তরমুজের পুষ্টিগুণ

তরমুজের পুষ্টিগুণ

  • শিমি আক্তার

গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে আমাদের কাছে তরমুজের অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রায় ৯২ ভাগ পানি ও চিনিযুক্ত রসালো মিষ্টি এই ফল গরমে যেমন আমাদের তৃষ্ণা মেটায় তেমনি তৃপ্তিকর ও সুস্বাদু খাবারও বটে। পাশাপাশি তরমুজে রয়েছে প্রচুর ঔষধী গুণ। 

এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত তরমুজ গ্রহণ করলে শরীরের অতিরিক্ত স্থূলতার ঝুঁকি কমে এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে । এছাড়াও ডায়াবেটিস, হার্ট, চুল ও ত্বকের সমস্যার জন্যও তরমুজ অনেক উপকারী। 


তরমুজের প্রকারভেদ 

বাজারে আমরা সাধারণত ৫ ধরনের তরমুজ দেখতে পাই যেমন- বিচিযুক্ত তরমুজ, বিচিহীন তরমুজ, মিনি তরমুজ, হলুদ তরমুজ ও কমলা তরমুজ।

তরমুজের খাদ্য উপাদান melon

ন্যাশনাল ওয়াটারমেলন প্রমোশন বোর্ড (জাতীয় তরমুজ উন্নয়ন বোর্ড) এর তথ্য মতে, তরমুজে প্রচুর পরিমাণ লাইকোপেন রয়েছে যা বাজারে প্রাপ্য যেকোনো ফল বা সবজির চেয়ে অনেক বেশি। এককাপ বা প্রায় ১৫২ গ্রাম পরিমাণ তরমুজে রয়েছে ৪৩ ক্যালরী, ০ ফ্যাট, ২ মিলি সোডিয়াম, ১১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (৯ গ্রাম চিনিসহ) এবং ১ গ্রাম ফাইবার। তরমুজে ১৭% ভিটামিন এ, ২১% ভিটামিন সি, ২% আয়রন, এবং ১% ক্যালসিয়াম রয়েছে যা শরীরিকভাবে সুস্থ্য থাকার জন্য প্রতিদিন দরকারি। তরমুজে আরও রয়েছে থিয়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নায়াসিন, ভিটামিন বি-৬, ফোলেট, প্যানথোনিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাংগানিজ, সেলেনিয়াম, কোলাইন, লাইকোপেন এবং বিটেইন।

তরমুজের উপকারীতা : 

 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ 

আমেরিকান র্জানাল অব হাইপারটেনশনের এক গবেষণা শেষে জানা যায়, তরমুজের নির্যাসে এক ধরনের ঔষধী উপাদান রয়েছে যা এ্যাংকেল ব্লাড প্রেসার, ব্রেশিয়াল ব্লাড প্রেসার কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপের পূর্বে মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালণ বৃদ্ধি করে মধ্য বয়সী ভীষণ মোটা লোকদের জন্য কার্যকরী ভুমিকা রাখে।

হার্টের সমস্যা

তরমুজে থাকা ’অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপেন’ হার্টের জন্য উপকারী। সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে ’লাইকোপেন’ কার্ডিওভ্যাসকুলার হেলথ-এর জন্য অত্যন্ত গুর“ত্বপূর্ণ  খাদ্য উপাদান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ’লাইকোপেন’ রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে ক্ষতিকারক কোলেস্টরেল ও এলডিএল এর পরিমান কমিয়ে দিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সাহায়তা করে।

এ্যাজমা প্রতিরোধ

ভিটামিন সি এ্যাজমার ঝুঁকি কমায়। তরমুজে রয়েছে ২১% ’ভিটামিন সি’ ফলে এ্যাজমার রোগীদের জন্য তরমুজ বেশ উপকারী।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

অনেক গবেষণায় দেখা যায়, তরমুজে থাকা ’লাইকোপেন’ প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া এর নির্যাসে থাকা ’অ্যান্টি অক্সিডেন্ট’ ও ’ভিটামিন সি’ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে।

ক্রনিক প্রদাহ WAATLEMOEN

তরমুজের ’কোলাইন’ খুবই গুর“ত্বপূর্ণ ও বহুবিধ পুষ্টিকর পদার্থ যা ঘুম হতে সহায়তা করে, মাসল সক্রিয় রাখে। এছাড়া এটি সেলুলার মেমব্রেন এর গঠন ঠিক রাখে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, শরীরের ফ্যাট কমায় এবং ক্রনিক প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ রাখে।

ত্বকের সমস্যা

তরমুজ ত্বকের সমস্যার জন্য বেশ ভালো  কারণ এতে ’ভিটামিন এ’ রয়েছে যা বিভিন্ন প্রকিয়ার মাধ্যমে ত্বক ও চুলের ময়েশ্চারাইজ ধরে রাখে। ’ভিটামিন এ’ টিস্যূর প্রবৃদ্ধি ঠিক রেখে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। তরমুজে থাকা ’ভিটামিন সি’ ত্বকের গঠন স্বাভাবিক রাখে ফলে ত্বক ও চুলকে হাইড্রেট দেখায়।

মাংশপেশির প্রদাহ

আরেক গবেষনায় বলা হয় যে, তরমুজের জুসে ’এ্যামিনে এসিড এল-সিটর“লাইন’ রয়েছে যা  মাংসপেশির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

পানিশুণ্যতা দূর

তরমুজের প্রায় ৯২ শতাংশ পানি ও গুর“ত্বপূর্ণ ’ইলেকট্রোলিটসে’ ভরা। তাই এটি গরমে শরীরের পানি শুণ্যতা দূর করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে  

তরমুজের পানি ও আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।

শারিরিক ব্যায়াম, ক্লান্তিকর কোন কাজের পর বা গরমের সময় তরমুজের সাথে কয়েক টুকরো বরফ, হালকা চিনি ও সামান্য পরিমান বিট লবন মিশিয়ে ব্লেন্ডারে জুস করে খেয়ে নিন শরীরের পানিশুণ্যতা দূর হবে ও সতেজতা ফিরে আসবে।

  • মেডিকেলনিউজটুডেডটকম অবলম্বনে। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment