বছরে আয় বাড়বে দেড় হাজার কোটি টাকা

বছরে আয় বাড়বে দেড় হাজার কোটি টাকা

  • নিউজ ডেস্ক

সমুদ্রসীমা বেড়ে যাওয়ায় শুধু বিদেশী এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ওভারফ্লাইং নেভিগেশন ফি আয় করতে পারবে সরকার। আর সিভিল এভিয়েশনের আয় বাড়বে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান রাডার সিস্টেম বর্ধিত সমুদ্রসীমার ওপর দিয়ে যেসব এয়ারক্রাফট যাচ্ছে সেগুলো ধরতে পারছে না। এ কারণে এসব এয়ারক্রাফটের ওপর কোনো চার্জও ধরা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বর্তমান আকাশসীমার মধ্যেও অনেক এয়ারক্রাফটের অবস্থান ধরা যাচ্ছে না বর্তমান রাডার দিয়ে।

জানা গেছে, বর্তমানে শুধু ওভারফ্লাইং খাত থেকে বছরে ৮শ’ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা আয় করছে সরকার। নতুন সমুদ্রসীমা কার্যকর হলে শুধু এ খাতের আয় বেড়ে দাঁড়াবে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় দ্রুত দেশের বর্ধিত সমুদ্রসীমার ওপর দিয়ে যাওয়া বিদেশী উড়োজাহাজের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এ জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার প্রতিস্থাপনসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের একটি ধারণাপত্র তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রোববার পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। রোববার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ওই কার্যবিবরণী পাঠানো হয়। এতে নতুন করে পাওয়া দেশের সমুদ্রসীমার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এ ছাড়া আরও ৯টি সিদ্ধান্ত আছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন) উইং কমান্ডার জিয়া উল কবীর বলেন, বর্তমান রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার সিস্টেম দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় এটি দিয়ে সব এয়ারলাইন্সের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন সমুদ্রসীমায় কোনো এয়ারক্রাফট এলেও এই রাডার সেটা ধরতে পারে না। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে পিপিপির (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এর আওতায় চট্টগ্রামে ভার্চুয়াল রাডার (এডিএসবি এক্সচেঞ্জ বা অটোমেটিক ডিপেন্ডেন্ট সারভাইলেন্স) তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। নতুন রাডার প্রতিস্থাপনসংক্রান্ত ফাইলটিও শিগগির ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হবে। এটা হয়ে গেলে নতুন সমুদ্রসীমার ওপর দিয়ে যে কোনো এয়ারক্রাফট প্রবেশ করলেই বাংলাদেশ তার ওপর চার্জ আরোপ করতে পারবে। তিনি বলেন, এতে সিভিল এভিয়েশনের আয় আরও ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়বে।

নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের (পিসিএ) রায়ে বাংলাদেশ ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক সীমা পেয়েছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ নতুন যে অংশ পেয়েছে ওই এলাকা দিয়েই বিশ্বের অধিকাংশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সীমানার ওপর দিয়ে দিনে ৪শ’ বিদেশী ফ্লাইট আসা-যাওয়া করছে। ভারতের কাছ থেকে নতুন অংশ পাওয়ায় এ ফ্লাইট সংখ্যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হবে। এতদিন ভারত ওইসব ফ্লাইটের কাছ থেকে ওভারফ্লাইয়িং ফি আদায় করেছে।

নতুন পাওয়া সমুদ্রসীমা নিয়ে সিদ্ধান্তের মধ্যে আরও আছে- জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ অর্জিত সমুদ্রসীমায় প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ সম্পর্কিত ব্লক অনুসন্ধান ও ইজারা দেয়ার কাজ দ্রুত সম্পাদনে পদক্ষেপ নেবে। সমুদ্রসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা সংস্থাসমূহ সমন্বিত পদক্ষেপ নেবে। এ বিষয়ে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানাবে।

অনুসন্ধানী জাহাজ ক্রয় অথবা ভাড়া করার বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে জরুরি পদক্ষেপ নেবে। অর্জিত সমুদ্রসীমায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ আহরণের লক্ষ্যে অনুসন্ধানী জাহাজ ক্রয় বা ভাড়া করার বিষয়ে বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাসমূহের নিরূপিত চাহিদা অনুযায়ী সমুদ্রসম্পদের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির লক্ষ্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

নদ-নদীর মোহনা ও সমুদ্র বক্ষে ভূমি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নিরূপণপূর্বক আগামী ৩০ দিনের মধ্যে একটি ধারণাপত্র প্রস্তুত করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে।

জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনের জন্য ভূমি নির্বাচনপূর্বক শিল্প মন্ত্রণালয় জরুরি পদক্ষেপ নেবে। তা আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে হবে।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নদীবন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চালু করার বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনকল্পে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জরুরি পদক্ষেপ নেবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে হবে।

সমুদ্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত নতুন বিভাগ সৃষ্টি, শিক্ষক ও প্রশিক্ষক তৈরির জন্য বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, গত ৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগমের সভাপতিত্বে সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা (ব্লু ইকোনমি) বিষয়ে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ব্ল– ইকোনমি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দিকনির্দেশনার আলোকে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে জরুরি কিছু সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, কর্মকর্তাদের সময় ও কষ্ট লাঘবে সভাটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। সচিবালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেখানকার এবং আশপাশের দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় চারজন সচিবসহ ৩৩ জন কর্মকর্তা যোগ দেন।

জানা গেছে, বিরোধ নিষ্পত্তির আগে বাংলাদেশ অংশের ১০টি তেল-গ্যাস ব্লকের মালিকানা দাবি ছিল ভারতের। তবে রায়ের মধ্য দিয়ে এ দশটি ব্লকই বাংলাদেশ পেয়েছে। তবে ১০টি ব্লকের ০১, ০৫, ০৯, ১৪, ১৯ এবং ২৪ নম্বর ব্লকের অংশবিশেষ পেয়েছে ভারত। এ রায়ের মাধ্যমে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও খণিজসম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বাংলাদেশের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ রায়ের ফলে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল বিরোধপূর্ণ আনুমানিক ২৫,৬০২ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার মধ্যে ১৯,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশকে প্রদান করেছেন।

সূত্র: যুগান্তরfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment