কৃষকপুত্রের মন্ত্রীত্ব লাভ

কৃষকপুত্রের মন্ত্রীত্ব লাভ

  • লিডারশিপ ডেস্ক

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সুপরিচিত মুখ মোস্তফা জব্বার। তিনি বিজয় বাংলা কিবোর্ডের প্রবর্তক ও আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি তিনি। মোস্তফা জব্বার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের উপদেষ্টা।

১৯৪৯ সালের ১২ অগাস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামের এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া মোস্তাফা জব্বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ওই সময়ই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

স্বাধীনতার পর সূর্যসেন হলের নাট্য ও প্রমোদ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন জব্বার। ছাত্রজীবনে সাপ্তাহিক জনতায় লেখালেখিতে যুক্ত থাকা মোস্তাফা জব্বারের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল সাংবাদিকতা দিয়ে, সাপ্তাহিক গণকণ্ঠ পত্রিকায়। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গণকণ্ঠ বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন সময়ে ট্র্যাভেল এজেন্সি, মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসায় যুক্ত হন জব্বার। ট্র্যাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাবের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন একসময়।

১৯৮৭ সালে তিনি কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবসায় প্রবেশ করেন এবং পরের বছর ১৬ ডিসেম্বর তিনি প্রকাশ করেন বিজয় বাংলা কিবোর্ড ও সফটওয়্যার, যা এখন বহুল ব্যবহৃত।

মোস্তাফা জব্বার জড়িত আছেন তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়ক লেখালেখিতেও। বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে থাকা আইসিটি বিষয়ক বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক তিনি।

তার প্রকাশিত  বইয়ের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার কথকতা, ডিজিটাল বাংলা, একুশ শতকের বাংলা, বাঙ্গালী ও বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, একাত্তর ও আমার যুদ্ধ এবং উপন্যাস নক্ষত্রের অঙ্গার।

লেখালেখি ছাড়াও টেলিভিশনে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে আসছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক এই সভাপতি।

আটষট্টি বছর বয়সী মোস্তাফা জব্বার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রার সঙ্গে আছেন শুরু থেকেই।

প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করে আসা জব্বার বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডেরও সদস্য।

আনন্দ কম্পিউটার্সে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন জব্বার। পরের বছর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার যুক্ত করে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিকাশে ভূমিকা রাখায় বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মোস্তাফা জব্বার।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (২ জানুয়ারি ২০১৮) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা নারায়ন চন্দ্র চন্দ ও লক্ষ্মীপুরের সাংসদ এ কে এম শাহজাহান কামাল। এছাড়া রাজবাড়ীর এমপি কাজী কেরামত আলী শপথ নেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে।

সংসদ সদস্য না হওয়ায় মোস্তাফা জব্বার সরকারে এসেছেন চতুর্থ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে। মন্ত্রিসভার পুরনো সদস্যদের মধ্যে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিও টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী।

Sharing is caring!

Leave a Comment