আরমানের উদ্যোগ

আরমানের উদ্যোগ

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

শখের বসে গ্রাফিক্স ডিজাইনার থেকে টি-শার্ট তৈরির উদ্যোক্তা বনে গেছেন আরমান। মার্কেটিংয়ের জন্য অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়াকে মানছেন মূল ভরসা। সাড়াও পেয়েছেন বেশ।


মাহাবুবুর রহমান আরমান। সিদ্ধেশরী ডিগ্রি কলেজে বিবিএ পড়ছেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট তরুণ এ উদ্যোক্তা ইন্টারনেট আর তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। মার্কেটিংয়ে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে গড়ে তুলছেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে। কাজ ও পড়াশোনার ফাঁকে ব্লগ ও সোশ্যাল মিডিয়াতে আড্ডা এবং লেখালেখি করতে ভালোবাসেন।

টি জোনের পরিকল্পনা
ঘটনাটা ২০১২ সালের। আরমানের হঠাৎ ইচ্ছা জাগে নিজের ডিজাইন করা টিশার্টগুলো প্রিন্ট করে পরার। কয়েকটা অনলাইন ব্র্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি। কিন্তু দরদামে মেলে না উভয় পক্ষের। পরে শখের বসে নিজেই কিছু শার্ট তৈরির উদ্যোগ নেন। শুরু হয় বাজার যাচাই।ছয় মাস যাচাইয়ের পর ওই বছরের শেষের দিকে নিজেই টিশার্ট ব্যবসা করবেন বলে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে ফেলেন।

শুরুর গল্প
ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত একা নিলেও শুরুর সময় আট বন্ধু রাজি হলেন একসঙ্গে কাজ করতে। সবাই মিলে শুরুটা করলেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা দিয়ে। নাম দেন ‘টি-জোন’। নিজেই ডিজাইন করতেন আরমান। ফেইসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হওয়া এক বড় ভাই বাড়িয়ে দিলেন সহায়তার হাত। একটি প্রিন্টিং এবং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন তিনি। নমুনা দেখে তাদের ভালো লাগে। শুরু হয়ে যায় প্রথম লটের টিশার্ট তৈরির কাজ।

এসেছে নানা প্রতিবন্ধকতা
শুরুটা নির্বিঘ্নে হলেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে বারবার প্রতিবন্ধকতায় পড়েছেন টি-জোনের নবীন উদ্যোক্তারা। ভুলে নষ্ট কাপড় কেনা, টিশার্ট চুরি হয়ে যাওয়া, সঠিকভাবে প্রিন্ট না হওয়ায় টিশার্ট বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় ভুগেছেন অনেক সময়ই। প্রথম দিকে সফলতা না আসায় অংশীদার বন্ধুরাও ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন। তবে এতেও দমে যাননি আরমান।

নতুন করে পথচলা
বন্ধুদের চলে যাওয়ার হতাশা কাটিয়ে আবার শুরু করেন নতুন উদ্যোমে। জোগাড় করেন বাড়তি মূলধন। সঙ্গে ছিল আরেক বন্ধু। পরে ইতালী থেকে আরও একজন যোগ দেন। বর্তমানে মোট তিনজন পার্টনার ও একজন বিনিয়োগকারী রয়েছেন টি জোনের সঙ্গে।

প্রথমদিকে ব্যবসা পুরোপুরি ফেইসবুক আর অনলাইন নির্ভর ছিল। ফ্যাশন সচেতন সৌখিন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে প্রচারণা চালাতে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকের কল্যাণে প্রচার বেড়েছে তাদের বলে জানান আরমান।

এরপর ২-৩টি আঞ্চলিক মেলা করার পর হঠাৎ বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক-বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনীর হাসানের সহযোগিতায় ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০১২’তে অংশ নেয় ‘টি-জোন’। আরমানের মতে এটিই ছিল তাদের ব্যবসার টার্নিং পয়েন্ট। এরপর ই-বাণিজ্য মেলা, উদ্যোক্তা উৎসবে অংশ নিয়েও অনেক সাড়া পায় তারা।

প্রচারণার ক্ষেত্রে অনলাইনের পাশাপাশি লিফলেট ও ভিজিটিং কার্ড বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বেশ কিছু অনুষ্ঠানের স্পন্সর হিসেবে যোগ দেয় ‘টি-জোন’। তবে পুরাতন ক্রেতারা টি-জোনের এগিয়ে চলায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন আরমান।

বর্তমান অবস্থা
অনলাইনে বিক্রির পাশাপাশি কর্পোরেট অর্ডারও পাচ্ছে ‘টি-জোন’। আরমানের মতে, ‘ইদানীং কাজের চাপে অনেক সময় ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে।’ এখন গড়ে ভালো ডিজাইনের পণ্য হলে ১৫-৩০ দিনে ৩০০-৪০০ টিশার্ট কোনো ঝামেলা ছাড়াই বিক্রি হয়।

আগামীর পরিকল্পনা
বছর খানেকের মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন ও ইতালিতে শাখা খুলতে চায় টি-জোন। অনলাইনের মাধ্যমে এসব শাখা চালানোর কথা জানান আরমান। আন্তর্জাতিক বাজারে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে টি জোনকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তাদের।

নতুনদের জন্য পরামর্শ
নতুনদের উদ্দেশ্যে তরুণ উদ্যোক্তা আরমান বলেন, সবার আগে মাথায় রাখতে হবে অন্তরের টান শোনার বিষয়টি। যেটি করতে মন চায় এবং যেটি ভালো বোঝেন সেটাই করার চেষ্টা করতে হবে। সাথে থাকতে হবে সঠিক পরিকল্পনা। তাহলে সফলতা আসবে।

সূত্র: টেকশহর ডটকমদলে দলে কাজ

Sharing is caring!

Leave a Comment