তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থান

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থান

  • লিডারশিপ ডেস্ক

চাঁদপুরের মেয়ে সায়মা মুহিব ঢাকা সিটি কলেজ থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। কলেজে পড়ার সময়ে ২০১১ সালে ইন্টারনেটে ইউটিউব ভিডিও এবং আর্টিকেল পড়ে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজ শেখেন। ওডেস্কে প্রোফাইল খুলে শুরু করেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজ। বর্তমানে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজও করেন। ওডেস্কে সর্বোচ্চ ৫ রেটিংয়ের প্রোফাইল থাকা সায়মা মুহিব বর্তমানে দিনে ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করেন।

সায়মা মুহিব বলেন, সংসার করার পাশাপাশি পুরোদমে চলছে আমার ফ্রিল্যান্সিং পেশা। প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টাকার বেশি আয় হয়। ফ্রিল্যান্সার ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্ভব না। তাই দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরিতে আগামীতে কাজ করতে চাই। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছি বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০১৪।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মহিলা সংস্থা পরিচালিত ‘তথ্য আপা : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প’-এর ওয়েব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, নারীর তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় সরকারি উদ্যোগে ফেব্র“য়ারি ২০১৩ থেকে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৮২ হাজার ৯২০ নারীকে তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদান করা হয়েছে। নারীরা তথ্য প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার বা আইসিটি শিক্ষা গ্রহণ করে নিজ উদ্যোগে আউটসোর্সিং, কম্পিউটার রিলেটেড ব্যবসার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। কৃষি, স্বাস্থ্য, আইন, জেন্ডার ও ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন উপজেলায় উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে এক বছরে ১০ হাজার ৭৮০ নারীকে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকারের তথ্য আপা প্রকল্পে নানা বয়সী নারীরা তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা নিতে আসেন, তবে ১৮-৩৫ বছর বয়সী নারীরা বেশি আসেন। তথ্য প্রযুক্তি বা আইসিটি শিক্ষা গ্রহণ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে গিয়ে অনেক নারীই অর্থ সংকটে ভোগেন। এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশ সরকার উদ্যোক্তাদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক তৈরি করেছেন। এই ব্যাংকে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বা ট্রেনিংপ্রাপ্তদের ঋণ প্রদানে অগ্রাধিকার রয়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকই তথ্য প্রযুক্তি তথা আইসিটি প্রতিষ্ঠান বা ফার্মকে খুব কম সুদে ঋণ প্রদান করে।

জাতীয় মহিলা সংস্থা পরিচালিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পে ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ৩০ জেলায় ১৮ হাজার ১০৯ নারীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ বছর দেশের প্রত্যেক জেলায় ১৯ হাজার ২০০ নারীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম চলছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ’-এর মাধ্যমে শিক্ষিত নারীদের তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তা তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য ওয়েবপেজ : http://www.jms.gov.bd/bn/it-training নামক এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষিত নারীকে কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান ও আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করা।

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আইসিটিতে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য অনেক কাজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ডিনেট। এ প্রতিষ্ঠানটির তথ্য-কল্যাণী তথা ইনফোলেডি প্রকল্প দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিবিসির একটি রিপোর্টে বলা হয় : ‘বাংলাদেশের কিছু গ্রামে এখন দেখা যায় অন্যরকম এক দৃশ্য। সাইকেল চালিয়ে একজন তরুণী যাচ্ছেন মানুষের বাড়ি বাড়ি, তার সঙ্গে ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা নেটবুক। তিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, কখনও গ্রামের মেয়েদের বা স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শেখাচ্ছেন কীভাবে ব্যবহার করতে হয় কম্পিউটার। এদের নাম দেয়া হয়েছে ‘ইনফো-লেডি’ বা ‘তথ্য-কল্যাণী’। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবাকে তারা নিয়ে যাচ্ছেন সরাসরি গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায়।

এ প্রসঙ্গে ডিনেট এর প্রোগাম এসোসিয়েট ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, গাইবান্ধার সাঘাটা এবং নেত্রকোনার পূর্বধলা দুটি গ্রাম নিয়ে ২০০৯ সালে ইনফো-লেডি’র কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এর সংখ্যা ছয়। গাইবান্ধা, গাইবান্ধা সদর, বগুড়া. নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার এবং চিটাগাংয়ে ইনফো-লেডির সংখ্যা ২০ থেকে বেড়ে ৫০ এ দাঁড়িয়েছে। একজন তথ্যকল্যাণী হলেন, তথ্য প্রযুক্তি. স্বাস্থ্য প্রযুক্তি এবং উদ্যোক্তা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন নারী।

বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বাংলাদেশে গ্রামীণফোন এক দশকেরও বেশি আগে গ্রামীণ নারীদের মোবাইল ফোন দিয়েছিল, যাতে নারীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে উদ্যোক্তা হতে পারেন। এ ধরনের প্রকল্প জনপ্রিয় হয়েছে সেনেগাল, মরক্কো বা ঘানাতে। সেখানে নারীরা খুব অল্প পুঁজি নিয়ে মোবাইল ফোনের দোকান চালু করেছেন। আইসিটি ব্যবহার করে বিশেষ করে নারীদের জন্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেয়ার একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, এতে অল্প পুঁজি লাগে।

ডিজিটাল আইটি বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোবারক হোসেন শাহীন বলেন, নারীর তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো। এ পর্যন্ত লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং, অনলাইনে আয়, ঘরে বসে রোজগার ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোগে শত শত নারী আউটসোর্সিং ইনকাম করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অনেকে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। দেশে বসে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন যেমন সম্মানের তেমনি নারীর জন্য গৌরবেরও। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment