মা দিবস স্পেশাল

মা দিবস স্পেশাল

  • মোঃ সাইফ 

মা’দের বলা সবচেয়ে দক্ষ ব্যবস্থাপক। সকাল থেকে রাত বিরামহীন জীবন যার। জুতোর ফিতে থেকে গলায় টাই বেঁধে দেয়ার কাজে পর্যন্ত আমাদের নির্ভর করতে মায়ের উপর। সকালে আপনি ঘুম থেকে জাগবার আগেই যিনি জেগে যান। সকালের চা-নাস্তা বানানো থেকে রাতে খাবারের পর এটো প্লেট গুলো ধুয়ে যিনি সবার পরে ঘুমোতে যান তিনিই আমাদের মা। এর বাইরেও মায়েরা অনেক কাজ করেন। 


সম্প্রতি মা দিবস উপলক্ষ্যে এন্ট্রাপ্রেনার্স ওয়েবসাইটে এমন কয়েকজন মায়ের কথা উঠে এসেছে যারা সংসারধর্ম পালন করার পাশাপাশি হয়েছেন বড় উদ্যোক্তা। তাদের নিয়েই আজকের কথামালা…

জ্যাকুলিন স্মিথ

বড় হতে হতে জ্যাকুলিন স্মিথ স্বপ্ন দেখতেন একদিন তার একটি প্রতিষ্ঠান হবে। কসমেটিক সামগ্রীর কোম্পানি। শুরুটা করেছিলেন তবে সে পথ সহজ ছিলো না কখনোই। ব্যবসায়ের অর্থ জোগাড় করতেই তাকে অনেকটা সময় হিমশিম খেতে হয়েছে। এর মধ্যে তিন তিনজন সন্তানের দেখাশুনার ভার তার উপর। ঘুম থেকে ভোর চারটায় উঠেন নিয়মিত। এরপর সব কিছু গুছিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসেন। তারপর অফিসে যান। অফিস থেকে ফিরেন দুপুর তিনটায়। স্কুল থেকে বাচ্চাদের নিয়ে এসে তাদের পড়াশুনা,বাড়ির কাজ এসব নিয়ে বসেন। এত কঠিন বাস্তবতাকে সামলে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রতিষ্ঠান “লিকুইড প্যালিসেড”কে। যেটি বর্তমানে একটি আন্তজার্তিক কসমেটিক কোম্পানি !

লিসা গ্রিনওয়াল্ড

বাচ্চার বয়স যখন দুই-তিন বছর তখন লিসা একটি ব্যাপার লক্ষ্য করলেন। তার সন্তান যা কিছুই দেখে চোখের সামনে সেটা নিয়েই খেলতে এবং মুখে নিয়ে চুষতে পছন্দ করে। এর মধ্যে তার গহনা অন্যতম। তিনি অবশ্য বিরক্ত হয়ে গহনাগুলো লুকিয়ে ফেলতেন না। তার বদলে নতুন কিছু করতে চাইলেন। তিন আগের গহনা সামগ্রী বদলে রঙ্গিন , নরম সিলিকনের জুয়েলারী বানানো শুরু করলেন । এটি তার সন্তানের জন্য এক নতুন ধরনের খেলার সামগ্রী হিসেবে পরিনত হলো। এই আইডিয়া কাজে লাগিয়ে তিনি একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নিলেন। নাম “চিউবেডস”। মজার এবং নিরাপদ পন্য উৎপাদন শুরু করলেন বিভিন্ন পরিবারের জন্য। লিসা এই প্রতিষ্ঠান এর জন্য কাজ করেন সন্ধ্যার পর। এছাড়া ছুটির দিনগুলোকে তিনি কাজে লাগান যাতে ব্যবসায়ের কাজে তার পারিবারিক কাজ এ ছন্দপতন না হয়।

ক্যানি লুই

“বান্ডেল অরগ্যানিকস” একটি ক্যাফেইন, চা এবং জুস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যার মালিক ক্যানি লুই। ক্যানির এই পন্যগুলোর একটি আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। এই পন্যগুলো মূলত গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়। গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। অনলাইনের মাধ্যমে পন্য গুলো তিনি বিক্রয় করে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন খুচরা ও বড় বড় পাইকারী দোকান এবং শোরুমগুলোতেও জনপ্রিয় হয়েছে তার পন্য। পরিবার সন্তান নিয়ে ব্যবসায়ের কাজ করা খুবই মুশকিল। এই জন্যে তিনি গুরুত্ব বুঝে সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসায়ের পরবর্তী কাজ কি হবে সেটি নির্ধারন করেন। ক্যানি লুই এর স্বামী তার এই ব্যবসায়িক কাজকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন একই সাথে দিচ্ছেন অনুপ্রেরণাও।

মিশেল ওয়েলশ

মিশেলের তিন সন্তান। প্রত্যেকেই যখন ছোট ছিলো পার্কে ঘুরতে গেলে তাকে ভয়ে থাকতে হতো এই বুঝি তারা হারিয়ে যাবে ভীড়ের মধ্যে। সন্তান হারিয়ে গেলেও যাতে তাকে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় এই জন্য তিনি একটি বুদ্ধি করলেন। তাদের হাতে যোগাযোগ নাম্বার লিখে দিতেন। “হারিয়ে গেলে দয়া করে এই নাম্বারে…”! এই পরিকল্পনাটি তিনি তার কিছু প্রতিবেশীদের সাথে শেয়ার করেন। এক পর্যায়ে শুরু করলেন “সেফটি-ট্যাট” নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কলম দিয়ে না লিখে ছোট বাচ্চাদের হাতে কিংবা শরীরের কোনো জায়গায় তারা একটি অস্থায়ী ট্যাটু এঁকে দেয়ার কাজ শুরু করেন। ট্যাটু-তে শিশুটি হারিয়ে গেলে কিভাবে যোগাযোগ করতে হবে সেটিরই উল্লেখ থাকে।

জ্যাকি লিবারম্যান

চার সন্তানের জননী জ্যাকি নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারেন। মায়েদের পক্ষে প্রাকৃতিক এবং পরিবেশ-বান্ধব পন্য বাচ্চাদের হাতে তুলে দেয়া কিছুটা কঠিনই বটে। যা আছে সেগুলোও সানন্দে ব্যবহার উপযোগী নয়। জ্যাকি তার নিজের সন্তানের নিরাপত্তা এবং আরামপ্রদতা বিচার করে দ্রুত পানি শুষে নেয় এবং পানি-নিরোধক এক ধরনের ডায়াপার বানালেন। তার মতো অন্যান্য মায়েরাও একই সমস্যায় পড়ছে দেখে তিনি তার পরিকল্পনাকে বিস্তৃত করতে চাইলেন এবং সেটিকে ব্যবসায় রুপ দিলেন। “বামকিনসডটকম” এর যাত্রা এভাবেই শুরু হয়। জ্যাকির এই ওয়েবসাইটে বাচ্চাদের সামগ্রী বেচাকেনা হয়। বর্তমানে বামকিনস মায়েদের প্রথম পছন্দ যারা বাচ্চাদের জন্য চান আরামদায়ক নিরাপদ এবং টেকসই পন্য। চার সন্তানের মা হয়ে ব্যবসায় চালনা কঠিন হলেও তিনি স্বাচ্ছন্দেই চালিয়ে যাচ্ছন। তার মতে, “পরিবার ঠিক রেখে যেকোনো কাজ করলে সেটিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে এগিয়ে নেয়া সম্ভব,তবে প্রথম গুরুত্বটা থাকবে পরিবারের প্রতিই !”

Sharing is caring!

Leave a Comment