কানাডায় কীর্তিমান অধ্যাপক হাবিব

কানাডায় কীর্তিমান অধ্যাপক হাবিব

  • মো. সাইফ

ক্যানোলা তেল বীজের ‘ক্লাবরুট’ সমস্যার প্রতিকার ব্যবস্থা আবিষ্কার করে কানাডার বিজ্ঞানী মহলে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশী এক অধ্যাপক। তিনি একইসঙ্গে বিজ্ঞানীও বটে। তাঁর নাম  অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।

ক্যানোলা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক তেল যেটি স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার কারণে তুমুল জনপ্রিয় কানাডায়। বাৎসরিক ২০ মিলিয়ন ডলার ব্যবসায় হয় এই ক্যানোলা’কে কেন্দ্র করে। কিন্তু সম্প্রতি কানাডার ক্যানোলা চাষী কৃষকদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। রোগবালাইয়ের আক্রমণে বিশেষত ক্লাবরুটের কারণে ফসলের একটি বড় অংশ ধবংস হয়ে যাচ্ছিল।

কৃষকদের অভিযোগ শুনে অধ্যাপক রহমান ২০০৪ সাল থেকেই  ক্লাবরুটের বিরুদ্ধে লড়ছেন। ১২ বছর পর আজ তার কাজ সম্পূর্ন হলো। একটি ‘সাকসেসফুল মিশন’ শেষ করতে পারলেন তিনি। শেষপর্যন্ত তিনি হাইব্রিড ক্যানোলা বীজ নিয়ে কাজ করে সাফল্যের সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখেন এটি আগের তুলনায় দ্বিগুণ ক্লাবরুট রোগ মোকাবেলায় সক্ষম। বলা বাহুল্য, কানাডায় এটিই প্রথম হাইব্রিড ক্যানোলা বীজ যার উদ্ভাবক হচ্ছেন হাবিবুর রহমান।

গবেষণায় মগ্ন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। ছবি: আলবার্তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট।
গবেষণায় মগ্ন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। ছবি: আলবার্তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট।

নতুন উদ্ভাবিত এই হাইব্রিড ক্যানোলার সাথে পূর্বের ক্যানোলার পার্থক্য হচ্ছে আগের গুলোতে ক্লাবরুট রোগ-নিরোধক ব্যবস্থা ছিল একটি। বর্তমান হাইব্রিড ক্যানোলার বিশেষত্ব হচ্ছে এটি আগের তুলনায় দ্বিগুণ নিরাপত্তা দেবে। একটি নিরোধক ব্যবস্থা নষ্ট হলেও এখানে আরেকটি কাজ করবে ফসলকে ক্লাবরুট থেকে দূরে রাখার জন্য।

বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে জন্ম নেওয়া হাবিবুর রহমান অধ্যাপনা করছেন কানাডার বিশ্ববিখ্যাত আলবার্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার উদ্ভাবনকে বাংলাদেশেও কাজে লাগানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, হাইব্রিড বীজ, দ্রুত সময়ের মধ্যে বীজ পরিপক্কতা ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি যে জ্ঞান লাভ করেছেন গবেষণার মাধ্যমে সেটিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ভোজ্য তেলের বাজারের পরিবর্তন করা সম্ভব।

হাবিবুর রহমান স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পড়েছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর তিনি ডেনমার্কে চলে যান। কোপেনহেগেনের রয়েল ভেটেরিনারি ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি সম্পন্ন করেন তিনি। ড্যানিসকো নামে একটি খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, হজমযোগ্য খাবার এবং বায়ো-প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখানে তিনি ছিলেন প্রায় ১৪ বছর।

ডেনমার্কে তার উল্লেখযোগ্য অর্জন হচ্ছে তিনি ৪০ প্রজাতির ক্যানোলা উদ্ভাবন করেন এবং তার সকল উদ্ভাবনের জন্য প্যাটেন্ট বা ‘মেধাস্বত্ত্ব’ গ্রহণ করেন। এরপরই তিনি ইউরোপ ছেড়ে কানাডায় আসেন।

আলবার্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যোগদান করেন ২০০৩ সালে। সে বছরই প্রথম চাষীরা সরকারের কাছে অভিযোগ করতে থাকে ফসলে তীব্রভাবে রোগ সংক্রমিত হচ্ছে বিশেষ করে ক্লাবরুটের অবস্থা প্রকট। হাবিবুর রহমান দীর্ঘ ১২ বছর নিরলস কাজ করে চাষীদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেন।

অধ্যাপক হাবিবের স্বপ্ন, জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করবেন তাঁর বাবা-মায়ের নামে। উচ্চমানের শিক্ষা প্রধান করাই হবে এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছোট ছোট কোর্স পড়ানোরও ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। এছাড়া আগ্রহী তরুণ গবেষকদের তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে চান এই কীর্তিমান বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক।

কৃতজ্ঞতা : ডেইলি স্টার।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment