‘বাংলাদেশে আইটি শিক্ষার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই’

‘বাংলাদেশে আইটি শিক্ষার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই’

  • লিডারশিপ ডেস্ক

জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশি এহসানুল ইসলাম। সিডিএমএ এবং পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তি থ্রিজি, ফোরজিতে নেতৃত্ব দেওয়া কোয়ালকমের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কোয়ালকম সিডিএমএ টেকনোলজিসের সিনিয়র ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন। এহসানুল ইসলামের জন্ম রাজবাড়ীতে। ১৯৯১ সালে তেজগাঁও আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৩ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। মনবুশো স্কলারশিপ নিয়ে ১৯৯৪ সালে জাপান যান। টোকিও ইউনিভার্সিটি অব ইলেকট্রোকমিউনিকেশন থেকে ২০০০ সালে বিএসসি এবং ২০০২ সালে এমএসসি পাস করেন। একই বছর অ্যাজাইলেন্ট টেকনোলজিতে অ্যাপলিকেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেন। মাঝে ২০০৯ সালে সুকুবা ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে এমবিএ করেন। পরে মটোরোলা, ভোডাফোন, প্যাকেট-ভিডিওতে কাজ করে ২০১৩ সালে কোয়ালকমে সিনিয়র ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন।


কোয়ালকম কী নিয়ে কাজ করে?

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম টেলিকমিউনিকেশন। থ্রিজি, ফোরজি এবং পরবর্তী প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সামগ্রী উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এই প্রতিষ্ঠানের আয়ের বড় অংশ আসে সেমিকন্ডাক্টর চিপ ও থ্রিজি, ফোরজি উদ্ভাবনের প্যাটেন্ট লয়ালিটি থেকে।

এখন ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। এতে বাড়তি সুবিধা কী?

ফাইভজির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, তথ্য আদান-প্রদানের গতি হবে গিগাবিটের বেশি। আজকাল স্মার্টফোনের সাহায্যে নিত্যব্যবহার্য বৈদ্যুতিক পণ্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ক্ষেত্রে পণ্যগুলোকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করার জন্য টুজি, থ্রিজি, ফোরজি, ব্লুটুথ, জিগবি, ওয়াইফাই ইত্যাদি আলাদা আলাদা প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি ইলেকট্রিক ডিভাইস ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইসকে ফাইভজি প্রযুক্তির সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। একই ইন্টারফেস দিয়ে যুক্ত হতে পারবে ফোরজি, ব্লুটুথ, জিগবি, ওয়াইফাইয়ের মতো বিভিন্ন প্রযুক্তি। মোবাইল ডিভাইসেই উপভোগ করতে পারবেন ভার্চুয়াল রিয়ালিটি। যেমন—বাসায় বসেই আপনি জাপান ভ্রমণের অথবা স্কুবা ডাইভিংয়ের অনুভূতি উপভোগ করতে পারবেন।

বেশ কিছু মোবাইল অপারেটর ফাইভজি প্রযুক্তিতে সেবা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২০ সালে জাপানে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবে। জাপানের মোবাইল অপারেটররাও ২০২০ সালের মধ্যে ফাইভজি চালুর লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।

কল সংযোগের ক্ষেত্রে সময় কেমন লাগতে পারে?

এখন এক নম্বর থেকে আরেক নম্বরে কল দিলে প্রথমে কলটি বেজ স্টেশনে যায়। পরে বেজ স্টেশন থেকে সুইচিং রুম হয়ে নম্বরটি খুঁজে বের করে একই বেজ স্টেশন অথবা অন্য বেস স্টেশন হয়ে সে নম্বরে কল প্রেরণ করে। ফাইভজি প্রযুক্তিতে বেস স্টেশনের ধারণা নাও থাকতে পারে। এখন কথা বলতে গেলে অনেক সময় কল কেটে যায়, ভেঙে যায়। তখন এ সমস্যা থাকবে না।

ফাইভজি প্রযুক্তি বাজারে এলে জনজীবনে কেমন পরিবর্তন সাধিত হতে পারে?

ফাইভজি হবে ব্রেকিং থ্রু টেকনোলজি। আমাদের জনজীবনে অভূতপূর্ব পরিবর্তন নিয়ে আসবে। গ্রামের কোনো হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়ে থাকলে ডাক্তার তাকে শহর থেকে চেকআপ করতে পারবেন। এমনকি শহরে বসেই অপারেশন করে রোগীকে সারিয়ে নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে অপারেশনের যন্ত্রপাতিগুলোকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় রাখতে হবে। চালকবিহীন গাড়ি নিজেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। গাড়ির অপারেটর বাইরে থেকে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে।

ড্রোন প্রযুক্তি ব্যয়বহুল হওয়ায় এখন এর ব্যবহার কম। ফাইভজি প্রযুক্তি বাজারে এলে ড্রোনের ব্যবহার সহজ হবে। এক শহর থেকে আরেক শহরে ড্রোনের সাহায্যে ওষুধপত্র ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী পাঠানো যাবে। খরচ কম পড়বে।

ফাইভজি ব্যবহারের জন্য কী কী প্রস্তুতি প্রয়োজন?

ফাইভজি প্রযুক্তি বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ২৬ অথবা ৩৭ গিগাহার্জের ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে এমন চিপ ও ডিভাইস বানাতে হবে, বিশেষ করে অ্যান্টেনা ডিজাইন করা হবে জটিল।

জাপানে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের আইটি পড়াশোনার পার্থক্য কী?

বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোকে বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা লক্ষ্য নিয়ে পড়ানো হয় না। জাপানে উচ্চশিক্ষার শুরু থেকেই নির্দিষ্ট একটি বিষয় ঠিক করে পড়ানো হয়। গবেষণাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়েই গবেষণা করে রিসার্চ পেপার প্রকাশ করতে হয়।

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে ধারণা থাকলেও পড়াশোনা শেষ হলে তার কাজের দক্ষতা সেভাবে তৈরি হয় না।

তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ কেমন করছে?

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তিতে বেশ এগিয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং, সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়করণে ভালো করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগও চোখে পড়ার মতো।

বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

প্রথমত, প্রতিবছর প্রচুর গ্র্যাজুয়েট বের হলেও তাদের মধ্যে মানসম্মত প্রকৌশলী পাওয়া কঠিন।

দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিষয়ভিত্তিক লেখাপড়া হয় না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ বছরের পুরনো প্রযুক্তি নিয়েও পড়ানো হয়। ফলে বিশ্ব-চাকরি বাজারে এরা পিছিয়ে পড়ে।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি বাজার ছোট। তাই অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ কম।

বাংলাদেশকে নিয়ে আপনার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে কি না

জাপানে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে পারলে ভালো লাগবে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় উদ্যোগগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সহযোগিতার চেষ্টা করব।

দেশের পলিসি নির্ধারণে সুযোগ পেলে কাজ করতে চাই।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment