তোমার মস্তিষ্ক ব্যবহার কর : বেঞ্জামিন কার্সন

তোমার মস্তিষ্ক ব্যবহার কর : বেঞ্জামিন কার্সন

  • মারুফ ইসলাম 

বেঞ্জামিন সলোমন কার্সন। জন্ম ১৯৫১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে। মাত্র ৮ বছর বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদ হওয়ার পর মায়ের কাছেই বেড়ে ওঠেন কার্সন। নিদারুণ দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের মেডিকেল স্কুল থেকে চিকিৎসাবিদ্যা সম্পন্ন করেন। নিওরোসার্জনের পথিকৃৎ চিকিৎসক হিসেবে এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত তিনি


ভালো ছাত্র বলতে যা বোঝায় তা আমি কখনোই ছিলাম না। আমি ছিলাম ভয়ংকর গাধা টাইপের শিক্ষার্থী। তারপরও আর দশজন শিক্ষার্থীর মতো আমিও স্বপ্ন দেখতাম যে কোনো উপায়ে একজন চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু বাস্তবতা মোটেও আমার অনুকূলে ছিল না। আমার বেশ মনে আছে, এরকম রূঢ় বাস্তবতা সত্ত্বেও আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেট্রয়েট সিটি হাসপাতাল কিংবা বোস্টন সিটি হাসপাতালে বসে থাকতাম। এর মানে হচ্ছে, ইন্টার্ন-ডাক্তার না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা। বুঝতেই পারছ, আমি ছিলাম ডাক্তারের সহকারী। তবে এসব নিয়ে আমার মন খারাপ হতো না মোটেও।
ডেট্রয়েট শহরের ভেতর মায়ের সঙ্গে একা এক বাড়িতে থাকতাম আমি। আমাদের ঘরভর্তি ছিল ভয়ানক দারিদ্র্য। আমার মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে ছিল তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত। আর আমি এতটাই জঘন্য টাইপের ছাত্র ছিলাম যে তোমরা এমন ছাত্র তোমাদের জীবদ্দশায় কখনও দেখনি। আমি ছিলাম সত্যিকারের একটা গাধা। এ ব্যাপারে আমার সহপাঠী এবং শিক্ষকরাও একমত ছিলেন। তারা আমাকে ডাকত ‘সাক্ষী গোপাল’ নামে। তারপরও সৌভাগ্যক্রমে আমি আমার স্বপ্ন দেখার যাত্রাকে অব্যাহত রেখেছিলাম।
আগেই বলেছি, আমার মা মাত্র তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। আমার পঞ্চম শ্রেণীর মিডটার্ম পরীক্ষার রিপোর্ট কার্ড যখন মায়ের হাতে এসেছিল, মা তখন বিচলিত হয়ে উঠেছিলেন। কারণ আমি মোটামুটি সব বিষয়েই ফেল করেছিলাম। মায়ের কোনো সম্পদ ছিল না। তারপরও তিনি আমাদের দুই ভাইকে শহরে রেখেছিলেন যেন আমরা মানুষের মতো মানুষ হতে পারি। ভাবলে অবাক লাগে, মাত্র তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়–য়া আমার মা কী কঠিন কঠোর জীবনই না যাপন করেছেন!
তখন বেশির ভাগসময়ই আমাদের গৃহবন্দি থাকতে হতো। ঘরে বসে বসে শুধু বই পড়তে হতো। আমাদের বন্ধুরা বাইরে খেলাধুলা করত। তারা জানত, আমাদের বাইরে বের হওয়া বারণ। ফলে আমাদের যন্ত্রণা দেয়ার উদ্দেশ্যে তারা অনেক উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করত। প্রথমদিকে তাদের খুব ঘৃণা করতাম, বিরক্ত হতাম। পরে আমি অবশ্য ব্যাপারটা উপভোগ করতে শুরু করি।
আমাদের কোনো অর্থকড়ি ছিল না। ছিল শুধু বই। সেই বইয়ের পৃষ্ঠার ভেতর দিয়ে আমি যে কোনো জায়গায় যেতে পারতাম। যে কেউ হতে পারতাম। যা খুশি তাই করতে পারতাম। বই পড়তে পড়তে আমি শিখে ফেলেছিলাম কীভাবে কল্পনার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হয়। শুধু পড়তে পড়তেই বুঝে ফেলেছিলাম, টেলিভিশন ছাড়াই অনেক কিছু দেখা সম্ভব। শুধু কল্পনাশক্তি থাকলেই চলে।
এরপর আমি মানুষকে পাঠ করতে শিখেছিলাম ল্যাবরেটরিতে। একটি পানপাত্র থেকে কিছু রাসায়নিক ঢালো বোতলের মধ্যে, তারপর বৈদ্যুতিক সংযোগ দাও, চোখ রাখ অণুবীক্ষণ যন্ত্রে এবং আবিষ্কার কর ছায়াপথ জাতীয় কিছু। এভাবে আমি বিস্তর জ্ঞান অর্জন করেছিলাম। এভাবে আমি নিজেকে আলাদা করতে পেরেছিলাম তাদের থেকে যারা আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল। এভাবে আমি নিজেকে দেখতে শুরু করেছিলাম একজন বিজ্ঞানী অথবা চিকিৎসক হিসেবে।
এসব সম্ভব হয়েছে শুধু আমার মায়ের কারণে। মা কখনোই কোনো অজুহাত শুনতেন না। পরিস্থিতি কী ছিল সেটা তার কাছে কোনো বিষয়ই নয়, তুমি যদি কোনো অজুহাত নিয়ে তার কাছে যাও তিনি একটা কথাই জিজ্ঞেস করবেন, ‘তোমার কি একটি মস্তিষ্ক আছে?’ যদি তুমি বলো, হ্যাঁ। তিনি তখন বলবেন, ‘মস্তিষ্কের নিকটবর্তী হও। তোমার উচিত মস্তিষ্ককে ব্যবহার করা।’
একটা পর্যায়ে গিয়ে আমি বুঝে ফেলেছিলাম, তার কাছে কোনো অজুহাতই আসলে খাটবে না। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই সৃজনশীল হয়ে উঠেছিলাম।
সূত্র : অ্যাকাডিম অব অ্যাচিভমেন্ট
ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ মারুফ ইসলামfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment