‘দক্ষিণ কোরিয়া পেরেছে, আমরা পারিনি’

‘দক্ষিণ কোরিয়া পেরেছে, আমরা পারিনি’

  • লিডারশিপ ডেস্ক

১৯৮৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা একই ছিল। এখন দক্ষিণ কোরিয়া পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর একটি, অপরদিকে বাংলাদেশ এখনো উন্নয়নশীল দেশ। দক্ষিণ কোরিয়া যা করতে পেরেছে, আমরা তা পারিনি। তারা গ্রামের অর্থনীতির উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদেরও সময় এসেছে গ্রামকে গুরুত্ব দেওয়ার।

গতকাল মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭১ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘একাডেমিয়া লেকচার সিরিজ’ এর উদ্বোধনী পর্বের প্রধান বক্তার বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট এবং ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী।

উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে অনুপ্রাণিত করতে দেশের প্রথিতযশা নির্বাহীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার কঠোর সংগ্রামী জীবন ও অধ্যাবসায়ের বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতার নানা দিক তুলে ধরতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যারিয়ার ডেভেলাপমেন্ট সেন্টার শুরু করছে একাডেমিক লেকচার সিরিজ।

একাডেমিক লেকচার সিরিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বাণিজ্য ও উদ্যোক্তাবৃত্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মাসুম ইকবাল, ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক আবু তাহের খান প্রমুখ।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিসর দিন দিন বাড়ছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মোট জিডিপি ছিল মাত্র ৫০০ মিলিয়ন সেখানে এখন জিডিপির পরিমান ৩২০ বিলিয়ন। এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রযুক্তি আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দিয়েছে। এখন মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপ ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং ইত্যাদি সবই করা হচ্ছে প্রযুক্তির সহায়তায়। ভবিষ্যতে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন মো. আরফান আলী। এসময় তিনি তরুণ শিক্ষার্থীদেরকে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও সহজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগ অত্যন্ত স্বনামধন্য। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে আরও উন্নত করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উন্নয়নকে টেকসই করতে হবে উল্লেখ করে মো. আরফান আলী আরো বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। কারণ গ্রামের উন্নয়ন না হলে অর্থনীতির উন্নয়ন টেকসই হয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় মো. আরফান আলী দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া দ্রুত উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে কারণ তারা গ্রামের অর্থনীতির উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছে।

মো. আরফান আলী ভবিষ্যৎবাণী করে বলেন, দশ থেকে পনের বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ব্যাংক একাউন্ট থাকবে এবং বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকবে। এটা হবে প্রযুক্তির কারণে। তাই শিক্ষার্থীদেরকে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, ফিনট্যাক ইত্যাদির ওপর ক্যারিয়ার গড়ার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে ড. মো. সবুর খান বলেন, আজকের অনুষ্ঠান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। চাকরির মধ্যে থেকেও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ মো. আরফান আলী। তিনি ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নিয়ে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থাপকেই পাল্টে দিয়েছেন। তাঁর উদ্যোগ এখন অন্যান্য ব্যাংক অনুসরণ করছে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদেরকে বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিলে সব সময় নোট সঙ্গে রাখতে হয়। কারণ তাঁদের প্রতিটি কথাই মূল্যবান। কথাগুলো নোট আকারে লিখে রাখলে অনেক কিছু শেখা যায়।

ড. মোঃ সবুর খান আরো বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দেশের সফল উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সম্পৃক্ত রাখে। কিন্তু আমাদের এই সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় চেষ্টা করছে এই সংস্কৃতি গড়ে তোলার। ড.মো. সবুর খান বলেন, ইন্ড্রাস্ট্রি যে ধরনের লোকবল চায়, সে ধরনের লোকবল আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরবরাহ করতে পারছে না। কারণ ইন্ড্রাস্ট্রির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্ক তৈরি করতে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ‘একাডেমিক লেকচার সিরিজ’ আয়োজন করছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ এম ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হোসেইন আহমেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব এজেন্ট ব্যাংকিং আহসান উল আলম, ফার্স্ট অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রুমানা আকতার তুলি, অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চ কৃষ্ণা সাহা, অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আতাউর রহমান, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চ আশরাফ হোসেন এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম গাফফার ইমতিয়াজ চৌধুরী।

Sharing is caring!

Leave a Comment