ব্যবস্থাপনার চার অধ্যায়

ব্যবস্থাপনার চার অধ্যায়

মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা বা বশে আনা অনেক কঠিন, কেউই পুরোপুরি জানেনা কীভাবে এটা করতে হয়। সৌভাগ্যক্রমে, ‘ব্যব্যবস্থাপনা’ এসব কিছু শেখাতে পারে। নিম্নে সুব্যবস্থাপনার সহজ কিন্তু ফলপ্রসূ ৪টি কৌশল তুলে ধরা হলো।


১. যথার্থ লক্ষ্য নির্ধারণ

যে কোনো কাজের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরী। এটা কর্মীদের অগ্রাধিকারমূলক কাজ করতে এবং তাঁদের প্রচেষ্টায় আলো ছড়াতে সহায়তা করে। যখন সহকর্মীদের নিয়ে কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন, তখন নিশ্চিত করতে হবে তারা যেন উক্ত বিষয়ে যোগ্য হয়। নির্ধারণ করা লক্ষ্য অবশ্যই কর্মীদের নিকট অর্থপূর্ণ হতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাযথ সন্মানীর ব্যবস্থা থাকতে হবে। কর্মীদের ‘করণীয় বহি’ বা ‘টু-ডু-লিষ্টের’ উপরের দিকে লক্ষ্য অর্জনে করণীয় প্রতিটি পদক্ষেপ লিখে রাখতে হবে।

তেল ব্যবসায় কোটিপতি হওয়া এইচ এল হার্ন্টকে তাঁর সফলতার পেছনের কারণ নিয়ে আমরা একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা  করেছিলাম। জবাবে তিনি বাস্তব জীবনে সফলতার জন্য দুইটা প্রয়োজনীয় জিনিসের কথা বলেছিলেন। প্রথমটি হলো সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি কী করতে চান (অর্থৎ লক্ষ্য নির্ধারণ)। অধিকাংশ লোকেই যেটা ঠিকমতো বুঝতে পারে না। দ্বিতীয়টি হলো, আপনাকে সঠিকভাবে মূল্য নিরূপণ করতে হবে যে কতটুকু খরচ করার বিনিময়ে কতটা ফেরত পেতে পারেন এবং তারপর মূল্য পরিশোধের বিষয়টি সমাধান করতে হবে।

২. লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনা প্রণয়ন

সহকর্মীদের নিয়ে লক্ষ্য নির্ধারণের পর সকলে মিলে লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য অর্জনে, উক্ত কর্মীর কিছু কাজ সম্পাদনের জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়া দরকার। কর্মপরিকল্পনা ছাড়া কোনো লক্ষ্য অর্জন করা বাস্তবে সম্ভব নয় এটা শুধুই স্বপ্ন দেখার শামিল। অধিকাংশ লোকই বুঝতে পারে না যে কীভাবে বড় প্রকল্পকে ছোট করতে হয়, লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয় বা কার্য সম্পাদনে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হয়। একজন ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মীদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে আপনার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের প্রয়োগ করতে হবে। কর্মীরা যখন কর্মসম্পাদনে  প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নেবে তখন কাজের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারিখ ও নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারন করতে হবে। এগুলো সঠিক সময়ে কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকতা তৈরি করবে।

প্রতি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে ও নির্দিষ্ট সময়ে সাপ্তাহিক সভার আয়োজন করতে পারেন তাহলে সকলের কাজের হালনাগাদ তথ্য জানতে পারবেন এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সকলের প্রতি কাজ সম্পাদনের  একটা নিদিষ্ট সময়সীমা বর্তাবে। কমপক্ষে পনের মিনিট ও সর্বাধিক এক ঘন্টার সভায় তিনটা ভাগে বিভক্ত করতে হবে। প্রথম ভাগে কর্মীদের কাজের প্রতিবেদন জমা দান। দ্বিতীয় ভাগে, কর্মীদের প্রতিক্রিয়া শোনা, সমস্যা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং তাঁদের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করা যাতে তাঁরা কাজের প্রতি মনোসংযোগ ধরে রাখতে পারে। তৃতীয় বা শেষ ভাগে নির্ধারিত কাজ শেষ করতে নতুন কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন, তারিখ ও সময় নির্ধারণ করা।

৩. কর্মীদের ক্ষমতা প্রদান

সম্ভাবনার সর্বোচ্চটা কাজে লাগাতে কর্মীদের ক্ষমতা প্রদান করুন। এর তিনটি অর্থ হতে পারে প্রথমত, লক্ষ্য অর্জনে করণীয় সকল কাজের উপর কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিন। নতুন দক্ষতা অর্জনে কর্মীদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে যাতে তারা নিপূণভাবে কাজ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, তাঁদের উৎসাহিত করতে হবে। সফলতার জন্য পুরষ্কার দিন। এর ফলে ব্যর্থতা সুনির্দিষ্ট হবে।তৃতীয়ত, রাস্তার ব্যারিকেড অপসারণ করা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে, কর্মীদের কাজের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি এবং তথ্য দরকার তা যেন পর্যাপ্ত থাকে। ব্যরিকেড অপসারণেও ফলপ্রসূ নীতি ও পদ্ধতি অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।

৪. কাজের মূল্যায়ন ও সমন্বয় সাধন

উপরোক্ত তিন ধাপ শেষ হলে, কাজের মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা বাৎসরিক কাজের মূলায়নের কথা বলছি না। সাধারণত বার্ষিক ভিত্তিতে আমরা কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করে থাকি, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন বছরের বিভিন্ন সময়ে ধারাবাহিকভাবে করতে হবে।

কর্মীদের জন্য যারা প্রতিষ্ঠানে নতুন এসেছেন বা নতুন কাজ শিখছেন, তাঁদের কাজের মূল্যায়ন প্রতিদিনই করতে হতে পারে এমনকি দিনে একাধিক বার। নিজের আসন ছেড়ে একটু ঘুরে আসুন যেখানে আপনার কর্মীরা কর্মরত রয়েছে। কথা বলার জন্য তাঁদের একটু থামান এবং প্রশ্ন করুন। যদি তাঁরা উপস্থিত থাকে এবং আগ্রহ থাকে।  যে সকল কর্মীরা আসলেই যোগ্য তাঁদের সঠিক পথে রাখতে সপ্তাহে একদিন সভা বা মিটিং করা দরকার। কিন্তু তাঁদের নিয়ন্ত্রণ ও কাজের মন্তব্য করতে আপনাকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে কর্মী ও প্রতিষ্ঠান উভয়ই লাভবান হতে পারে।

10710782_556986277781464_6733632065388686560_nডাগ ও পলি হোয়াইট : ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিশেষজ্ঞ। প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা, হোয়াইটস্টোন পার্টনার্স।
অনুবাদ : শিমি আক্তার
সূত্র : এন্টারপ্রেইনার ডটকম।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment