ফরিদার এখন সুখের দিন

ফরিদার এখন সুখের দিন

  • লিডারশিপ ডেস্ক

সময়টা ১৯৮২ সাল। বয়স তখন ১৪। সে বয়সেই বিয়ে হয় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা ফরিদা আলমের। ১৯৯০ সালে স্বামীর চাকরির সুবাদেই সিলেট শহরে আসেন ফরিদা। স্বামী সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কেয়ারটেকার কাম উচ্চমান সহকারী পদে চাকরি করতেন। বাসা ভাড়া আর খাওয়াদাওয়ার ব্যয় হয়ে যেত প্রায় সব। ফলে সংসারে টানাটানি লেগেই ছিল।

স্বামীর অর্থনৈতিক দুরবস্থা আর সামাজিক কুসংস্কারের কারণে ফরিদার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তিনি বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজের সন্ধান করতে পারতেন না। পড়াশোনা যে খুব একটা করেছেন, তা-ও নয়। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাই বিকল্প চিন্তা থেকেই তিন মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে সিলেট শহরের সোবহানীঘাট এলাকার ভাড়া বাসায় একটি অস্থায়ী টেইলার্সের ব্যবসা দেন। প্রথম দিকে তিনি পাড়া-প্রতিবেশীর কাপড় সেলাই করতেন। ভালো কাজের জন্য এ সময় অনেকে তাঁকে উৎসাহ দিয়ে ব্যবসা বড় করার পরামর্শ দেন।

আর্থিক অসংগতির কারণে ফরিদার ব্যবসা বড় করা তো দূরের কথা, ভালোভাবে দুই ছেলের পড়াশোনাই সামলাতে পারছিলেন না। তবে তিনি দমে যাননি। বাজারের খরচ থেকে অল্প অল্প করে টাকা বাঁচিয়ে ২০০২ সালের দিকে নগরের উপশহর এলাকার সামাদ ম্যানশনের নিচতলায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোনালিসা লেডিস টেইলার্স অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’। তখন পুঁজি ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। একটি মেশিন কিনে ফরিদার ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘোরে। পসার বাড়ে তাঁর ব্যবসার। ২০১২ সালের দিকে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোনালিসা বুটিকস’ নামের আরেকটি দোকান। এখন তাঁর অধীনেই কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ২০ জনের।

ফরিদার সংসারে এখন সুখ আছে। উপার্জনের টাকায় ২০১১ সালে একটি প্রাইভেট কার ক্রয় করেন এবং ২০১২ সালে শহরতলির খাদিমনগর এলাকায় ১০ শতাংশ জায়গাও কেনেন তিনি। তবে ফরিদা কেবল নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়েই দায়িত্ব শেষ মনে করেননি। তিনি সহায়হীন নারীদের সমাজে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। কোনো ধরনের টাকা ছাড়া নিজে অন্তত তিন শতাধিক দুস্থ ও দরিদ্র নারীদের টেইলার্স ও বুটিকের প্রশিক্ষণ দেন। এ প্রশিক্ষণ পেয়ে অনেকে এখন প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর এখান থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে ১১ জন তরুণ কাজ করে চলেছেন।
ফরিদা এখন বাংলাদেশ উইমেন্স চেম্বার অব কমার্সের সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৩ সালে ঢাকার ‘সংশপ্তক’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘উদ্যোক্তা-সম্মাননা’ অর্জন করেছেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স কর্তৃক ‘বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা’ ঘোষিত হন। ২০১৪ সালে উপজেলা পর্যায়ে সিলেট সদর থেকে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ পদকেও ভূষিত হন।

ফরিদা আলম বলেন, ‘ব্যবসা শুরুর দিকে শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদ বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। তাঁরা বাড়ির বউকে ঘরের বাইরে কাজ না করার পরামর্শ দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন আর্থিকভাবে আমি লাভের মুখ দেখতে থাকি, সংসারে শান্তি ফিরতে থাকে, তখন তাঁরাও আমাকে উৎসাহ দেন। এখন তো বড় ছেলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিবাকরি করে আমার কাজে সহায়তা করছে। ছোট ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে পড়ছে। স্বামী মো. শামসুল আলম ২০০৯ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সার্বক্ষণিক আমাকে সহায়তা করছেন। আমার সংসার এখন সুখ-শান্তিতে টইটম্বুর।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment