কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা

  • মোহাম্মদ ফয়সাল

ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড, এ পাঁচটি দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা এলেই কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চলে আসে সবার আগে। বিশ্বের সব কটি র‌্যাঙ্কিং সংস্থার জরিপে নরডিক অঞ্চলের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ অনেক বছর ধরে কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটির নাম শীর্ষে অবস্থান করছে।

উত্তর ইউরোপের সেরা ও সবচেয়ে প্রাচীন এ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা ১৪৭৯ সালে। এ পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ ও মেডিসিন বিভাগ ৮টি নোবেল পুরস্কার লাভের অসামান্য গৌরব অর্জন করেছে। বর্তমানে কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটির ৬টি ফ্যাকাল্টি এবং ১০০টি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ও গবেষণা সেন্টারে প্রায় ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছেন। যার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। প্রায় ৫ হাজারের বেশি। এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসংস্থান করেছে প্রায় ৭ হাজার দেশি-বিদেশি শিক্ষক, গবেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ।

সঠিক তথ্য ও প্রচারের অভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে হাতেগোনা মাত্র দু-চারজন মেধাবী শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। যদিও বিভিন্ন বিভাগে প্রতি বছরই কেউ না কেউ আসেন পিএইচডি করতে। এ অঞ্চলের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশি ছেলেমেয়েদের কাছে এ বিশ্ববিদ্যালয় একেবারে অপরিচিত। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটির সম্পর্কে বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী ছেলেমেয়েদের একটা সঠিক ধারণা দেওয়া। পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে যেন অধিকসংখ্যক বাংলাদেশি স্টুডেন্ট উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারেন সে সুযোগ করে দেওয়ায় ছোট্ট প্রয়াস।

প্রচারের অভাব কিংবা অন্য কোনো কারণেই হোক না কেন, ইউরোপের অন্যান্য নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ডেনমার্কের সেরা ইউনিভার্সিটিগুলোতে বাংলাদেশ থেকে মেধাবী ছেলেমেয়েদের উপস্থিতি খুবই কম। এ দেশের বিভিন্ন কলেজে যারাও পড়তে আসেন তাদের অধিকাংশকেই পড়াশোনা না করে পোল্যান্ড, ফ্রান্স, পর্তুগাল বা ইতালি ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার মাঝপথেই পালিয়ে যেতে দেখা যায়। বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের পড়াশোনা না করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার কারণে সব সময় স্থানীয় কলেজগুলোতে বাংলাদেশি স্টুডেন্ট সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে দেখা যায়। যা হোক, আসল প্রসঙ্গে ফিরে আসি, বলছিলাম কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা সম্পর্কে।

বাংলাদেশি মেধাবী ছেলেমেয়েদের জন্য কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি হতে পারে একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স, কলা, আইন, সোশ্যাল সায়েন্স, সায়েন্স ও ধর্ম অনুষদের আওতায় অসংখ্য বিষয়ে এখানে মাস্টার্স ও পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। তবে বিখ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বা ব্যাচেলর লেভেলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার কোনো সুযোগ নেই।

ভর্তির যোগ্যতা

কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি ইউরোপের সেরা এবং এলিট ইউনিভার্সিটিগুলোর একটি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে যা দরকার:
—টোফেল বা আইইএলটিএস স্কোরের (ন্যূনতম ৬.৫)।
—ভালো একাডেমিক গ্রেড।
—মোটিভেশন লেটার।
—স্ট্যান্ডার্ড সিভি।
—রেফারেন্স লেটার।
—আবেদন ফি ১০০ ইউরো।
বি. দ্র. কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন ইংলিশ, পলিটিক্যাল সায়েন্স, সোসিওলজি, ইসলামের ইতিহাস/স্টাডিজ, ইকোনমিকস, ল, ম্যাথমেটিকস, পরিসংখ্যান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে আইইএলটিএস স্কোরের ৬.০ দিয়েও ভর্তি সম্ভব।

একাডেমিক সেশন ভর্তির ডেড লাইন

মূলত নরডিক অঞ্চলে একটাই একাডেমিক সেশন থাকে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর ছাড়া জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সেশনে হাতেগোনা ন্যূনতম কিছু প্রোগ্রাম অফার করে থাকলেও এ অঞ্চলে সেশন একটাই অর্থাৎ আগস্ট-সেপ্টেম্বর সেশন। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বর থেকে এবং আবেদনের শেষ তারিখ জানুয়ারির ১৫ তারিখ।

বাৎসরিক টিউশন ফি

৭ হাজার ইউরো থেকে ১২ হাজার ইউরো পর্যন্ত। বিশেষত আর্টস ও সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের আওতাধীন প্রোগ্রামের টিউশন ফি সবচেয়ে কম হলেও সায়েন্স বিভাগের টিউশন ফি সবচেয়ে বেশি ধার্য করা হয়।

স্কলারশিপ

ডেনমার্কে প্রতিটি কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে ডেনিশ সরকারি স্কলারশিপ। বাংলাদেশের প্রতিটি ছেলেমেয়ে আবেদন করতে পারেন এ স্কলারশিপের জন্য। যোগ্য শিক্ষার্থীরা পাবেন প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার ইউরোর সমপরিমাণ আর্থিক অনুদান ও বিনা-বেতনে পড়াশোনার সুযোগ।

পার্টটাইম জব সুবিধা

ডেনমার্কে পড়ুয়া ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস চলাকালে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পেলেও জুন-জুলাই এবং আগস্ট মাসে অর্থাৎ গ্রীষ্মের ছুটিতে ফুলটাইম কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

সুবিধাসমূহ

স্টাবলিশমেন্ট কার্ড (মাস্টার্স শেষ করে ২ বছরের ওয়ার্ক পারমিট)।
কোপেনহেগেনে কাজের সুযোগ-সুবিধার পরিধি অন্যান্য শহরের চেয়ে অনেক বেশি।
ঘণ্টা প্রতি উচ্চ পেমেন্ট রেট।
ডেনমার্ককে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় মাইগ্রেশনের সুযোগ।

অসুবিধাসমূহ

মারাত্মক আবাসন সংকট।
সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর (সিপিআর) বিড়ম্বনা।
পড়াশোনা শেষে প্রফেশনাল জব সংকট।
ভাষাগত সমস্যা।
পারমানেন্ট বা স্থায়ী হিসেবে বসবাসের সুযোগ হ্রাস।

কাজ করে কি টিউশন ফি কভার করা সম্ভব?

এটি সবচেয়ে কমন প্রশ্ন এবং শুধুমাত্র এ প্রশ্নটি নিয়ে বিস্তারিত অন্য কোনো সময় লিখব ইনশা আল্লাহ। তবে সংক্ষেপে বলা যায়, ডেনমার্কে পড়াশোনার পাশাপাশি জব করে টিউশন ফি তোলা অসম্ভব না হলেও আমার মতে বেশ দুরূহ কাজ।

স্টাডি ইন ডেনমার্ক সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ হোমপেজ

স্টাডি ইন ডেনমার্ক: <www.studyindenmark.dk/>
কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি: <www.ku.dk/english/>
কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি ফেসবুক পেজ: <www.facebook.com/universitet>
ডেনিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিস: <www.nyidanmark.dk/en-US/>
বাংলাদেশে অবস্থিত ডেনমার্কে দূতাবাস: <www.bangladesh.um.dk/>

আপনি কি ডেনমার্ক তথা উত্তর ইউরোপের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী? আপনি ওপরে দেওয়া ইউনিভার্সিটি হোম পেজ, অফিশিয়াল ফেসবুক ইত্যাদির সহায়তা নিতে পারেন এবং নিজে নিজে ভর্তির চেষ্টা করতে পারেন কোনো ঝামেলা ছাড়া। আমরা সবাই চাই, বাংলাদেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা ডেনমার্কসহ এ অঞ্চলের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ লাভ করুক এবং এ শিক্ষা লাভ শেষে নিজ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাক।

*মোহাম্মদ ফয়সাল, কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক। ইমেইল: mfa@dgca.dk

সূত্র: প্রথম আলোfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment