যেতেই পারেন ফেনী

যেতেই পারেন ফেনী

শাকিল নূর : যান্ত্রিক মন অবসর খোঁজে। ইট-কাঠের জঙ্গল দেখতে দেখতে বিরক্ত চোখ এবার সবুজ দেখতে চায়। তাই বেরিয়ে পড়ি হেথা নয় হোথা। গন্তব্য ফেনী। নদীর নামে নাম এ জেলার অথবা নদীর ঘাটের নামে নাম-নিশ্চিত নয় কেউ। ফেনীর স্থানীয়দের মুখেই জানা গেল, ফেরী পারাপারের ঘাটকে এক সময় ‘ফনী’ বলা হতো এ অঞ্চলে। কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারণবিভ্রাটের কারণে কিংবা কবি ও সাহিত্যিকদের লেখ্য ভাষায় ‘ফনী’ হয়ে গেছে ফেনী।


এর বাইরে ফেনি বিখ্যাত তার বিখ্যাত মানুষদের জন্য। এ জেলায় জন্মেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙালি উপাচার্য স্যার এ.এফ রহমান, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন, শহীদ বুদ্ধীজীবি শহীদুল্লাহ কায়সার, চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী… এ তালিকা বেশ দীর্ঘ।

এসব মহান মানুষদের জন্ম দিয়েছে যে লীলাভূমি তার ধুলা স্পর্শ করতে মনে সাধ জাগে। ফেনির জলে পা ছোঁয়াতে ইচ্ছা জাগে। তাই বেড়িয়ে পড়ি ফেনীর উদ্দেশে।

ফেনীতে পৌছার পর জানা হলো আরও কিছু্। শুধু বিখ্যাত ব্যাক্তিদের বুকে ধারণ করেই ধন্য নয় এ জেলা, এর বুক জুড়ে আছে গর্ব করার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান। চলুন দেখে নেওয়া যাক এ ঝলক সে সবের তালিকা।

12583862_1130859933615324_175742186_nবিজয় সিংহ দীঘি

  • বাংলার বিখ্যাত সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের অমর কীর্তি এ বিজয় সিংহ দীঘি । জেলা শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে বিজয় সিংহ গ্রামে এ দীঘির অবস্থান। দিঘীর চারটি পাড় খুব উঁচু আর বৃক্ষ শোভিত । দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের আধার এ দীঘিটির আয়তন প্রায় ৩৭.৫৭ একর।

রাজাঝীর দীঘি

  • শহরের জিরো পয়েন্টে এ দিঘীর অবস্থান । জনশ্রুতি আছে ত্রিপুরা মহারাজের প্রভাবশালী একজন রাজার কন্যার অন্ধত্ব দুর করার মানসে প্রায় ৫/৭ শত বছর পূর্বে এ দীঘি খনন করা হয়। স্থানীয় ভাষায় কন্যাকে ঝি বলা হয়। ১৮৭৫ সালে ফেনী মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে তার সদর দপ্তর গড়ে তোলা হয় এই রাজাঝির দীঘির পাড়ে। দীঘির পাড়ে বর্তমানে ফেনী সদর থানা, অফিসার্স ক্লাব, জেলা পরিষদ পরিচালিত শিশু পার্ক সহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন গড়ে উঠেছে।

সোনা গাজী মুহুরী সেচ প্রকল্প

  • ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে শুরু হয়ে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সেচ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই প্রকল্পকে ঘিরে গত আড়াই দশকে গড়ে ওঠে বিনোদন ও পিকনিক স্পট । শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে ভ্রমণ পিপাসু লোক এবং পর্যটক বেড়াতে আসে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মুহুরী রেগুলেটরের চারদিকে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি, বাঁধের দুপাশে নীচ থেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো এবং উপরদিকে দুর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরীর জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং প্রায় ৫০ জাতের হাজার হাজার পাখির দেখা পাওয়া যায় ।

শিলুয়ার শীল পাথর

  • সাবেক রতননগর পরগনার এক জায়গায় উনিশ শতকের একটি শিলা দেখা যায়।এই শিলাটি প্রাচীন কীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধারনা করা হয়, শিলা থেকে ওই স্থানের নামকরণ হয়েছে শিলুয়া। এটি ছাগলনাইয়া হতে ৫-৬ কিলোমিটার পশ্চিমে চৌধুরীবাজারে শীলটি অবস্থিত।

12576297_1130859936948657_1906938133_nবায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • দেশের একমাত্র বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত ফেণীর সোনাগাজীর উপজেলার মহুরী প্রজেক্ট বেড়ী বাধের পাশে পাঁচটি খুটিতে বাতাসের সাহায্যে পাখা আকৃতির ডানার মাধ্যমে ২৬৫ কেবি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

পাগলা মিঞাঁর মাজার

  • দরবেশ পাগলা মিঞাঁর প্রকৃত নাম ছিল সৈয়দ আমীর উদ্দিন(রঃ)। তিনি আধুনিক ফেনী জনপদের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর অপরিসীম প্রভাব রেখে গেছেন । তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পর্কে ফেনী অঞ্চলে বহু জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে ।

চাঁদগাজী ভূঁঞা মসজিদ

  • ছাগলনাইয়া থানার চাঁদগাজী এলাকা মোগল আমলে বেশ উন্নত ছিল। এখানেই রয়েছে তিনশ বছরের পুরোনো চাঁদগাজী ভূঁঞা মসজিদ। চাঁদগাজী ভূঁঞা ছিলেন মোগল আমলে ফেনীর পূবর্অঞ্চলে এক স্বনামধন্য জমিদার। জানা যায়, আঠার শতকের গোড়ার দিকে তিনি প্রথম নদী ভাঙ্গনের কারণে প্রচুর ধন-সম্পদ ও লোকলস্করসহ দুরদেশ থেকে এসে বতর্মান ছাগলনাইয়ার মাটিয়াগোধা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।

শমসের গাজী দিঘী

  • বাংলার বীর শমসের গাজী বৃটিশ শাসনের আগে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলীম শাসকরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন।তাদের মধ্যে বাংলার বীর শমসের গাজী অন্যতম। তার জম্মস্থান ছিল ছগলনাইয়া উপজেলার চম্পকনগরে। শমসের গাজীর বসত ঘরের দক্ষিণ পূর্বে যে দিঘী রয়েছে তার নাম শমসের গাজী দিঘী।

12571322_1130859940281990_1410360732_nজগন্নাথ কালি মন্দির

  • শমসের গাজী তার বাল্যকালের লালন কর্তা জগন্নাথ সেনের স্মৃতিতে একটি মন্দির ও কালি মূর্তি নির্মাণ করেন।মূর্তিটি ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। জগন্নাথ মূর্তির দর্শনীয় বিষয় হচ্ছে, এর দুইনেত্র প্রকোষ্ঠে বসানো লাল বর্ণের পাথর। অন্ধকারে পাথরগুলো আলো বিকিরণ করে। প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এটি দেখতে আসেন।

এ ছাড়াও ফেনী জেলা শহরে আরো কিছু দেখায় মত স্থান রয়েছে। চৌধুরী বাগান বাড়ী, তৃপ্তি এগ্রো এন্ড এগ্রিকালচার পার্ক। মাতুভুইয়া জমিদার বাড়ী। জেলা পরিষদ, ফেনী সরকারী কলেজ। জেলা সুইমিং পুল। হাসঁ প্রজনন কেন্দ্র, মহিষ প্রজনন কেন্দ্র, কৃষি গবেষনা নারিকেল বাগান। পুরাতন বিমান বন্দর। গার্লস ক্যাডেট কলেজ। ব্রিটিশ বিপ্লবী সূর্য সেনের বাড়ী।

থাকার ব্যবস্থা

জেলা সদর ও উপজেলায় সরকারি বাংলো ও থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল, রেষ্ট হাউজ রয়েছে। যেমন ফেনী সার্কিট হাউস, জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস।

যাতায়াত

এসব দর্শনীয় স্থানে যেতে বাস, হিউন্যান হলার, সিএনজি অটোরিক্সা পাওয়া যায়। এছাড়া রিকশা তো রয়েছেই।

Sharing is caring!

Leave a Comment