খাইদাই… মনের অসুখ সারাই

খাইদাই… মনের অসুখ সারাই

সাবরিনা তাবাসসুম : শুধু শারীরিক সুস্থতা মানেই কি সুস্থতা ? না। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা বজায় রাখাটাও জরুরি। আমাদের আশেপাশে প্রতিদিনই এমন অনেকের দেখা পাই যাদের মধ্যে কেউ হতাশায় জর্জরিত, কেউবা নিদ্রাহীনতায় ভুগছে, কেউ একটুতেই মেজাজ গরম করে ফেলছে বা সহজে কিছু মনে রাখতে পারছে না। বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে, আমাদের খাদ্যাভাসের ভুলের কারণে প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। তাছাড়া বাইরের ভেজাল মেশানো খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য অনেকটা ঝুঁকির মধ্যেই থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন আনলে মানসিক সুস্থতা বজায় থাকবে। আসুন আজ জেনে নিই সেই খাবার গুলো সম্পর্কে:


১. তেলযুক্ত মাছ

তেলযুক্ত বিভিন্ন মাছে এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড থাকে যা মানসিক সুস্থতার জন্য খুব উপকারী। এর নাম ডোকোসাহেক্সিনইক এ্যাসিড (DHA)। এটি স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করে। এমনকি আলজাইমার্স–এক ধরনের স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এমন রোগের প্রকোপ কমাতে ও এই এ্যাসিড সাহায্য করে।

২. টমেটো

টমেটোয় রয়েছে লাইকোপিন নামক এক ধরনের এ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ১০ গ্রাম টমেটোর মধ্যে আপনি অন্তত ৪ মিলিগ্রাম লাইকোপিন পাবেন, যা আপনার মস্তিষ্কের কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। তবে শুধু এক দিনেই তা হবে না। নিয়মিত টমেটো পেস্ট বানিয়ে সেটা খেতে থাকুন অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি।

৩. স্ট্রবেরি

স্ট্রবেরিতে রয়েছে পলিফিনোলস এবং ফ্লেভোনয়েডস যেগুলো আমাদের দেহে প্রস্তুত হওয়া টক্সিনকে মস্তিষ্কের কোনো ক্ষতি করা থেকে বিরত রাখে।

৪. ব্রকোলি

ব্রকোলি মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন কে এবং ফলিক এ্যাসিড। ব্রকোলি দিয়ে সালাদ তৈরি করে নিন এবং প্রচুর পরিমাণে খেতে থাকুন। শরীর এবং মন দুটোই ভালো থাকবে।

৫. কলা

ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হলেও এটা সত্যি যে কলা আপনার মনের অস্থিরতা দূর করতে সাহায্য করবে। কলায় রয়েছে পটাসিয়াম এবং ট্রিপ্টোফেন। এটি মনকে শান্ত রাখতে, প্রফুল্ল রাখতে এবং কোনকিছুর প্রতি মনোযোগী হতে নিয়মিত কলা খেতে থাকুন।

৬. কুমড়ার বীচি

দুশ্চিন্তা আমাদের অনেক ক্ষতি করে থাকে। দুশ্চিন্তার ফলে অনেকে নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। অনেকে দুশ্চিন্তার কারণে কোনো কিছুতে মনোযোগী হতে পারেন না। এক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করবে কুমড়ার বীচি। আপনার দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি এলডিএল কলেস্টেরলও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। কুমড়ার বীচিতে রয়েছে নায়াসিন যা আমাদের মস্তিষ্কের গ্যাবা এক্টিভিটিকে ত্বরান্বিত করে এই এলডিএল কলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে। ফলে দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা কমে আসে।

৭. পানি

মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং মস্তিষ্কের কার্যাবলী ঠিক মতো যেন চলতে থাকে তার জন্য পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী। আপনার দেহের পানি-শূন্যতা আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলে। এমনকি কোনো ছোটখাট সমস্যা সমাধান করতে গিয়েও আপনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে পারেন শুধুমাত্র পানি-শূন্যতার কারণে। পানির অভাবে শরীরে টক্সিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় যা একজন মানুষকে গভীরভাবে কোনকিছু চিন্তা করতে বাধা দেয়।

৮. নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ

বিষণ্ণতা থেকে রক্ষা পেতে সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ করুন। যারা সকাল বেলা তাড়াহুড়া করে বের হয়ে যান কিছু না খেয়ে তাদের দুর্বলতা এবং বিষন্নতায় ভোগার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।কারণ না খাওয়ার ফলে ব্লাডসুগার কমে যায় এবং ফলাফল হিসেবে তাদের দুর্বলতা তাদেরকে বিষন্নতার দিকে ঠেলে দিবে। সকাল ১১ টার দিকে খালি পেটে না থেকে এক মুঠ কাঠ বাদাম খেতে পারেন। যা আপনাকে দিবে প্রচুর কর্মশক্তি। কর্মশক্তি বৃদ্ধি পেলে মানসিক দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।

মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি যেন না হয় সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য আপনার শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই মন ভালো রাখতে, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে নিয়মিত সঠিক সময়ে এই খাবার গুলো খেতে থাকুন।

Sharing is caring!

Leave a Comment