যারা শিক্ষক তারাই শিক্ষার্থী

যারা শিক্ষক তারাই শিক্ষার্থী

  • লিডারশিপ ডেস্ক

পরীক্ষা, হোমওয়ার্ক আর নিয়মিত ক্লাস; স্কুল মানেই গঁত্বাঁধা কিছু? মোটেই না। পাশের দেশ ভারতে এমন এক স্কুল আছে, যেখানে আলাদা কোনো শিক্ষকই নেই। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই নিজেদের পড়ায়।


ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বানজারা পালিয়া নামের একটা জায়গা। তরুণ প্রযুক্তিবিদ অভিজিত সিনহা সেখানে খুলেছেন এক অভিনব স্কুল। বেশি দিন আগে নয়, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে চারটি কক্ষের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে চালু করেন শিক্ষকবিহীন স্কুল। নাহ, শিক্ষক ছাড়া আবার স্কুল হয় নাকি। আসলে এ স্কুলে আলাদা করে কোনো শিক্ষক নেই। শিক্ষার্থীরাই এখানে শিক্ষক।

নিজেই নিজের শিক্ষার বিষয় নির্ধারণ করার একটা ধারণা চালু আছে। যাকে ইংরেজিতে বলে ডিফাইন এডুকেশন ফর ইয়োরসেল্ফ, সংক্ষেপে ডিইএফওয়াই। এ ব্যবস্থায় অনলাইন টিউটরিয়াল দেখে একজন বা দুজন শিক্ষার্থী প্রথমে পড়া বুঝে নেয়। তারপর সে-ই বাকিদের বোঝায়। এভাবেই একজন করে সহপাঠীকে নামতে হয় শিক্ষকের ভূমিকায়। সাধারণত এ শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষাই বেশি থাকে। স্বল্পমূল্যের উপাদান দিয়ে রোবট ও ড্রোন বানানোর মতো কারিগরি বিষয় শেখানোর জন্য এ ব্যবস্থাই নাকি বেশি কার্যকর।

তরুণ প্রযুক্তিবিদ অভিজিত সিনহার বয়স ২৭ বছর। তিনি বছর দুয়েক আগে সফটওয়্যার কম্পানির চাকরি ছেড়ে বেঙ্গালুরুতে আসেন কিছু করার আশায়। সেখানে চায়ের দোকানে চা খেতে খেতেই প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের দেখে ব্যতিক্রমী এ শিক্ষাব্যবস্থা মাথায় আসে। তিনি বলেন, ‘আমি যখন চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলাম, তখন এলাকার শিশুদের নজর থাকত আমার স্মার্টফোনের দিকে। সবাই মজা পেত গেম খেলতে। কিছুদিন পর আমি দুটি ল্যাপটপ বসিয়ে তাদের কিছু কাজ করা শেখালাম এবং দেখলাম তারা খুব দ্রুতই শিখে ফেলল। তখনই বুঝলাম শিক্ষা আসলে চাপিয়ে দেওয়ার জিনিস নয়। ’

মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা অভিজিতের স্কুলে খুব অল্প সময়ই ৫০ জন হয়ে গেল। সবার বয়স ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। যারা সাধারণ স্কুলে পড়ে, তারাও স্কুল শেষে বিকেলের দিকে অভিজিতের স্কুলে চলে আসে। যে কেউ এখানে এসে পড়তে পারে, শিখতে পারে।

অভিজিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘স্কুল বলতে আমরা যা বুঝি, তা একটি ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে পড়ে। সবার লক্ষ্য ভালো ফল করে একটা চাকরি। এ ধারণা বদলানো দরকার। স্কুল হবে এমন এক জায়গা, যেখানে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব চিন্তাকে উৎসাহ দেওয়া হবে। ’

ব্যতিক্রমী এ স্কুলের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে ভারতে। অভিজিতের দল এরই মধ্যে কর্নাটক রাজ্যে এ ধরনের আরো দুটি স্কুল স্থাপন করেছে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment