এখন বড় খামারের স্বপ্ন দেখছেন মুক্তি রানী

এখন বড় খামারের স্বপ্ন দেখছেন মুক্তি রানী

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

বগুড়ার মুক্তি রানী ও বিপেন চন্দ্র মদক দম্পতির পাঁচ বছর আগেও ছিল অভাব-অনটনের সংসার। জমি বর্গাচাষ করেই চলত পরিবারের খরচ। সামান্য এই আয় দিয়ে দিন কেটেছে খুব দুঃখ-কষ্টে। তবে দিন পাল্টাতে শুরু করে পাঁচ বছর আগে ১৩ হাজার টাকার আলু বিক্রি করে একটি বকনা বাছুর কেনার পর থেকে। ওই বছরে ২৮ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করে কেনেন একটি গাভী। এ দুটি থেকে তার গরুর সংখ্যা হয় ২৪টি। এর পর ১২টি গরু বিক্রি করে ১২ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। এখন তার আছে ১২টি গরু। বর্তমানে পাঁচটি গাভী থেকে গড়ে ৪০ লিটার দুধ বিক্রি করছেন। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে তার আয় হচ্ছে ৩০ হাজার টাকার মতো। গাভী পালনের আয়ের টাকা দিয়ে তার স্বামী বিপেন চন্দ্র পুরাতন মোটরসাইকেল কেনাবেচার ব্যবসা করছেন। তার সংগ্রহে রয়েছে চারটি মোটরসাইকেল। এ ব্যবসা থেকে আয়ও হচ্ছে বেশি। অসহায় এ পরিবারের এখন বেশ ভালোভাবে কাটছে দিন। এখন একটি বড় খামার করার স্বপ্ন দেখছেন মুক্তি রানী।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বড় নারায়ণপুর গ্রামের একটি পরিবারের সচ্ছলতার গল্প এটি। মুক্তি রানীর মতো এ গ্রামে আরও একশ’ পরিবারে এভাবেই গাভী পালনে সচ্ছলতা ফিরেছে। গত পাঁচ বছরে এ গ্রামের অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা এনেছে পারিবারিক দুগ্ধ খামার। এ গ্রামের নারীরা ঘরের কাজের পাশাপাশি উন্নতজাতের গাভী পালনে হাসি ফুটিয়েছেন পরিবারের মুখে।

শুধু বড় নারায়ণপুর নয়, উত্তরাঞ্চলের নয় জেলার বিভিন্ন গ্রামে একইভাবে দু-একটি গাভী পালন শুরু করে এখন ছোট-বড় খামার গড়ে তুলেছে ৫২ হাজার পরিবার। তারা এ খামারের মাধ্যমে হয়েছেন স্বাবলম্বী। এসব পরিবারের নারীরাই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে গাভী পালনে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশের ‘স্ট্রেনদেনিং দ্য ডেইরি ভ্যালু চেইন (এসডিসিভি)’ প্রকল্পের মাধ্যমে তারা পারিবারিক গাভী পালনে যুক্ত হয়েছেন। আর ব্র্যাকের আড়ং দুধের ৫৫ শতাংশ জোগান দিয়ে যাচ্ছে এসব পারিবারিক খামার। ব্র্যাক ছাড়াও প্রাণ ও আকিজের মতো বড় ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত দুধের জোগান আসছে এসব খামার থেকে। এমনটিই জানালেন প্রকল্পের দলনেতা মোস্তফা নূরুল ইসলাম রেজা।

বড় নারায়ণপুর ঘুরে কথা হয় গৃহিণী ও খামার উদ্যোক্তা শাপলা রানী সাহার সঙ্গে। শাপলা পাঁচ বছর আগে দুটি বকনা বাছুর দিয়ে শুরু করেন গরু পালন। ১৬ হাজার টাকায় কেনা দুটি শংকর জাতের গরু থেকে আজ তার গরুর সংখ্যা ১১। এর মধ্যে চারটি গরু থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩৫ কেজি দুধ পান তিনি। প্রতি মাসে তার আয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ১০টি গরু বিক্রি করে আয় করেছেন সাত লাখ টাকা। শাপলার স্বামী সুব্রত কুমার সাহা অন্য ব্যবসা করতেন। বর্তমানে তিনিও গরু লালন-পালনের কাজ করছেন।

শাপলা জানান, পরিবারের রান্নার জ্বালানির পুরোটাই আসে এখন গরুর গোবর দিয়ে চলা বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে। এই প্ল্যান্টের উচ্ছিষ্ট গোবর জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। প্রতি ভ্যান গোবর বিক্রি থেকে আসে ২০০ টাকা। তিনি বলেন, গ্রামে কেয়ারের প্রকল্প আসার পর উন্নত জাতের গুরু পালনে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। ব্র্যাকের উন্নত জাতের গরুর সিমেন ব্যবহার করে ভালো জাতের গরু পাচ্ছেন তারা।

কেয়ারের তথ্য অনুযায়ী, এসডিসিভি প্রকল্পের পর খামারিদের আয় বেড়েছে ১৬৪ শতাংশ। দুধের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। পাশাপাশি তাদের পারিবারিকভাবে দুগ্ধপানের মাত্রা বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এ প্রকল্পের দলনেতা রেজা জানান, কেয়ার গাভী পালনে দুই পর্যায়ে ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্প গ্রহণ করেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নয় জেলায় প্রায় ৫২ হাজার দরিদ্র ও প্রান্তিক দুগ্ধ উৎপাদনকারীকে নিয়ে কাজ করেছে। প্রকল্পটি খামারিদের দুধের উৎপাদন ও গুণগত মান বৃদ্ধি, উপকরণ ও সেবাপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, স্বচ্ছ ও স্থায়িত্বশীল বাজারে দুধ বাজারজাতকরণ, নীতি উন্নয়ন ও ডেইরি হাব কার্যক্রমের বাস্তবায়নে কাজ করেছে।

রেজা বলেন, ব্র্যাক ডেইরির মাধ্যমে প্রকল্পটি দেশে প্রথম গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে আলাদাভাবে দুধের ননী পরীক্ষা করে মূল্য নির্ধারণ করছে। প্রকল্প এলাকায় কমিউনিটি পর্যায়ে ৬৫ কৃষিউৎস নামে দোকান স্থাপনের মাধ্যমে গুণগতমানের উপকরণ গোখাদ্য ও ওষুধ খামারিদের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রাণী স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে ২৭০ জন দক্ষ প্রাণী স্বাস্থ্যকর্মী ও ৯৯ কৃত্রিম প্রজনন কর্মী তৈরি করা হয়েছে।

এতে গরুর রোগের প্রাদুর্ভাব কমেছে এবং জাত উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত হয়েছে।

সূত্র: সমকালfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment