মনের বন্ধু পোষা প্রাণি

মনের বন্ধু পোষা প্রাণি

  • শিমি আক্তার

যখন আমার অনুভুতি কমে যায় ও আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি, এবং আমি বিরক্তভাবে শুয়ে পড়ে নিজেকে তুলে ধরি পালিত প্রাণীটির দিকে, আমার পোশা কুকুরটি আমার কাছে এসে আমাকে উদ্ধার করে। সে আমার কোলে উঠে বুকের সাথে মিশে থাকে, তারপর আমাকে পুনরায় সক্রিয় হতে, পোশাক পরিধান করতে এবং বাইরে গিয়ে একটু হাঁটতে বা খেলা করতে উদ্ধুদ্ধ করে। যে কোনোভাবে সে আমাকে একটু হাসাতে চেষ্টা করে আমি যতই দুর্দশাগ্রস্থ বা হতাশা বোধ করি না কেন।

এখন আর আমি একা নই। সব পোশা প্রাণীই আপনার মন, শরীর এবং কর্মদ্দ্যোম বাড়িয়ে দেয়।  কেন তারা আপনার মানসিক চাপকে দূরে ঠেলে আপনার মনে প্রফুল্লতা এনে দেবে, এখানে তার একডজন কারণ উল্লেখ করা হলো।


১. তারা আপনাকে বাইরে নিয়ে যাবে

সুর্যের আলো ও সতেজ বায়ু আপনার মেজাজকে পরিবর্তন করবে এবং সুর্যের আলো আপনাকে অতিরিক্ত মাত্রার ভিটামিন ডি দেবে যা অবসাদ, ক্যান্সার, স্থুলতা এবং হৃদরোগসহ আপনার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতি সাধন করবে। আবার যখন তাকে সাথে নিয়ে বাইরে যাবেন আপনি প্রকৃতির সাথে যুক্ত থাকবেন। এক মুহূর্তের জন্য হলেও গাছ-পালার মর্মর শব্দ শোনার চেষ্টা করেন, কীভাবে প্রবাহিত বাতাস আপনাকে প্রশান্তি দিচ্ছে, সুর্য আপনার দিকে চেয়ে আছে সেগুলো অনুভব করার চেষ্টা করেন। প্রকৃতির শব্দ ও অনুভুতি আপনার মনকে শান্ত করে তুলবে।

২. তারা আপনাকে সচল রাখবে

আপনার পোশা প্রাণীটির সাথে বাইরে গিয়ে প্রকৃতির সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে আপনি  শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন, আপনার মাংশপেশী ও হাঁড় শক্ত হবে যা শুধু আপনার শরীরকেই ভালো রাখতে সাহায্য করবে তা নয়,  আপনার নিজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জন্মাবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহপালিত প্রাণীর মালিক, বয়স্ক বা শিশু উভয়েরই কম রক্তচাপ থাকে এবং কোলেস্টেরল  ও ট্রিগলাইসারিডিসও কম থাকে, যার ফলে তাঁরা অধিক সক্রিয় জীবনযাপনের গুণাবলীর অংশীদার হয়। উক্ত মালিকগণ আরো লক্ষ্য করে থাকেন যে তাঁদের রক্তের প্রবাহ তুলনামূলক ভালো থাকে এবং তাঁদের প্রধান কার্ডিয়াক ইস্যূ কম ঝুঁকিপূর্ণ হয়। যখন আপনার শরীর প্রফুল্ল­ মনে হয় তখন মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলোও কম ঝুঁকিতে থাকে।

৩. পোষ্য প্রাণী রোগ ব্যাধি থেকে নিরাপত্তা দেয়

যদিও এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে, কিন্তু গবেষণায় জানা যায়, যে সকল শিশুরা এসব প্রাণীদের সাথে বেড়ে ওঠে প্রকৃতপক্ষে ঐ সকল শিশুদের অন্যান্য শিশুর তুলনায় সাধারণ এলার্জি, এ্যাজমা কম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়।

৪. মানসিক চাপ কমায়

আপনার পোষা প্রাণীর মাথা, কান, পিঠ বা লোম ধরে যদি একটু আদর করেন দেখবেন তারাও  একধরণের আনন্দের মাধ্যমে সাড়া দিচ্ছে যেমন মাথা নাড়াচ্ছে, শরীর বাঁকাচ্ছে, লেজ নাড়াচ্ছে বা ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে ইত্যাদি। এসব দেখে অবশ্যই ভালো লাগবে একই সাথে আপনার মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা দুর হবে, ব্লাড প্রেসার ও করটিসল লেভেল কমবে।

৫. ভিন্নমুখী মনোযোগ থেকে ফিরিয়ে আনবে

আপনার পালিত প্রাণীটির সামনে থাকলে বা তাদের সাথে কোন কিছুতে ব্যস্ত হলে আপনার বাজে চিন্তা দূর হবে। কিছু সময় তাঁদের একটু ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন তাহলে দেখবেন আপনার মনের অন্যমনষ্কতা দুর হয়ে কাজের প্রতি মনোযোগ ফিরে আসবে।

2013-04-30-DSC_7698loH৬. নিঃসঙ্গতা কমাবে

আপনি যদি একাকী বা নিঃসঙ্গ সময় কাটাতে না চান পোষা প্রাণীটি হতে পারে আপনার বড় সঙ্গী। যেসময় আপনার খারপ অনুভূতি কাজ করছে হয়তো তখনই লোমওয়ালা বন্ধুটি দৌড়ে আপনার কাছে চলে আসতে পারে এবং আপনার একাকীত্ব ভেঙ্গে দিয়ে আপনকে সতেজ করে তুলতে পারে। তবে তার আগে অবশ্যই উক্ত প্রাণীটির প্রতি আপনার অগাধ স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. বড় শ্রোতা

তাদের সাথে আপনার দিনটি নিয়ে, আপনার আশা নিয়ে বা স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে পারেন বা আপনার মনে জমে থাকা কষ্ট নিয়েও কথা বলতে পারেন যা আপনি অন্যের সাথে বলতে পারবেন না। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা আপনার স্বপ্ন পূরণে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করতে না পারলেও মানুষের মতো ক্ষতি করবে না। আপনি যা বলবেন চুপচাপ সেটাই মেনে নেবে।

৮. নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসবে

আপনি যখন দরজার পাশে হাঁটা চলা করছেন, আপনাকে দেখার পর আপনাকে নিয়ে তাদের প্রবল আগ্রহ দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মনের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে আপনি মানসিকভাবে  চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। তাদের লেজ ও জ্বিহবা বের করে নড়াচড়া বা মুখের ভঙ্গি ও কানা নাড়ানো ইত্যাদি দেখলে আপনার মুখে হাসি আসবেই। সে আপনার কাজের ক্লান্তি বা মানসিক চাপ কোন কিছুকেই পরোয়া করবে না। সে আপনার চতুর্র্র্দিকে ঘুরতে, আপনাকে ভালোবাসতে এবং আপনাকে সুখি দেখতে চাইবে।

৯. আপনার বিচ্ছন্নতা কমাতে

আপনি হয়তো অনেক সময় অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে রেখেছেন ঠিক সেইসময় সে চাইবে একটু বাইরে বা পার্কে গিয়ে হাঁটাহাটি করতে এবং আপনার সাথে খেলতে। আপনি তাকে নিয়ে গেলে হয়তো দেখবেন আপনার প্রতিবেশি অনেকের সাথেই দেখা হলো, কথা হলো ফলে তাঁদের সাথে বিচ্ছিন্নতা আপনার কেটে যাবে।

১০. উদ্দেশ্য কাজে দিতে পারে

পোষা প্রাণীকে ভালোবাসলে উদ্দেশ্যের অনুভুতি দিতে পারে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যখন আপনি প্রকৃতপক্ষেই বাজে অনুভুতি ও চিন্তার মধ্যে থাকেন। আপনার ভালো কাজে উক্ত প্রাণীটি ভালো সাড়া দেবে যা আপনার তাৎক্ষণিক অনুভুতিকে নাড়া দেবে ও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জণে সহায়ক হবে।

১১. আপনার মুখে হাসি ফোটাবে

সে যখন ভালো কিছু করবে যেমন রোলিং অথবা পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে থাকা ইত্যাদি যা দেখলে আপনার হাসি আসবেই। আর এই হাসি আপনার শরীরের সেরোটোনিন ও ডোপামাইনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে আপনার মস্তিষ্ক শান্ত ও সুখি রাখবে।

১২. মজার খেলা

আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে, বিভিন্ন কারণে আমরা ভুলে যাই যে, আমাদের মাঝে মাঝে একটু হাসি, ঠাট্টা বা মজা করার প্রয়োজনীয়তার কথা। আপনি যখন এমন কাউকে কাছে পাচ্ছেন না যার সাথে একটু হাসি, ঠাট্টা বা মজা করবেন ঠিক তখন আপনার পোষ্য বন্ধুটিকে নিয়ে একটু রেসলিং বা কুস্তি খেলতে পারেন, বল দিয়ে ক্যাচ ধরা বা একত্রে একটু নাচতে পারেন অথবা সামান্য একটু দৌড়ান দেখবেন আপনার মনও প্রফুল্ল হয়ে উঠবে একই সাথে এসবের জন্য আপনার লোমওয়ালা বন্ধুটির নিকট আপনার বিশ্বস্ততা ও ভালোবাসা বেড়ে যাবে।

সুতরাং আপনার এই পোষ্য বন্ধুদের সাথে বল খেলার মধ্য দিয়ে বা অন্যভাবে একটু মজা করেন, উভয়েরই আনন্দে সময় অতিবাহিত হবে। যদি আপনার এমন কোন বন্ধু না থাকে তাহলে এখনই তার ব্যবস্থা করতে হবে তা নয়, এর বাইরেও অনেক প্রাণী রয়েছে যাদেরকে আপনি চাইলে ভালোবাসতে পারেন, তাহলে তাদের পাশাপাশি আপনিও উপকৃত হবেন।

হাফিংটনপোষ্ট অবলম্বনেfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment