সাইকেলে কুরিয়ার সেবা

সাইকেলে কুরিয়ার সেবা

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

ছেলেবেলার দিনগুলোর কথা মনে আছে? একটি  সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাওয়া বা বাড়ি ব্যাগটা রেখেই কিছু মুখে গুঁজে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে পড়া? শহরে যারা বড় হয়েছেন তাদের কাছে হয়তো মফস্বলের ছেলেমেয়েদের মতো সাইকেল ছিল না, তবে কখনো যদি সাইকেল ঘণ্টা শোনা যেত তবে জানালা বা বারান্দা নিয়ে আগ্রহ ভরে উঁকি দেওয়ার অভ্যাস ছিল নিশ্চয়ই?

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনার সে অভ্যাস থাকুক বা না থাকুক এবার থেকে কিন্তু সে অভ্যাসের চর্চা হয়ে যাবে। সাইকেল আরোহী কিছু মানুষ আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস কুরিয়ারের কাজ করবে। বাসা থেকে নিয়ে যাবে, আর পৌঁছে দেবে গন্তব্যে! যত দ্রুত সম্ভব। সার্ভিসের নাম “মেঘস্বর কুরিয়ার সার্ভিস”

সাতজনের একটি দল আছে মেঘস্বরের। মেঘস্বর নিয়ে এর পার্টনার জুন্নুনুর রহমান বলেন, কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ে ভাবনার শুরুটা আসলে হয়েছে দুই-দিক থেকে। প্রথমত অনলাইনে ‘মেয়ে’ নেটওয়ার্কের যে ব্যবসায়িক প্রচেষ্টা ‘হুটহাট’ রয়েছে, সেখানকার সদস্য হওয়ায় প্রায়ই চোখে পড়ত উদ্যোক্তাদের দুঃখ করে বলা কথা। তারা প্রোডাক্ট তৈরি করছেন, প্রোডাক্ট বিক্রিও করছেন, কিন্তু বিশ্বস্ত এবং দায়িত্বশীল কোনও কুরিয়ারের অভাবে ঠিকভাবে ডেলিভারি করতে পারছেন না। এছাড়াও  দুই ছোট ভাই এবং বন্ধু ফরিদ উদ্দিন আকবর আর কুদরত-ই-খুদা বরাত এর একটা পেজ আছে ‘অর্ডার ফর মি’, তাদেরকেও দেখতাম যে কুরিয়ারের সার্ভিস নিত তাদের সাথে নিত্য কিছু না কিছু নিয়ে ঝামেলা হতেই থাকতো।”

একদিন আমার পার্টনার ফয়েজ আহাম্মেদ বুদ্ধি দিল যে তার পরিচিত দুটো ছেলে আছে তাদের সাইকেল কিনে দিয়ে নিজেরাই একটা কুরিয়ার সার্ভিস খুলে! ‘মেঘস্বর কুরিয়ার সার্ভিস’ হিসেবেই এটার আত্মপ্রকাশ ঘটল।’

ফয়েজ বলেন, মেঘস্বর নিয়ে আসলে অনেক পরিকল্পনা আছে। সেসব পরিকল্পনাই আমাদের সামনে যেতে আগ্রহ যোগাচ্ছে। আপাতত আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, সেবার মান বাড়ানো। এখন কুরিয়ারের পণ্যটি আগের দিন আমাদের অফিসে পৌঁছে, আমরা পরেরদিন সঠিক জায়গায় তা পৌঁছে দেই। আমাদের স্বপ্ন, ঠিক স্বপ্নও বলা যাচ্ছে না, আশা হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যেই আমরা প্রতিদিনের পণ্য দিনেরটা দিনেই পৌঁছে দিতে পারবো। এতে যেমন গ্রাহক, ক্রেতার সুবিধার হবে, আমরা নিজেরাও তাদের পাশে থাকতে পেরে আনন্দিত হবো। এর বাইরে আশা আছে প্রতিটি অনলাইন ব্যবসায়ী আমাদের সাথে সহজেই কাজ করতে পারবেন। যার যখন যেখানে দরকার, আমাদের সাথে যোগাযোগ করলেই আমরা থাকবো পাশে। সবার আশা পূরণই আমাদের পরিকল্পনা।

জুন্নুনুর রহমানের পড়াশোনা জন্ম শহর বগুড়াতেই। ২০১৪ সালে সরাসরি পর্যটন সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্ত হয়। বর্তমানে পর্যটন প্রতিষ্ঠান ‘ইয়োর ট্রিপ মেট লিমিটেড’ এর উদ্যোগ ‘অফরোড বাংলাদেশ’ এর হেড অফ অপারেশন হিসেবে কর্মরত।

কম্পিউটারের কাজের প্রতি আগ্রহ থেকেই কাজ শিখেছিলেন। করেছেন অনেকদিনও। ইচ্ছা ছিল একদিন চাকরি না করে নিজে কিছু করবে। একটা ট্রেড লাইসেন্স ও করে রেখেছিলেন। এমনকি ২০১৫ এর মার্চ পর্যন্ত ‘মেঘস্বর’ এর ব্যানারে কিছু আইটি রিলেটেড কাজ ছাড়া আর কিছুই করা হয়ে উঠেনি। এরপর ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে মেঘস্বর কুরিয়ার সার্ভিসের কাজ শুরু!

অনেকেরই ধারণা যে কোনও ব্যবসাতেই প্রচুর মূলধন লাগে। অথচ মূলধনের ব্যাপারে জুন্নুনুর রহমান বললেন, “আসলে এটা একটু আপেক্ষিক ব্যপার। যদি কেউ প্রফেশনালি অফিস নিয়ে, একসাথে অনেক লোকবল নিয়ে শুরু করতে চায় তাহলে খরচটা বেশ ভালোই হবে। আমরা আসলে অনেকটা ঝোঁকের বশেই শুরু করেছিলাম। ক্লায়েন্ট লেভেল যেমন শুধু মাত্র ওই হুটহাট গ্রুপ আর বন্ধু বা পরিচিতদের  কয়েকজনেই সীমাবদ্ধ ছিল, তেমনি শুরুতে মাত্র দুইজন আর ফয়েজ নিজে এই তিনজন ডেলিভারির কাজ করত। ফয়েজের সাইকেল ছিলই, আর দুইটা সাইকেল কিনতে হয়েছে, দুইটা মাঝারি সাইজের ব্যাকপ্যাক। এই ছিল মূলধন।“

আপাতত মেঘস্বর কুরিয়ারের কাজের পরিধি একটু ছোট। যেহেতু তারা পুরো কাজটা সাইকেলে করে তাই ঢাকা মানে বুড়িগঙ্গা থেকে তুরাগ পর্যন্ত এলাকাটাই আপাতত তাদের কাজের যায়গা। অনেক সময় ঢাকার বাইরে থেকেও কাজের অর্ডার আসে। সে ক্ষেত্রে লোক বাড়ানো বা কাজের জায়গাটা একটু বড় করার ব্যাপারে জুন্নুনুর রহমান বলেন, “ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও আমরা আমাদের টিম বড় করে সার্ভিস আরও গতিশীল করতে পারছি না। কারন বিশ্বস্ত ডেলিভারি ম্যানের অভাব। পরিচিতর বাইরে যদি লোক নেয়া হয় তবে যে রিস্কটা থেকে যায় তা আমাদের মত ছোটপুঁজির স্টার্টআপের জন্য বেশ বড়। এই ধরনের কুরিয়ার সার্ভিস আমরা প্রথম বা শেষ নই। বেশ অনেকগুলো কুরিয়ার সার্ভিস দেখেছি আমরা ডেলিভারি ম্যান চুরি করে পালানোয় বন্ধই হয়ে গেছে।“

সাধারণত মেঘস্বর কুরিয়ার সার্ভিস দুই দিনের মধ্যে কুরিয়ার করে দেয়। এতো গেল ভালো ভালো কথা। কিন্তু কাজ করতে গেলে সমস্যা তো কিছু হবেই! কুরিয়ার সার্ভিসের সমস্যা সম্পর্কে জুন্নুনুর রহমান বলেন, “অনেক সময় রাস্তার কারণে, সাইকেলে সমস্যার কারণে, বৃষ্টির জন্য দেরি হয়ে যায় যেতে। আমরা জানি সবার সময়ের মূল্য আছে, একটা প্রোডাক্টের জন্য কেউ অতটা সময় অপেক্ষা করবেন না; কিন্তু দেরি যে ইচ্ছে করে করা হয় না, এইটা অনেকেই বুঝতে চান না।”

তবে সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে আপনার প্রয়োজন মেটাবে মেঘস্বর টিম।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউনfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment