চাকরি পাননি, চাকরি দিয়েছেন

চাকরি পাননি, চাকরি দিয়েছেন

  • লিডারশিপ ডেস্ক

চাকরির জন্য ৩০ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। আজ অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিশ্বখ্যাত আলিবাবা ডটকম-এর মালিক। তিনি চীনে ১৪ মিলিয়ন চাকরির পদ তৈরি করেছেন। আলিবাবা প্রতিষ্ঠার সময় সবাই তাকে পাগল বলত। টাইম ম্যাগাজিনও তাকে পাগল বলে অভিহিত করেছিল। কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। জয় করেছেন সফলতার উচ্চতম চূড়া। তিনি হলেন চীনের সফল ব্যবসায়ী জ্যাক মা।


জনপ্রিয় ট্রেডিং সাইট ‘আলিবাবা ডটকম’-এর কর্ণধার জ্যাক মা। তার সম্পদের পরিমাণ ২.৫ হাজার কোটি ডলার। ধনকুবের জ্যাক মা এখন সফল ব্যক্তি। একই সঙ্গে অপরের অনুপ্রেরণা বলা চলে। অথচ তার জীবনেও আছে হাজারো ব্যর্থতার গল্প।

প্রাইমারিতে দুবার ফেল, মাধ্যমিকে তিনবার ফেল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় একবার ফেল। শৈশব থেকেই ইংরেজি শেখার জন্য সব সময় চীনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করতেন। এ ছাড়া নিয়মিত ইংরেজি শোনার উদ্দেশে একটি রেডিও কেনেন। এভাবে ইংরেজি ভালো শিখতে পারলেও গণিতে বার বার ফেল করতেন তিনি। চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়ে ৩০ বার ব্যর্থ হয়েছেন। চীনে যখন কেএফসি আসে তখন ২৪ জন চাকরির জন্য আবেদন করেন, এর মধ্যে ২৩ জনের চাকরি হয়, শুধু একজন বাদ পড়েন, আর সেই ব্যক্তিটি জ্যাক মা। এমনও দেখা গেছে চাকরির জন্য পাঁচজন আবেদন করেছেন তার ভিতর চারজনের চাকরি হয়েছে, বাদ পড়েছেন শুধুই জ্যাক মা। প্রত্যাখ্যানের পর প্রত্যাখ্যান দেখেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ১০ বার আবেদন করেও প্রত্যাখ্যাত জ্যাক। অথচ বর্তমানে তিনি হলেন পৃথিবীর অন্যতম বড় অনলাইনভিত্তিক কোম্পানি আলিবাবা ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। জীবনে এতবার ব্যর্থ হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা থেকে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি। অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে তিনি আজকের অবস্থানে এসেছেন। যেই জ্যাক মা চাকরির জন্য ৩০ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন সেই জ্যাক মার প্রতিষ্ঠান আলিবাবা ডটকম চীনে নতুন করে ১৪ মিলিয়ন চাকরি তৈরি করেছে।

1509061441534675জ্যাক মা ১৯৬৪ সালে পশ্চিম চীনের হুয়াং ঝু প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। ছাত্র হিসেবে জ্যাক মা ছিলেন ব্যাকবেঞ্চার। জাতীয় কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় তিনি দুবার ফেল করেন। তৃতীয়বার পাস করার পর তিনি হুয়াং ঝু টিচার্স ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নিয়ে ১৯৮৮ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়। কলেজে পড়া অবস্থায় স্ত্রী ঝাং ইং এর সঙ্গে পরিচয়, অতঃপর পরিণয় এবং পাস করার পর বিয়ে।

জ্যাক মা যখন আলিবাবা প্রতিষ্ঠা করেন তখন সবাই তাকে পাগল বলত। টাইম ম্যাগাজিন জ্যাক মা-কে পাগল জ্যাক বলে অভিহিত করেছিল। কিন্তু জ্যাক মা আশাহত হননি। জ্যাক মার একটি বিখ্যাত উক্তি— ‘আমার মনে হয় পাগল হওয়াই ভালো। আমরা পাগল কিন্তু নির্বোধ নই।’

১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পরিচিত হন ইন্টারনেট প্রযুক্তির সঙ্গে। জ্যাক নেটে বিয়ার সম্পর্কে তথ্য জানতে সার্চ করলেন। তিনি দেখলেন, ইন্টারনেটে চাইনিজ ভাষা ও চীন নিয়ে কোনো তথ্যই নেই! তখন চায়না পেজ নামের একটি ওয়েবসাইট খুলে রপ্তানিমুখী চীনা কোম্পানিগুলোর তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করলেন। এটি ছিল চীনের প্রথম ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে তিনি সতেরোজন বন্ধুকে নিয়ে আলিবাবা নামের ওয়েবসাইট চালু করেন। এভাবেই শুরু হয় আলিবাবার পথচলা। এই কোম্পানিটিই বর্তমান বিশ্বে ই-কর্মাসের সফলতার দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আলিবাবার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করেই জ্যাক চীনের সবচেয়ে বড় ধনী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আলিবাবার ১২ ভাগ শেয়ার বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। এই শেয়ারের মোট মূল্য ২০ বিলিয়ন ডলার।

আমদানিকারকরা আলিবাবা পেজে পাওয়া তথ্যগুলো জেনে ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। এক বছরের মধ্যেই গোল্ডম্যান সেকস ও সফটব্যাংক মোট ২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে জ্যাক মা-এর এই উদ্যোগে। ধীরে ধীরে ই-কমার্স বাণিজ্যের গুরু হয়ে উঠলেন জ্যাক মা। সহকর্মীদের ভাষ্যমতে, জ্যাক খুব ভালো বক্তা। তিনি নিজের স্বপ্নগুলো সবার মধ্যে খুব সহজেই ছড়িয়ে দিতে পারেন। জ্যাক মা নিজের সংগঠনের সহকর্মীদের আনন্দে রাখতেও পটু। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুযোগ পেলেই নিজের সহকর্মীদের মুখে হাসি ফোটাতে তৎপর থাকেন জ্যাক।

প্রতিষ্ঠানের কাজকে সহজতর করার জন্য ২০০০ সালে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন জ্যাক মা। এরপর তিনি আলিবাবার চেয়ারম্যান হন। এ প্রসঙ্গে জ্যাক বলেন, একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার চেয়ে একজন ভালো চেয়ারম্যান হওয়াতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ আছে।

জ্যাক মা-এর সফলতার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, মানুষের সমস্যা সমাধানের প্রতি তার আগ্রহকে। তিনি চীনের ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিলেন। আর এই উদ্দেশ্য সফল করার মাধ্যম হলো তথ্যপ্রযুক্তি। জ্যাক মা মনে করেন, কঠোর পরিশ্রম কিংবা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়ার কারণে আমরা সফল হইনি। আমরা পেরেছি গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণে। আর আমরা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যকে সম্মান জানাতে পেরেছি। আমরা বিশ্বাস করি, সাধারণ মানুষই অসাধারণ নানা কাজ করতে পারে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment