সোহান একজন জলবায়ুযোদ্ধা

সোহান একজন জলবায়ুযোদ্ধা

  • লিডারশিপ ডেস্ক

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে এবারের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে অংশ নিয়ে ‘ওয়াটার এসডিজি ফান্ড’ নামের একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওয়াটার এসডিজি নিয়ে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে সহায়তা চেয়ে ৮০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের যোগ দেওয়া এই শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনার পূর্বে পানি বিষয়ে দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে এনেছেন এক বাংলাদেশি যুব সংগঠক। মরক্কোর রাজকীয় শহর মারাকাশে অনুষ্ঠিত ‘ইয়ুথ অন ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট’ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ৫ বিশ্বসেরা তরুণের একজন সোহানুর রহমান।

ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে অনেক দূরে নথুল্লাবাদ গ্রাম। ইন্টারনেট সুবিধা তো দূরের কথা, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে গ্রামটিতে খবরের কাগজও পৌঁছায় না নিয়মিত। দু-চারটি বাড়িতে টিভি থাকলেও নেই স্যাটালাইট সুবিধা। অভাব আর ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলার মতো প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাঁচে এখানকার লড়াকু মানুষ। এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা এক দুরন্ত কিশোর অনুভব করল, পাঠ্যবইয়ের বাইরের জগতটাকে চিনতে শেখা দরকার।

‘কাজের প্রথম থেকেই অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। এখনো যে নেই তা নয়। তবে আমরা চাইলেই অনেক কিছু বদলে দিতে পারি। আর বেশিরভাগ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসছে আমাদের তরুণদের হাত ধরেই,’ বলছিলেন সোহান। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ন্যাশনাল চিল্ড্রেনস টাস্কফোর্স নামের একটি জাতীয় শিশু সংগঠনে কাজ করার সুবাদে শিশু অধিকার নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে সেখানে লেখালেখি করতে করতেই শিশু সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ পার্লামেন্ট নামে একটি যুব প্লাটফর্ম ও কৃষাণী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি উদ্যোগ রয়েছে।

প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ-২১-এ অংশ নেওয়া যুব প্রতিনিধিদের প্রস্তুতকৃত হোয়াইট পেপার রেকমেন্ডেশনের উপর কপ-২২-এ অংশগ্রহণকারী ১৭৮টি দেশের তরুণদের মাঝে গ্লোবাল ইয়ুথলিড প্রজেক্ট কম্পিটিশনের আয়োজন করে সুইডেন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশিপ। যুব সম্প্রদায়কে পানি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে তাদের ক্ষমতায়ন এবং দক্ষতা উন্নয়নই ছিল এই গ্লোবাল কম্পিটিশনের মূল লক্ষ্য। যুবদের ক্ষমতায়িত করতে অনলাইনে প্রকল্প জমা দেন সোহান। ২০৩০ সাল মেয়াদি এসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে পানি ও স্যানিটেশন ছয় নম্বরে রয়েছে। এসডিজি-৬-এ সবার জন্য স্যানিটেশন ও পানির সহজলভ্যতা এবং এর টেকসই ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে। নিরাপদ পানীয় জল ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় সবার অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সম্প্রসারণ, পানি পরিশোধন, দূষিত পানি ব্যবস্থাপনা, পানির অপ্রতুলতা ও কার্যকর ব্যবহার, পানির উত্সসমূহের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, জলজ ব্যবস্থা সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে এতে। পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনায় কমিউনিটি ভিত্তিক অংশগ্রহণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।

জমাকৃত কয়েক হাজার প্রকল্প অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর জুরি বোর্ড বাংলাদেশের সোহানুর রহমানসহ ৫ যুবনেতাকে ইয়ুথ অন ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ঘোষণা করে গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির বিষয়টি কপে ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলন করেছে এবং গত ৯ নভেম্বর তাদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছে। বিজয়ীরা প্রত্যেকে এক হাজার ইউরো অনুদান হিসেবে পাবেন। এ অনুদান দিয়ে সোহান যুব বিশেষজ্ঞ হিসেবে ‘সেইফ ওয়াটার ফর লাইফ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন। বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশিপের তত্বাবধান এবং উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির বাস্তবায়নে ছয় মাসব্যাপী এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার লবণাক্ততা প্রবণ শরণখোলার হতদরিদ্র মানুষের নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিতকল্পে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে তরুণদের সামাজিক সহায়ক হিসেবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এরমধ্যে এ প্রকল্পটি চলতি মাসের শেষদিকে বুদাপেস্ট ওয়াটার সামিটের যুব ফোরামে তুলে ধরা হবে জানিয়েছে ওয়াটার ইয়ুথ নেটওয়ার্ক। অন্য চার অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন কোস্টারিকার ইলোয় ডেভিড মেন্ডিজ গুয়েভারা, টোগোর ফ্লামাই আহিয়াফোর, ঘানার ওকলো এবং রনাভেনটুরি, মলডোবার আইওন বোটানারু।

সোহানুর রহমানের বাবা মো. সুলতান হোসেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আর মা নাছিমা বেগম নারীনেত্রী। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment