রোয়ান থেকে মি. বিন

রোয়ান থেকে মি. বিন

মি. বিনকে কে না চেনে? কিন্তু যদি বলি, রোয়ান সেবাস্টাইন অ্যাটকিনসনকে চেনেন? অনেকেই মাথা চুলকাবেন, না, মানে ইয়ে… ঠিক চিনতে পারছি না! এই বেলা জেনে রাখুন, মি. বিন চরিত্রে অভিনয় করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়েছেন যে অভিনেতা তিনিই রোয়ান সেবাস্টাইন অ্যাটকিনসন। ১৯৫৫ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের ডারহামে জন্ম নেওয়া রোয়ান লেখাপড়া করেছেন তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে। কিন্তু পেশা গড়েছেন রূপালী পর্দায়। জন্মদিনে রোয়ানের সাফল্যের গল্প শোনাচ্ছেন মারুফ ইসলাম


159555694_99038c১৯৫৫ সালের প্রথম মাসের প্রথম সপ্তাহ। তারিখ ৬ জানুয়ারি। সপ্তাহের শেষ দিনে এরিক অ্যাটকিনসন ও ইলা মে দম্পতির ঘর আলো করে এলো চতুর্থ সন্তান। কিছুটা কী মনক্ষুণ্ন এই কৃষক দম্পতি? তা হতেই পারেন। ইতিমধ্যে তিন-তিনটি পুত্র সন্তান ঘর আলো করে রেখেছে তাঁদের, চেয়েছিলেন এবার চাঁদের জোছনা হয়ে ঘরে আসুক একটি কণ্যা সন্তান! কিন্তু ঈশ্বরের লীলা বোঝা বড় দায়! মন খারাপ করে দেওয়া এই চতুর্থ সন্তানই যে এরিক দম্পতিকে ইতিহাসে ঠাঁই করে দেবে তা তো আর বোঝেননি এরিক-ইলা দম্পতি!

যাই হোক, মন খারাপ করে তো আর লাভ নেই। ছেলের একটা নাম রাখা চাই। সৃষ্টিকর্তার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করে তারা ছেলেন নাম রাখলেন রোয়ান সেবাস্টাইন। নামের শেষে বাবার নাম যোগ করে সেটা দঁড়ালো রোয়ান সেবাস্টাইন অ্যাটকিনসন। এত বড় নাম অবশ্য খাতা-কলমেই থাকল, ছেলে বড় হতে থাকল রোয়ান নামেই।

একটু বড় হওয়ার পর ছোট্ট রোয়ানকে ভর্তি করা হলো ডারহামের এক অভিজাত স্কুল-ডারহাম স্কটিশ স্কুলে। এখানে প্রাথমিক পর্ব শেষ করার পর স্বাভাবিকভাবেই স্কুল বদল করতে হলো। তাকে ভর্তি করা হলো সেন্ট বিজ স্কুলে। লেখাপড়ায় বরাবরই ভালো ছিল রোয়ান। ছিল মনোযোগী আর মেধাবী। ফলে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক সবই উতরে গেল সাফল্যের সাথেই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। হ্যাঁ, রোয়ান এবার ভর্তি হলেন যুক্তরাজ্যের নিউ ক্যসল ইউনিভার্সিটিতে। পড়ার বিষয়, তড়িৎ প্রকৌশল। স্নাতকও শেষ হলো সাফল্যের সাথে। এবার স্নাতকোত্তর। রোয়ান ভাবলেন, ভার্সিটি বদল করা যাক। তিনি ভর্তি হলেন বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কুইনস কলেজে।

অনেকেই ভাবতে পারেন, কেন ভার্সিটি বদল? কেন কুইনস কলেজ? কারণ একটা আছে অবশ্য। কুইনস কলেজের ব্যাপারে আলাদা একটু দুর্বলতা ছিল রোয়ানের মনে। না, না, সেটা বান্ধবীঘটিত কোনো ব্যাপার নয়; এই কুইনস কলেজ থেকেই যে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেছেন রোয়ানের বাবা। মনে মনে রোয়ানের তাই সুপ্ত খায়েশ ছিল, যে প্রতিষ্ঠান থেকে বাবা সার্টিফিকেট নিয়েছেন সেই প্রতিষ্ঠানের একটি সার্টিফিকেট তারও থাকুক! বাবা এই কলেজ থেকে সার্টিফিকেট নিয়েছিলেন ১৯৩৫ সালে আর ছেলে সার্টিফিকেট নেন ১৯৭৫ সালে। কুইসন কলেজ আরও এক কারণে স্মরণীয় রোয়ানের জীবনে-২০০৬ সালে কুইনস কলেজ তাঁকে সম্মানসূচক ফেলো ডিগ্রি প্রদান করেছে।

১৯৭৫ সালে আনু্ষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাজীবন শেষ হলো রোয়ানের, এবার পেশা গড়ার দিকে তো মনোযোগ দিতে হয়। রোয়ানের মা-বাবা বোঝান ছেলেকে, প্রকৌশলে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছ, এবার কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে ঢুকে যাও। কিন্তু রক্তে যার অভিনয়ের নেশা, ভাগ্য যার অনেক আগেই লিখে রেখেছে রূপালী পর্দায় নাম, তিনি কেন চাকরি করতে যাবেন? স্কুল-কলেজ থেকেই বিভিন্ন থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রোয়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েও যুক্ত ছিলেন ক্যাম্পাসের থিয়েটার ক্লাবে। ফলে খুব সহজেই সুযোগ পেয়ে গেলেন রেডিওতে। তিনি বিবিসি রেডিওতে একটি কমেডি শো শুরু করেন, নাম ‘দি অ্যাটকিনসন পিপল’! সময়টা ১৯৭৮। তিনি এবং রিচার্ড কার্টিস মিলে লিখতেন এই শোর স্ক্রিপ্ট আর প্রযোজনা করতেন গ্রিফ রাইস জোনস। মাত্র কয়েকটি শো প্রচারের পরই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দি অ্যাটকিনসন পিপল।

rowanfiatalবলা যায় এই খ্যাতিই তাঁকে সুযোগ এনে দেয় টেলিভিশনে। ১৯৮৯ সালে তিনি লন্ডন উইকেন্ড টেলিভিশনে ‘ক্যানেড লাফটার’ নামে একটি হাস্যরসাত্মক অনুষ্ঠান শুরু করেন। বলা বাহুল্য এই অনুষ্ঠানও রাতারাতি জনপ্রিয়তা পায়। রোয়ানও একলাফে চলে আসেন বিবিসি টেলিভিশনে। বিবিসিতে তিনি শুরু করেন ‘নট দ্য নাইন ও’ ক্লোক নিউজ’। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করতেন তাঁরই বন্ধু জন এল লয়েড। যথারীতি এখানেও সাফল্য।

তবে যে সাফল্য তাকে বিশ্বব্যাপী এক নামে পরিচিতি এনে দিয়েছে, যে সাফল্য তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম ভুলিয়ে দিযেছে তার নাম মি.বিন। ১৯৯০ সালের কথা। রোয়ান তখন কাজ করেন টেমস টেলিভিশনে। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল যে ৯০ সালের প্রথম দিনে তারা আধা ঘণ্টাব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। কী হতে পারে সেই বিশেষ অনুষ্ঠান? ভাবতে ভাবতে জন্ম নেয় ইতিহাসের এক বিখ্যাত চরিত্র মি. বিন। আর মি.বিনকে পর্দায় স্বার্থকভাবে রূপ দিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নেন রোয়ান অ্যাটকিনসন। ১৯৯০ সালে শুরু হওয়া মি. বিন একটানা চলে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৭ সালে মি. বিনকে নিয়ে তৈরি হয় ফিচার ফিল্ম।

এরপর ২০১২ সালে মি. বিন চরিত্র থেকে পুরোপুরি অবসর নেন রোয়ান অ্যাটকিনসন। টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোয়ান বলেন, ‘আর কত শিশু হয়ে থাকা যায়! এবার একটু বড় হতে দিন আমাকে!’

তথ্যঋণ : বিবিসি, টেলিগ্রাফ, আইএমবিডি, উইকিপিডিয়া এবং মি. বিন ডটকম।

Sharing is caring!

Leave a Comment