বাড়িই যখন অফিস!

বাড়িই যখন অফিস!

মারুফ ইসলাম: সময়ের হাত ধরে অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। বদলের হাওয়া এসে লেগেছে কর্মক্ষেত্রেও। এমন অনেকেই আছেন যাদের কর্মক্ষেতে গিয়ে অফিস করা খুবই কষ্টসাধ্য। যেমন কর্মজীবী নারী মিলির (ছদ্ম নাম) কথাই ধরা যাক। তিনি নিজের সন্তানকে সময় দেওয়ার পর আর বাইরে কাজ করার জন্য সময় করতে পারছেন না। তাই নিজের বাড়িতেই অফিস করেন। এরকম অনেকেই ছোটখাটো ব্যবসা অথবা ইন্টারনেটে বসে অনলাইনে চাকরি করেন।

আবার এমনও অনেকে আছেন যাদের সামর্থ্য নেই একটি আলাদা জায়গায় নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরি করার, তারা নিজের বাড়ির একটি কক্ষ পরিপাটি করে সাজিয়ে সেটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় দাঁড় করিয়েছেন। নানা সমস্যার ভাবনা মাথায় রেখে এখন অনেকেই এভাবে নিজের বাড়িকে কর্মক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।

আমাদের দেশে বাড়িতে অফিস ধারনাটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত না হলেও বিশ্বজুড়ে বিষয়টি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। ইংরেজিতে এমন ব্যবস্থাকে বলা হয় স্মল অফিস হোম অফিস-সংক্ষেপে সোহো (SOHO)।

সহো কী?

ইন্টারনেট ঘেটে জানা গেল, সোহো হচ্ছে এমন একটি বাড়ি যেখানে একই সঙ্গে রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। উনিশ শতকের আগে যখন শিল্প বিপ্লব ঘটে তখন এ ধারনার জন্ম হয়।বিভিন্নভাবে নিজের বাড়িতে মানুষ ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। সাধারণত বাড়িতে গড়া একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে একসঙ্গে দশ-বারো জন কর্মী কাজ করতে পারে তাকেই বলা হচ্ছে সোহো। ধীরে ধীরে সোহোর ধারনাটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বাড়িতে যখন অফিস:

যে বাড়িতে থাকা সে বাড়িতে আলাদা একটি ঘরকে নিজের মতো পরিপাটি করে সাজিয়ে নিয়ে তৈরি করা যায় নিজের প্রতিষ্ঠান। এর সুবিধাও আছে অনেক। এই যেমন ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজের বাড়িতে অফিস বানিয়েছেন সুমন-শান্তা দম্পতি। একটি আউট সোর্সিং ফার্ম আছে তাঁদের।এই দম্পতি বলছিলেন, নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠান করার বেশ সুবিধা আছে। যেমন অন্যত্র যাওয়ার ঝক্কি-ঝামেলা নেই, আবার কাজ করার স্বাধীনতাও পাওয়া যায়।একটি জরুরি কাজের কথা মনে হলে তা তৎক্ষণাৎ সেরে ফেলা যায়। এতে যেমন সময় বাঁচে তেমনি বাড়তি চিন্তা থেকেও রেহাই মেলে।

শুরু করতে পারেন আপনিও:

আলাদা করে প্রতিষ্ঠান চালু করতে চাইলে আপনাকে একসঙ্গে অনেক পুঁজি খাটাতে হবে। কিন্তু সে তুলনায় নিজের বাড়িতে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করতে তারচেয়ে বেশ কম পুঁজি হলেই চলবে। শুরুতে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে আপনাকে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, সম্পূর্ণ আলাদা একটি ঘর, যেখানে সহজে আলো-বাতাস আসে।

আর ঘরটি যেন ড্রয়িং রুম বা লিভিং রুম না হওয়াই ভালো। নাহলে পরিবারের স্বকীয়তায় বিঘ্ন ঘটে। খুব ভালো হয় যদি কাজের রুম অন্যান্য রুম থেকে আলাদা হয় এবং কিছুটা দূরে হয়। যদি কাজের রুমে ঢোকার জন্য আলদা কোনো দরজার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়। অফিসের রুম সাজানোর ক্ষেত্রে পরিবারের সবার মতামত নিতে পারেন। রুমের দেয়ালটা কেমন হবে অথবা মেঝেতে কি থাকবে। লাইটিংটা কেমন হবে এসব ব্যাপারে সবার মতামত নিন। কি ধরনের ব্যবসা করছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার রুমের সাজসজ্জা এবং সুবিধা। ধরুন আপনি কোনো প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসা করবেন, সে ক্ষেত্রে আপনার রুমে সর্বদা ইন্টারনেট কানেকশন থাকা জরুরি। আর প্রযুক্তি তো আমাদের নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে সতর্ক থাকুন আপনার ব্যবসা দিয়ে যাতে আপনার পরিবারের মানুষ খুশি থাকে, বিরক্ত নয়। আর এ ব্যাপারে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই। অফিসের ফোন আর আপনার পার্সোনাল ফোন আলাদা রাখুন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আর অফিসের ফোন ব্যবহার না করাই ভালো। যতক্ষণ সময় আপনার পরিবারের মানুষকে দেবেন সেটা শুধুমাত্র তাদেরকেই দিন। আর সারাদিন আপনার কাজের ক্ষেত্রে কী কী হলো তাদের সাথে সবকিছু শেয়ার করুন। ছোটখাটো বিভিন্ন কাজে তাদেরকে যুক্ত করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার পরিবারের সদস্যরাও তাদেরকে আপনার কাজের অংশ হিসেবে মনে করবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে যে যা কাজ করবে তার জন্য কিছু টাকাও দিন যতই অল্প পরিমাণ হোক না কেন, এতে ছোট সদস্যদের উৎসাহ বাড়ে। আর আপনার ব্যবসার দরকারে যাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে তাদের সাথে যোগাযোগ অফিস পর্যন্তই রাখুন। যদি বন্ধুবান্ধব আসে দেখা করতে তাদেরকে অফিসে আপ্যায়ন না করাই ভালো। নিজের অফিসে নিজের মতো করে আপনার ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিন পরিবারের সবার সাহায্য নিয়ে।

তাহলে আর দেরি কেন? নিজের বাড়িতেই শুরু করে দিন অফিসের কার্যুক্রম। favicon

Sharing is caring!

Leave a Comment