দুই উদ্যোক্তার পথচলা

দুই উদ্যোক্তার পথচলা

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

জায়গাটি ৯০ বর্গফুটের বেশি হবে না। পেছনের দিকে তাকে পোশাক থরে থরে গুছিয়ে রাখা। এর সামনে একটি কাউন্টার। এতে একটি কম্পিউটার রাখা। আর সামনের দিকে দুই পাশের স্ট্যান্ডে হ্যাঙ্গারে পোশাক ঝুলিয়ে রাখা। এক পাশের দেয়ালেও পোশাক ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার হাভেলি কমপ্লেক্সে ঢুকে অনেকটা ভেতরের দিকে গেলে দেখা মেলে ‘ক্যারিড অ্যাওয়ে’ নামে তরুণীদের রেডিমেড পোশাকের এই আউটলেট।

তবে পরিসর কম হলেও এটিকে ঘিরে অনেক বড় স্বপ্নের কথা জানালেন এর কর্ণধার তোহফাতুল জান্নাত ঈপ্সা। ২০১১ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে কিছুদিন পরই বুঝতে পেরেছিলেন, গৎবাঁধা চাকরি তাঁর পোষাবে না। নিজে কিছু করতে চাওয়ার ইচ্ছে থেকে চাকরিটা ছেড়ে দেন। শুরুতে ‘ক্যারিড অ্যাওয়ে’ নাম দিয়েই অনলাইনে পোশাক ও ইমিটেশনের গয়না বিক্রি শুরু করেন। ভাবলেন, এভাবে শুধু অনলাইনে বিক্রি শুরু করলে স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। তাগিদ অনুভব করলেন একটি আউটলেটের।

তোহফাতুল জান্নাত তাঁর স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘অনেক ঘুরে কমপ্লেক্সের অনেক ভেতরের দিকে ছোট্ট এই জায়গাটি পেয়েছি। মাত্র একজন কর্মী নিয়ে রাত-দিন খেটে এটিকে নিয়েই এগোনোর চেষ্টা করছি। এখানে শুধু মেয়েদের পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক রয়েছে। অনেক ক্রেতার সঙ্গেই আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে। দাম অনেক কম হওয়ায় তাঁরা নামী আউটলেটে না গিয়ে আমার এখান থেকে জিনস, লেগিংস, ফোর কোয়ার্টার প্যান্ট, ট্যাং টপ, অফ শোল্ডার টপ, কোল্ড শোল্ডার টপ, পালাজ্জো, শ্রাগ, ক্যাপ, বিভিন্ন কাটের শার্ট, টি-শার্ট কিনে নিচ্ছেন। স্বপ্নটা আসলেই অনেক বড়। এখনকার খ্যাতনামা অনেক পোশাকের প্রতিষ্ঠানও অনেক ছোট পরিসর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। আমার প্রতিষ্ঠানও একসময় সেই পর্যায়ে যাবে—এমন স্বপ্ন দেখি। সে লক্ষ্যে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা করা ১১ জনের সঙ্গে বনানীতে ব্লক ডির ১৩ নম্বর সড়কে ৯৪ নম্বর বাসার একটি ফ্লোর শেয়ার করে আরেকটি আউটলেট চালু করতে যাচ্ছি।’

এ ব্যবসার চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘পণ্য সংগ্রহ করা এখানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গার্মেন্টস খাতে এখন আগের চেয়ে কম পণ্য পাওয়া যায়। সেই সব পণ্য থেকে আবার ট্রেন্ডি পোশাক বাছাই করতে হয়। দেখা যায়, অনেকগুলো কোনো কাজেই লাগে না। ক্রেতারা পছন্দ করেন না। এর ওপর আবার মূল্য নির্ধারণও একটি বিষয়। কিশোরী-তরুণী, বিশেষ করে ছাত্রীদের টার্গেট করে আমরা ব্যবসা করছি বলে দাম নাগালের মধ্যে রাখতে হয়। অনেক কম দামে আমরা পোশাক দিচ্ছি। ১৬০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে ট্রেন্ডি পোশাক বিক্রি করছি আমরা।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা আরেক তরুণ ফজলে রাব্বিও চাকরি ছেড়ে ছোট্ট পরিসরে খুলেছেন একটি ক্যাফে। মাত্র চারজন কর্মী তাঁর ক্যাফেতে কাজ করেন। বনানী সুপার মার্কেটের নিচতলায় ১০০ বর্গফুটের আয়তনে ‘লাঞ্চবক্স’-এর ৪০ শতাংশজুড়ে কিচেন। বাকি ৬০ শতাংশে খাবার পরিবেশনের জায়গা রাখা হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে মূলত আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘লাঞ্চবক্স’-এ এসে দুপুরের খাবার খান। ওয়ান টাইম বক্সে ভাত, ডাল, সবজি, মুরগি, গরুর মাংস, ডিম ও খিচুড়ি প্যাকেজ হিসেবে বিক্রি করা হয়। ক্রেতারা ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে পছন্দমতো প্যাকেজ বেছে নেন।

রাব্বি বলেন, ‘বনানীর একটি প্রতিষ্ঠানে আমি চাকরি করতাম। সে সময় আমি দেখেছিলাম, অভিজাত এলাকা হওয়ায় এখানের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মী ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কম টাকায় খাবার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে হালকা কিছু খেয়ে নেন। সেটা দেখে তাদের মানসম্মত খাবার দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ছোট্ট পরিসরে এই ক্যাফে চালু করি। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০০ জন দুপুরের খাবার কেনেন। ক্রেতাদের ৮০ শতাংশই কর্মী।’

রাব্বি আরও বলেন, ‘বড় বড় রেস্টুরেন্টে ভারত থেকে শেফ এনে বিদেশি খাবার তৈরি করা হয়। অথচ এর চেয়ে অনেক কম খরচে দেশি খাবার তৈরি ও বিক্রি করা যায়। আমি সেটাই করছি। স্বপ্ন আছে এ ব্যবসার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা, যাতে একসময় আমার এখান থেকেই ক্রেতারা ফুড ভেন্ডিং যন্ত্রের মাধ্যমে পছন্দের খাবার কিনে নিতে পারেন।’ তিনি বলেন, চাকরির চেয়ে ব্যবসা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। শিক্ষিত তরুণদের ব্যবসায় উৎসাহিত করতে শুরুর দিকে অন্তত দুই বছর ভ্যাটের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলে ভালো হয়।

সূত্র : প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment