা করলাম। ‘মেঘ কেন হতে চাও?’ ‘মেঘ হলে আকাশে ভেসে ভেসে বেড়াতাম। কোনো পড়ালেখা করতে হতো না। ভারী হয়ে গেলে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তাম।’ এ আকুতি আমাদের অভিভাবক আর শিক্ষাবিদদের কানে কখনো কি প্রবেশ করবে না?

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment