মূল্যবোধই ব্যবসায়ের মূলধন : নিয়াজ রহিম

মূল্যবোধই ব্যবসায়ের মূলধন : নিয়াজ রহিম

  • লিডারশিপ ডেস্ক

নিয়াজ রহিম, রহিমআফরোজ গ্রুপের পরিচালক। সততা, মূল্যবোধ, নিষ্ঠা, শ্রম, অধ্যবসায়, লেগে থাকা যে ব্যবসার অন্যতম মূলধন, তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এ সি আবদুর রহিম। শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে এক অভাবনীয় সাফল্য এনেছিলেন তিনি ব্যবসায়। ৫৬ বছর আগে বাবার হাতে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রুপের হাল ধরেছে দ্বিতীয় প্রজন্ম। ব্যবসায় এসেছে নানামুখীতা। এসেছে বৈচিত্র্য। ব্যাটারি, আইপিএস, আইটি, চেইন শপ, কৃষিপণ্য, রেন্টাল বিদ্যুৎ, সোলার এনার্জি নানামুখী ব্যবসা যেমন বেড়েছে, তেমনি এসেছে চ্যালেঞ্জও। ভারতে ব্যাটারি রপ্তানি করতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয়েছে মামলার। সেই মামলা আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। অবশেষে এসেছে জয়। রহিমআফরোজ গ্রুপের এই চড়াই-উৎরাইয়ের নানামুখী গল্প বলেছেন নিয়াজ রহিম।


: আপনার বাবাকে দিয়েই শুরু করতে চাইপ্রায় ৫৬ বছর আগে আপনাদের ব্যবসা শুরুআপনার বাবার কথা যদি বলেন

নিয়াজ রহিম : আমার বাবার নাম এ সি আবদুর রহমি। উনি বেঁচে নেই। আমার বাবা সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি ৬ অথবা ৭ বছর বয়সেই উনি উনার মা-বাবাকে হারান। এতিম হয়ে যান। এরপর উনার মামার সংসারে মানুষ হন। কলকাতায় মামার একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল। বাবার লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। সেখানে লেখাপড়া ছাড়া যে কাজগুলো করা যায় এমন একটা চাকরি তাকে দেয়া হয়। তার অবস্থার যখন কিছুটা উন্নতি হয় তখন বাবা চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে পার্টনারশিপে কলকাতায় একটা দর্জির দোকান দেন। সেখানে কাপড়ের ব্যবসা করলেন। পরে চলে আসলেন চিটাগংয়ে।

: চিটাগংয়ে আসলেন কত সালে?

নিয়াজ রহিম : ১৯৪৮ সালে। দেশভাগের পরে। চিটাগংয়ে এসে উনি পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টে ঠিকাদারির ব্যবসা করলেন। চিটাগং থেকে আমরা ঢাকায় আসি ’৫৮-তে। প্রথম যখন লুকাস ব্যাটারির ফ্যাক্টরি  করার চেষ্টা চলছিল, তখন আমরা ফ্যাক্টরি করার জন্য উনাদেরকে সহায়তা করি। ওই সময় এত আধুনিক ব্যাটারি ফ্যাক্টরি ছিল না। ওই সময় পাকিস্তানেও বোধ হয় ব্যাটারির ফ্যাক্টরি ছিল না। এখান থেকে তৈরি হয়ে ওখানে যেত। ব্রিটিশরা যখন ব্যাটারি তৈরি করত আমরা ওটা ডিস্ট্রিবিউট করতাম।

: আপনার বাবার জন্ম কোথায়?

নিয়াজ রহিম : কলকাতায়।

: আপনাদের আদি নিবাস কোথায়?

নিয়াজ রহিম : ভারতে। আমার জন্ম চিটাগংয়ে।

: আপনারা কয় ভাই বোন?

নিয়াজ রহিম : আমরা তিন ভাই, দুই বোন। আমি হলাম ভাইদের মধ্যে ছোট।

: তারপর আপনাদের ব্যবসার শুরুটা হলো কিভাবে?

নিয়াজ রহিম : তারপর থেকে উনারা ব্যাটারি উৎপাদন করতেন আমরা বিক্রি করতাম, এই। এভাবেই ছিল।

: তখন তো এটা ছোট আকারে ছিল

নিয়াজ রহিম : খুবই ছোট আকারে। ’৫৮ থেকে ’৮০ পর্যন্ত আমরা শুধু ব্যাটারি ডিস্ট্রিবিউশনই করতাম। তখন ডিলার সংখ্যা অত্যন্ত কম। খুলনাতে একটা। চিটাগাংয়ে একটা। ঢাকায় একটা হয়ত ছিল। উৎপাদনও খুব ছিল না। এভাবেই শুরু।

: আপনাদের ডিলারশিপটা তো ঢাকাতেই

নিয়াজ রহিম : বাবার ব্যাকগ্রাউন্ড তেমন স্ট্রং ছিল না। এর পরও বাবা যে এই পর্যন্ত আসলেন এটা একটা লক্ষণীয় ব্যাপার। কারণ, প্রথমত লোকটা এতিম। লেখাপড়া তেমন নেই। এক দেশ থেকে আরেক দেশে এক অজানা জায়গায় তিনি আসলেন। তারপর নিজের অবস্থান তৈরি করলেন। এবং তিনি উঠলেন। তাহলে তার ভেতরে নিশ্চয়ই কোনো গুণ ছিল। তিনি সব সময় উপরের দিকে, সম্ভাবনার দিকে তাকাতেন। সমস্যাকে এতটা গুরুত্ব দেননি। আমরা আজ কি করি, সমস্যাকে প্রাধান্য দেই। আমরা যদি বাবার জীবনটাকে দেখি উনি কিন্তু সমস্যাকে সব সময় দূরে সরিয়ে রেখেছেন। সম্ভাবনার দিকেই এগিয়ে গেছেন।

: আপনি কোথায় লেখাপড়া করেছেন?

নিয়াজ রহিম : আমি পড়েছি ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে, ওখান থেকে শাহিন স্কুলে, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি, তারপর কানাডায় যাই। ওখান থেকে লেখাপড়া শেষ করে আমি দেশে ফিরে আসি।

: কোন বিষয়ে পড়েছেন?

নিয়াজ রহিম : আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি ল-তে। বাইরে পড়েছি বিজনেসে।

: বড় দুই ভাই?

নিয়াজ রহিম : বড় দুই ভাইও এমএ পলিটিক্যাল সায়েন্স, ঢাকা ইউনিভার্সিটি। আমার মেজো জন, সেও নটর ডেম কলেজে পড়ে লন্ডনে গিয়ে লেখাপড়া করে আবার আসে। বাবা নিজে ছিলেন নিম্ন স্থানে, ওখান থেকে আমাদের বললেন যে, উঠতে হবে। লেখাপড়া করতে হবে। ভালো পরিবেশে থাকতে হবে। ভালো পরিবেশে না থাকলে মানসিকতা উদার হয় না। তারপর বাবার ধর্মের ওপরে বিশ্বাস, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস আমি মনে করি এই জিনিসগুলো উনাকে গঠন করেছে। বাবার পরে আমরা কিন্তু এখনো এই মূল্যবোধ নিয়ে আছি। এখনো এসব চর্চা করি। কাজে সততা থাকতে হবে। আমরা যে কাজই করি সেটা মোটামুটি হওয়ার সুযোগ নেই। ভালো হতে হবে। সর্বোচ্চ ভালো হতে হবে। আমরা বাবার কাছ থেকে যা শিখেছি আজও এগুলো নিয়েই আছি।

: উনি তো মারা গেলেন ১৯৮২-তেতখন কি আপনি লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসায়ে ঢুকেছেন

নিয়াজ রহিম : আমি মাত্র শেষ করে আসছি।

: ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনি কী উনার সান্নিধ্য পেয়েছেন?

নিয়াজ রহিম : আমি পুরোপুরি পাইনি। কিন্তু আমার বোন ও দুই বড় ভাই পেয়েছে। যেহেতু আমরা ওই পরিবেশে বড় হয়েছি। আমি বলব উনার মূল্যবোধ অবশ্যই আমার মধ্যে আছে।

: প্রথমে ডিস্ট্রিবিউশন থেকে তারপরে আপনাদের অগ্রযাত্রাটা কিভাবে হলো?

নিয়াজ রহিম : ডিস্ট্রিবিউশন, ১৯৮২ পর্যন্ত ঐভাবে ছিল। ’৮২-তে আমি আসলাম। এসে জয়েন করলাম। বাবা একক ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতেন। উনার কথাই সব। উনার হারানোর কিছু ছিল না। কারণ উনি তৈরি করেছেন। হারালে হারালাম। কিন্তু আমরা যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেই তবে ক্ষতি কিন্তু এককভাবে হবে না। সামগ্রিকভাবে হবে। অতএব আমাদের খুব সতর্কভাবে আগাতে হবে। প্রত্যেকটা জিনিস আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে করি। কোনো সিদ্ধান্ত এককভিত্তিতে নেই না। আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে আগাই। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই এই কালচারটা আমরা প্রাকটিস করি। বোর্ড রুমে আমাদের তর্কবিতর্ক যা হওয়ার হবে কিন্তু বাইরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সবাই মানে। আমরা বলি না যে, আমি তো এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন দেইনি কিংবা ও এ রকম বলেছিল। সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে আমরা সবাই তা মেনে নেই। এই যে আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগুলো নিতাম, আমি মনে করি আজকের সফলতার কারণ হলো এগুলো।

: আপনি এসে গ্রুপের আলাদা কোন সেক্টরে জয়েন করলেন—নাকি গ্রুপের দায়িত্ব নিলেন?

rahim20151012055302নিয়াজ রহিম : আমি এসেছি তখন ’৮২-তে। কোনো একজন নতুন ব্যক্তি সেটা ফ্যামিলি মেম্বারই হোক আর বাইরেরই হোক ব্যবসার মধ্যে সহজে ঢোকা যায় না। প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে কিন্তু হঠাৎ ঢোকা যায় না। ’৮২ সালে বাংলাদেশে তখন গার্মেন্টস মাত্র উঠছে। এক ইতালিয়ানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সে সময়। সে গার্মেন্টসের মার্কেট খুলছে। তখন শ্রীলঙ্কাতে সমস্যা ও অন্যান্য দেশে সমস্যা ছিল। সেই সুযোগে বাংলাদেশে মাত্র গার্মেন্টস ঢুকেছে। আমি আমার তিনজন বন্ধু মিলে তখন ‘ভিভা বাংলাদেশ লিঃ’বলে একটা বায়িং হাউস খুলি। ওই সময় আমরা ব্যাংকে যখন এলসি নিয়ে যেতাম ব্যাংকও জানত না ব্যাক টু ব্যাক এলসি কী, মাদার এলসি কী- এই শব্দগুলো ব্যাংকও শুনেনি। আমরা ইতালিয়ানদের মাধ্যমে তা শিখি। ’৮৩-তে আমার ভাইয়েরা আমাকে নোটিস দিলো—হয় তুমি আলাদা হও, নয় আমাদের সঙ্গে থাক। আমাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত আলাদা ব্যবসা আমরা করব না। পরিবারের সদস্যদের এখানে একটা ব্যবসা থাকবে আবার একেক জনের প্রাইভেট আরেকটা ব্যবসা থাকবে, এ রকম আমরা করব না। আমরা যা করব একসঙ্গে। এটাই আমাদের ফিলোসফি। তখন নতুন ব্যবসাতে না গিয়ে ফ্যামিলি ব্যবসাকেই স্ট্রং করি। ’৮৫-এ সিদ্ধান্ত নিলাম যে বায়িং হাউস থেকে আস্তে আস্তে বের হব। তখন কিন্তু কোটা সিস্টেম শুরু হয়। আমরা এক একটা এলসি হ্যান্ডল করতাম মোর দেন হানড্রেড থাউজেন্ড ডলারস, ফিফটি থাউজেন্ড ডলারস, টু হানড্রেড থাউজেন্ড ডলারস। গার্মেন্টসে ইন্সপেকশন যে করবে তার ওপরে কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করবে। একটা এলসি বাতিল হওয়া মানে তার ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাওয়া। এ জন্য যাকে আমরা ইন্সপেকশনের দায়িত্ব দেব তার সততা কত কঠিন হতে হবে সেটা বুঝতে হবে। ওকে হয় কেউ গুলি করে মারবে, না হয় কেউ কিনে ফেলবে। এখানে দুই এক হাজার টাকার বিষয় নয় কোটি কোটি টাকার বিষয়। ভাবলাম আমরা যদি নিজেরা সম্পৃক্ত না হই তাহলে এটা খুব রিস্কি ব্যবসা হয়ে যাবে। আমাদের সুনামের ওপর একটা দাগ পড়ে যাবে। কারণ তারা আসছে আমাদের ওপর বিশ্বাস করে। আমরা যদি বিশ্বাসের মূল্য দিতে না পারি তাহলে এটা তো ঠিক হয় না। অতএব আমরা বললাম, না এখানে আমাদের গুড উইলটা মোর ইম্পরট্যান্ট। ফলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে না আমরা আর বায়িং হাউসে থাকব না। আমরা বেরিয়ে আসব।

তিন বন্ধুর মধ্যে এক বন্ধু যখন সিদ্ধান্ত নিল যে, বের হয়ে আসবে তখন অন্যরাও আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসল। থাকলে সবাই না হলে কেউ না। এভাবে আমরা ১৯৮৫ সালে বায়িং হাউস থেকে বেরিয়ে আসি। যারা আমাদের সঙ্গে বায়িং হাউসে কাজ করতেন তাদের ফ্যাক্টরির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমরা চলে আসি। আমি রহিমআফরোজ-এ ঢুকলাম ১৯৮৪-তে।

: রহিমআফরোজ নামটা কিভাবে?

নিয়াজ রহিম : আফরোজ রহিম হলো আমার বড় ভাইয়ের নাম। রহিম এ্যান্ড সন্স আপনি দেখবেন যেমন সন্স যোগ করে অনেক জায়গায়। রহিম যেহেতু ফ্যামিলি নেম আফরোজ এর সঙ্গে যুক্ত করে। যখন ওই কোম্পানি করেন ওই সময় বোধহয় বাবার একটাই ছেলে ছিল। এটা রহিম আফরোজ নামে নিবন্ধন হয়েছে ১৯৮৪-এ কিন্তু উনি তো ব্যবসা করেন অনেক আগে থেকেই। নিজের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে উনি সব সময় অন্যদের সহযোগিতা নিতেন। রহিমআফরোজ হলো উনার দেয়া নাম। কিন্তু যখন রেজিস্ট্রেশন করে তখন আফরোজের সঙ্গে আরেকটা ও (০) বসিয়ে দিয়েছে।  এটা হলো প্রোডাক্ট অফ এ মিসটেক। কিন্তু এখন আমরা বলি এটা কোম্পানির নাম।

: আপনার যাত্রা শুরু হলো কিভাবে?

নিয়াজ রহিম : আমি কানাডা থেকে এসে ’৮৪-তে ঢুকি। আমি দায়িত্ব নেই ব্যাটারি সেলস-এ। আগে ছিল মামা একা। এখন আমরা তিন ভাই, আমার এক মামা আমাদের পরে দায়িত্ব নেন।

: আপনাদের গ্রুপে আপনার সঙ্গে দুটো আলাদা নাম আছে উনারা কারা?

নিয়াজ রহিম : উনারা পরে ঢুকেছে। আমার মামা, আমি ’৮৪-এর কথা বলছি।

: আপনি শুরু করলেন ব্যাটারি ডিস্ট্রিবিউশন থেকেপ্রডাকশনে গেলেন ’৯৫ সাল থেকে?

নিয়াজ রহিম : হ্যাঁ। প্রোডাক্টশন তো ব্রিটিশরা করেই গেছে ১৯৫৯ বা ৬০-তে। আমরা এটাকে টেকওভার  করেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে যখন এখানে নানা সমস্যা, তখন ব্রিটিশরা বলল যে এদেশে ব্যাটারির ব্যবসা ওদের জন্য লাভজনক না। ’৭৮ বা ’৭৯-এর দিকে তারা বলল না আমরা আর এখানে ব্যবসা করব না। এ দেশকে আমরা পটেনশিয়াল মনে করি না। তখন তারা ফ্যাক্টরি বিক্রি করে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন আমরা ‘লুকাস’ কিনে নিই। ১৯৮০ সালে উনাদের থেকে দায়িত্ব বুঝে নিই। ’৮৩-তে আমি জয়েন করি।  এখন আমাদের দায়িত্ব হলো ব্যাটারির ক্যাপাসিটিকে বাড়ানো। এটাকে লাভজনক অবস্থায় আনা। আস্তে আস্তে সমস্যাগুলোকে মেটানো।  আমি ব্যাটারি সেলসের দায়িত্ব নিলাম। সারা বাংলাদেশে ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া আরম্ভ করি। এবং দুই বছরে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করার মতো অবস্থানে আসি। আপনারা দেখবেন ডিলার নেটওয়ার্ক করার পর থেকেই কিন্তু রহিমআফরোজের গ্রোথ আস্তে আস্তে ভালো হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী ব্যাটারির ফ্যাক্টরির ক্যাপাসিটি বাড়ানো হলো। সেলস্-ডিস্ট্রিবিউশন ক্যাপাসিটি বাড়ানো হলো। এর ফলে আমাদের চেহারা আস্তে আস্তে পাল্টানো শুরু হয়ে গেল। অনেক সমস্যা ছিল। পরিবহনের সমস্যা ছিল, বিশ্বাসের একটা সমস্যা ছিল। ওই সময় কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। সেগুলোকে আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠিত করে এই জায়গায় আনা সত্যিই একটা কঠিন ব্যাপার।  ওই সময়ে এমন অবস্থা ছিল না যে ডিলাররা নগদ টাকা দিয়ে ব্যাটারি নেবে। বাকিতে ব্যবসা করতে হবে। বাকিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যাটারি দেব, টাকা দেবে কি দেবে না এটা একটা অনিশ্চয়তা। সেখানেও আমরা বাকি দিয়ে শুরু করি। বিশ্বাস করলে বিশ্বাস পাওয়া যায়। অন দেট প্রিন্সিপাল উই স্টার্ট।

ডিলারশিপ দেয়ার আগেই কিন্তু স্টাডি করে নেই আমি কাকে দিচ্ছি। তার ব্যবসায়িক, সামাজিক সুনাম কেমন? তারপরও আল্টিমেটলি তাওয়াক্কালুত আল্লাহ। বিশ্বাস করে আল্লাহর ওপর ভরসা করে দেয়া।

এই অভিজ্ঞতার পরে আমি বলব আমরা জাতি হিসেবে নিজেদের সব সময় ছোট করে দেখি। এটা কিন্তু একটা ডেঞ্জারাস জিনিস। আমরা যেহেতু ব্রিটিশদের অধীনে ছিলাম আমাদের এটাই শিখানো হয়েছে যে, কাউকে বিশ্বাস কর না। যাতে আমরা উঠতে না পারি। এটাও পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। যাতে আমরা আগাতে না পারি। আমরা তখন সারাদেশে ১৫০ জনের মতো ডিলার এস্টাবলিশ করি। আমি গর্ব করে বলব তাদের একজনও আমাদের সঙ্গে বিট্রে করেনি।

: কাজটা কি আপনি করতেন? সিলেকশনের সময় ক্রাইটেরিয়া কী দেখতেন?

নিয়াজ রহিম : তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা আছে কিনা। সামাজিক অবস্থানটা কী রকম? আর্থিক অবস্থা কী? তার যদি একটা দোকান থাকে ভালো।  আমরা যেখান থেকে স্টার্ট করেছি ইট ইজ এ জিরো বেইজড। ওই সময়ে এই ব্যবসাগুলো যারা করতেন রাস্তা থেকে তারা পুরনো ব্যাটারি কিনত। আমরা তাদের নতুন ব্যাটারি সিস্টেমে নিয়ে আসি। ওদের আমরা নিয়মকানুন শিখাই। ওদের ব্যবসা শেখানোর কোনো সুযোগ ছিল না কারণ ওরা বাপ-দাদার আমল থেকেই এই ব্যবসা করে আসছে। আমরা সেই এনভায়রনমেন্টে কিন্তু ঢুকেছি। আমরা বলেছি নতুন ব্যাটারি আমরা দিচ্ছি। সমস্যা হবে না। পুরনো ব্যাটারি দাম প্রায় অর্ধেক। আর আমরা তাকে বলছি, না তুমি বেশি দাম দিয়ে ব্যাটারি বিক্রি করবা। সমস্যা হবে না? বলেছি সমস্যা হলে দেখব আমরা। পুরাতন ব্যাটারির অভ্যস্ততা ছেড়ে ক্রেতারা নতুন ব্যাটারি কিনবে কিনা এই আশঙ্কা ছিল। কারণ ও যে পরিবেশে বড় হয়েছে সেখানে ভালো এবং নতুন ব্যাটারির কিন্তু কোনো চাহিদা ছিল না। আমরা সেখানে একটা চাহিদা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমি বলব যে, আমরা সফল হয়েছি। একটা মরুভূমি আমরা আবাদ করেছি। একটা নতুন পথে যাত্রা করেছি।

: আপনি মরুভূমিতে গেলেন কিন্তু ভবিষ্যতের সম্ভাবনার একটা জায়গা অবশ্যই দেখেছিলেন, সেটা কি?

নিয়াজ রহিম : স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশ কিন্তু থেমে ছিল না। সব সময় দেশে একটা ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। গাড়ির চাহিদা বাড়ছে। রাস্তা বাড়ছে। থেমে কিন্তু থাকেনি। গাড়ি বাড়া মানে ব্যাটারির চাহিদাও বেড়ে যাওয়া। জিয়াউর রহমান সাহেবের সময়ে একটা প্রকল্প ছিল গণযোগাযোগ। ঐ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি গ্রামে গ্রামে টেলিভিশন বিতরণ করতেন। তথ্য যাতে মানুষের কাছে পৌঁছায়। ওরা টেলিভিশন পেত কিন্তু ব্যাটারি জন্য আসত ঢাকায়। তখন আমরা বললাম তোমার ঢাকায় আসতে হবে না। ব্যাটারি নিয়ে আমরাই পৌঁছে যাব তোমার কাছে। এ রকম প্রত্যেটা সুযোগের পেছনে ব্যবসায়িক অবস্থান সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি। তখন তো ব্যাটারি চালিত টেলিভিশন ছিল, কারণ বিদ্যুৎ ছিল না। ব্যাটারির জন্য আগে উনারা আসতেন এখানে আর আমরা যেতে শুরু করলাম তাদের বাড়ির কাছে। এটাই ছিল আকর্ষণ। আর স্থানীয় সরকারি অফিসগুলো যখন দেখল ঢাকা থেকে ওদের ব্যাটারি পাঠাতে হয় না, তারাও ওখান থেকে পেয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে এ মেসেজগুলো এমনিই চালু হয়ে গেল।

: কিন্তু সেই সময় নতুন ব্যাটারির দাম তো বেশিমানুষের অভ্যাসেরও তো একটা ব্যাপার রয়েছেকরলেন কিভাবে?

নিয়াজ রহিম : গাড়িতে ব্যাটারির প্রয়োজন হয় গাড়ি স্টার্ট দেয়ার সময়। একটা দুর্বল ব্যাটারি দিয়ে যখন গাড়ি স্টার্ট করা হয় তখন ইঞ্জিনের ওপর দুইগুণ তিনগুণ চাপ পড়ে। দুই হাজার টাকার ব্যাটারির জন্য আপনি কয়েক লাখ টাকার গাড়ির কিন্তু বারোটা বাজাচ্ছেন। আমরা ডিলারদের বলতাম তোমরা ওদের বোঝাও যে দুই হাজার টাকার জায়গায় যদি নতুন ব্যাটারির জন্য আড়াই হাজার বা তিন হাজার টাকা দেয়, উনার লাখ টাকার গাড়ি কিন্তু বেঁচে যাচ্ছে। তখন ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়া মাত্র গাড়ি স্টার্ট নেবে। ইঞ্জিনের ওপর চাপ পড়বে না। গ্রাহকের সচেতনতা আমরা বাড়ালাম। তখনই কিন্তু আমাদের বিক্রি বাড়ল। ডিলাররা আগ্রহ পেল। যখন আগ্রহ পেল তখন তারা গ্রাহকদের সঙ্গে আরো বেশি কথা বলতে লাগল।

তবে আফটার সেলস এটা কিন্তু একটা বড় জায়গা

নিয়াজ রহিম : ব্যবসা করাটা কিন্তু অনেক সহজ। আপনাকে আমি নয়-ছয় বুঝিয়ে দিয়েই ব্যাটারি বেচতে পারব। কিন্তু আমরা সব সময় চেষ্টা করি আমাদের কাস্টমার যেন পারমানেন্ট থাকে। আপনি ব্যাটারিটা নিলেন। এটার এসিড ফুরিয়ে যেতে পারে। শুকিয়ে যেতে পারে। এখানে রক্ষণাবেক্ষণেরও একটা সুযোগ আছে।  প্রয়োজন আছে। এই প্রয়োজনটা কে মেটাবে? হয় আপনাকে সহযোগিতা করতে হবে না হয় মেটাতে হবে। আমরা যাদেরকে আমরা ডিলার দিয়েছি এদের ট্রেনিং দিতাম যে, ব্যাটারিকে এভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। দামটাকে  মিনিমাইজ করার জন্য ব্যাটারির পানি ঢাকা থেকে সরবরাহ করতাম। কাস্টমারদের সার্ভিস দেয়ার জন্য আমাদের ফ্যাক্টরিতে ব্যাটারির  জন্য যে পানিগুলো হতো এগুলো আমরা ফ্রি  সাপ্লাই দিতাম।

আমরা আজও ব্যাটারির গ্যারান্টি এক বছর বা দুই বছর দেই; কিন্তু লাইফটাইম সার্ভিস দিচ্ছি ফ্রি। ব্যাটারি যদি পাঁচ বছর যায়, পাঁচ বছরই ফ্রি সার্ভিস দেই। ওটার জন্য কিন্তু কোনো পয়সা দিতে হয় না। এই সার্ভিসগুলো আমরা কাস্টমারকে দিই। এখনো দিচ্ছি। এভাবেই আমরা ডিলার নেটওয়ার্কটাকে প্রতিষ্ঠিত করি।

: এটার পরেই কি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাটারিতে গেলেন?

2012-06-26__bs01নিয়াজ রহিম : এগুলো করে আমরা তখন একটা লেভেলে আসছি। বাংলাদেশে এখন আমরা চাহিদা তো মিটাচ্ছি। তখন এমন হয়ে গেছে যে, ক্যাপাসিটি বেশি; কিন্তু সেলস কম। তখন অন্য মার্কেট আমরা খুঁজলাম। দেখলাম আর কোন জায়গায় বিক্রি করা যায়। ’৮৫-এ এটমিক এনার্জি কমিশন থেকে খবর পেলাম যে তারা সোলার  সিস্টেম ডেভেলপ করবে। ’৮৫-এর পর থেকে আমরা সোলার এনার্জির পেছনে লাগি। সোলার এনার্জির পেছনে কেন লাগি? আমরা দেখলাম যে, আল্লাহর সূর্যের  মাধ্যমে আমি ব্যাটারি চার্জ করতে পারব। আর ব্যাটারির মাধ্যমে আমি ঘরে কিন্তু আলো দিতে পারব। আমি যদি আলো দিতে পারি তাহলে  আমাদের উন্নয়ন বা সামাজিক ডেভেলপমেন্ট কেউ ঠেকাতে পারবে না। কেননা শিক্ষিত লোককে যদি অন্ধকার রুমে রাখেন সে কিন্তু বেকার। কিন্তু একটা অশিক্ষিত লোককে আলোর রুমে রাখেন সে কিন্তু একটা পেপার হলেও উল্টোবে। কিংবা কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করবে বা হাতের কাজ কিছু একটা করবে। মানে আলো পেলেই ব্রেন কাজ করবে। এবং  ওখান থেকে একটা ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট আসার সম্ভাবনা রয়েই গেছে। আমরা মনে করলাম, এটা তো একটা বিরাট একটা সোর্স যেটা ব্যবসায়িক কাজে লাগবে। এটমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন আনোয়ার হোসেন সাহেব। উনি আমাদের অনেক উৎসাহ দিলেন। বললেন আপনারা করেন যা সহযোগিতা লাগে আমরা করব।

উনার মাধ্যমে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ করে পাবলিক অপিনিয়ন আস্তে আস্তে তৈরি করার চেষ্টা করলাম। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষকরা এলেন। আস্তে আস্তে জিনিসটা ছড়াল। তখন ডিউটি ছিল হানড্রেড পারসেন্ট। এটা কেউ জানত না যে, সোলার এনার্জির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এটা আবার কী? আস্তে আস্তে ১৯৯১ বা ’৯২ সালের দিকে সরকার এটাকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করল। হানড্রেড পারসেন্ট ডিউটি নামল ৪৫% ডিউটিতে।

:এই যে আপনারা এটমিক এনার্জি থেকে সোলার এনার্জির প্রতি আগ্রহী হলেন এবং সহযোগিতা পেলেন তখন কি আপনারা কোন প্রজেক্ট শুরু করেছিলেন?

নিয়াজ রহিম :   তখন এটা তো কোনো জায়গায় ছিল না। এটমিক এনার্জিরই একটা ইন্সটলেশন ছিল না। সাভারে তাদের একটা ডেমন্সট্রেশন ছিল। এটমিক এনার্জি কমিশন ও রহিমআফরোজ একসঙ্গে সেই ইন্সটলেশন করি। সেটা হলো আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা। সেখান থেকেই আমাদের যাত্রাটা শুরু করি।

: তখন বাইরে থেকে কোন জিনিস আনতে হতো?

নিয়াজ রহিম : ফটোভোল্ট আনতে হতো বাইরে থেকে, ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল এগুলো বাইরে থেকে আনতে হতো। ইন্সটলেশন ক্ল্যাম্প, ব্রাকেট, এমনকি ক্যাবল বাইরে থেকে আনতে হতো। তখন বাংলাদেশে ক্যাবল হলেও আমরা এটাতে নির্ভর করতাম না। ১৯৯১ বা ’৯২-তে এটা ৪৫% ডিউটিতে নামল তারপর ’৯৩ বা ৯৪ এ জিরো ডিউটি হয়। তখন সবকিছুই বাইরে থেকে আনতে হতো। ব্যাটারিও অনেকখানি বাইরে থেকে আসত।

সোলার এনার্জি কিন্তু গাড়ির ব্যাটারি দিয়ে হয় না। গাড়ির ব্যাটারি তৈরি করা হয় ইঞ্জিনটা স্টার্ট করার জন্য। পাওয়ার দেয়ার জন্য না। এটার জন্য আস্তে আস্তে আমাদের নতুন ধরনের আলাদা ব্যাটারির আইডিয়া পাওয়া শুরু হলো।

আমরা যখন দেখলাম আমাদের ক্যাপাসিটি বেশি কিন্তু সেল কম। আমাদের মার্কেট বের করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে এক্সপোর্ট ওই সময় কেউ চিন্তাও করত না। তখন আমরা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবিতে গিয়ে দেখলাম বড় ব্যাটারিগুলো তারা বাইরে থেকে আমদানি করে আনে। টেলিকমিউনিকেশনেও তাই। তখন চিন্তা হলো এই বড় ব্যাটারির তো একটা বাজার আছে। অথচ এই সেক্টরে আমরা নাই। বেসিক ‘র’ মেটিরিয়ালস এক, টেকনোলজি ডিফারেন্ট। আমরা আস্তে আস্তে গবেষণা শুরু করলাম। লক্ষ্য এ সেক্টরে তো আমাদেরকে ঢুকতে হবে। সম্ভবত ’৯০-এ আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাটারিতে যাত্রা শুরু করলাম।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাটারি দিয়ে আমরা আজকে টেলিকমিউনিকেশন, পাওয়ার, রেলওয়ে, সোলার এই সব কিন্তু এই স্পেশালাইজড ব্যাটারির মাধ্যমে যাচ্ছে। এমনকি এই ব্যাটারির মাধ্যমে আমরা আইপিএসকেও প্রথমদিকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছি।

: এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাটারির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আপনাদের কোনো প্রতিযোগী আছে?

নিয়াজ রহিম : বেশ কয়েকজনই আছে।

: পরে সোলার এনার্জি ডেভেলপমেন্টের কি হলো?

নিয়াজ রহিম : এখন তো গভর্নমেন্ট নিজেই প্রোগ্রাম নিয়ে নিল।

: আপনাদের ডেভেলপমেন্টটা কি?

নিয়াজ রহিম : আমরা ইলেক্ট্রনিক্স দেশে তৈরি করা শুরু করলাম। যারা এখানে ক্যাবল বানাতেন, বিদেশি ক্যাবলের স্পেসিফিকেশনগুলো দেখে আমরা স্থানীয়ভাবে ওদের গিয়ে বললাম তোমরা আমাদের তৈরি করে দাও। উনারা এটাকে তৈরি করলেন। এখন প্যানেল ছাড়া বাংলাদেশে সবকিছুই কিন্তু স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে। ব্যাটারি, ক্যাবল, ক্ল্যাম্প, ইলেক্ট্রনিক কন্ট্রোল ইত্যাদি দেশেই তৈরি হচ্ছে। আমরা মনে করি প্যানেলও আমরা দেশেই তৈরি করব।

12: সোলার এনার্জি আপনারা মাঠপর্যায়ে কোথায় ব্যবহার শুরু করলেন?

নিয়াজ রহিম : আমরা ডিলারদেরকে যে প্রশিক্ষণটা দিয়েছিলাম যেমন ফরেস্টে (বন বিভাগ) অনেকগুলো নিয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। আমরা সব সময় মনে করেছি ঢাকার ডিলারকে প্রশিক্ষণ দেয়ার চেয়ে যদি খুলনার ডিলারকে প্রশিক্ষণ দেই, তবে কোনো সময় যদি সোলার এনার্জির কোথাও কোনো সমস্যা হয় তাহলে কয়েক মিনিট বা ১-২ ঘণ্টার মধ্যে তার সমাধান হয়ে যাবে। ঢাকায় থেকে লোক পাঠিয়ে মেরামতের চেষ্টা করলে ২-৩ দিন লাগবে।

গ্রামে আমরা প্রমোট করার চেষ্টা করলাম। গ্রামে আমরা মেলা করেছি, বিদ্যুৎমেলা। আমরা সিলেটের বিশ্বনাথে, ফরিদপুরে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎমেলা করেছি। ওখানে গিয়ে দেখলাম আমরা যদি মনে করি গ্রামের লোকের কাছে টাকা নেই তারা কিনতে চায় না, তা কিন্তু নয়। আমরা তা পাইনি। তখন সোলার প্যানেল ছিল ৩৫ না ৩৬ হাজার টাকা। এখন নেমে আসছে ২৬ হাজার টাকায়।

লোকেরা কিনতে এগিয়ে আসছে কিন্তু একটা অবিশ্বাস কাজ করে। সেখানে আমরা মনে করেছি গ্রামের লোককে আমরা এত টাকায় সোলার প্যানেল দেব তারপরে টাকা আদায় করব কেমনে। আর ওরা ভাবছে এরা শহর থেকে আসছে, এদের কাছ থেকে এত টাকার জিনিস কিনব, পুরা টাকা দিয়া দেব পরে এর পেছনে দৌড়াতে পারব না। তখন এখানে একটা গ্যাপ।

ওরা আমাদের টাকা দিতে চাইছে ৬০ ভাগ, ৭০ ভাগ কিন্তু হানড্রেড পারসেন্ট  দেবে না। টাকা নাই বলে না, আস্থাহীনতার কারণে। তখন আমরা ড. মুহম্মদ ইউনূস সাহেবের সঙ্গে বসলাম, ব্র্যাকের আছে গেলাম। বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে গেলাম। সোলার এনার্জির গ্রাহক এবং আমাদের মাঝখানে কোনো ব্রিজ হতে পারে কিনা?

এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ আলহামদুলিল্লাহ গ্রামীণ একটা বিরাট শক্তি হয়ে গেছে। ব্র্যাক নিজেরা করছে। অনেকগুলো এনজিওর মাধ্যমে আস্তে আস্তে এটাকে চেষ্টা করেছি। ব্র্যাক, গ্রামীণসহ ৪-৫টা ছাড়া ব্যাপকভাবে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। আমরা সবকিছু করে দিতাম। আমরা ইন্সটলেশনও করে দিতাম। উনারা আমাদের ফিন্যান্স গ্যারান্টি দিত।

আস্তে আস্তে মাইক্রো ফিন্যান্সের মাধ্যমে এটা যখন ছড়ানো শুরু করল তখন এইসব মধ্যস্থতাকারী এনজিওদের লোকদের আমরা প্রশিক্ষণ দিলাম। যাতে আমাদের আর যেতে না হয়। উনারাই যাতে করে নেয়। তারা নিজেরা একটা এস্টাবলিশমেন্ট তেরি করলেন, গ্রামীণ শক্তি ছড়িয়ে গেল। উনারা নিজেরাই এখন টেন্ডার করেন। আমাদেরটাও কেনেন, বাইরেরটাও কেনেন। এভাবে ইন্ডিপেনডেন্ট একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে গেল।

সূত্র: সাপ্তাহিকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment