সিলেটের স্মৃতি

সিলেটের স্মৃতি

  • মো মাসুদুল আলম

ভ্রমণ বরাবরই আনন্দের। আর তা যদি হয় শিক্ষা সফর তাহলে আনন্দ আর শিক্ষা একসঙ্গেই লাভ করা যায়। বলছি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের ৩০তম ব্যাচের সিলেট শিক্ষা সফরের কথা।

রাত ১২টায় শ্যামলী পরিবহনে চেপে আমরা যাত্রা শুরু করলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। রাতে তেমন যানজট না থাকায় ভোর সোয়া পাঁচ ঘণ্টায় পৌছে গেলাম সিলেটে। থাকার জন্য হোটেল খুজতে কিছুটা বেগ পেতে হলেও অবশেষে হোটেলে পৌছলাম। অতঃপর নাস্তা সেরেই রওনা হলাম মালনীছড়া চা বাগানের উদ্দেশ্যে।

ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৪৯ সালে ১৫০০ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় মালনীছড়া চা বাগান। চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য আমাদের মনকাড়লেও কষ্ট পাচ্ছিলাম এই ভেবে, সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করেও মাত্র ৮০ টাকা মজুরী পায় চা বাগানের শ্রমিকেরা। জায়গায় জায়গায় জোঁক, তার সাথে রোদ-বৃষ্টি, ঝড়; আপনি নিজের চোখে না দেখলেহয়তো বুঝতে পারবেন না তাদের কষ্ট কতটা।

প্রথমবারের মতো চা বাগানে বসে চা পানের অভিজ্ঞতা হয়েছিল মালনীছড়া চা বাগানে। চা খাওয়া শেষে আমরা যাত্রা শুরু করি চাষনী পীরের মাজারের উদ্দেশ্যে।

চাষনী পীরের মাজার দেখার পর রওনা হলাম মরমী কবি দেওয়ান হাছন রাজার স্মৃতি বিজড়িত জাদুঘর ‘রাজাস’ এর উদ্দেশ্যে।

মরমী কবির পোশাক, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বিভিন্ন বই এবং তার পূর্ব পুরুষদের পরিচয়সহ বিভিন্ন তথ্য ও জিনিসপত্র স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরে। মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে আমরা কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে গেলাম।

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্য সংগঠন যা ১৯৩৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে রয়েছে আরঙ্গজেবের আমলের হাতে লেখা কোরআন শরিফসহ শতশত দুর্লভ বই।

প্রথম দিন কাটল এভাবেই। পরের দিনের প্রথম গন্তব্য লালাখাল। এরপর জাফলংয় এ যাওয়ার জন্য রওনা হলাম।

প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের অনেক নাম শুনলেও সরাসরি দেখে খুব একটা ভালো লাগেনি। মনে হচ্ছিল স্থানীয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা আর দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের খাম খেয়ালিতে ক্রমেই ময়লা হচ্ছে জাফলংযের স্বচ্ছ পানি।

কাছেই ছিল খাসিয়াপল্লী। সেখানে গেলাম। সবকিছু দেখে মনে হল পুরো জাফলং থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এই খাসিয়া পল্লী। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় জাফলং থেকে হোটেলের উদ্দেশ্যে আমরা রওনা হলাম।

হোটেলে পৌছে খানিক বিরতির পর গেলাম শাহজালাল (রঃ) এর মাজারে। মাজারটি হোটেল থেকে মাত্র ৮-১০ মিনিটের দূরত্বেই ছিল। মাজারে দেখা গেল নানা ধরনের মানুষ। কেউ জিকির করছে, কেউবা গান গাইছে।

পরদিন ছিল সিলেট ভ্রমণের শেষদিন। এদিন যাত্রা শুরু করতে দেরি হওয়ায় রাতারগুল সফর পণ্ড হল। নাস্তা শেষে বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।

পথিমধ্যে পাথর উত্তোলন ও আনা-নেয়ার কাজে কি পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয় তা দেখলাম। যে মানুষগুলো পাথর আনা নেয়ার কাজ করছিল তাদের জীবন যাপন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেলাম।

কিছুক্ষণ পর পৌঁছলাম কাক্ষিত লক্ষ্য বিছানা কান্দিতে। সেখানে ছিল গতিশীল স্বচ্ছ পানির স্রোত। বন্ধু-বান্ধবের সাথে আমার পুরো দিন বেশ আনন্দেই কাটলো। বিকালে বিছানাকান্দি বাজারে কিছু কেনা-কাটা শেষে আমরা রওনা হলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে।

হোটেলে পৌছে রাতের খাবার পর্ব শেষ করে বাস কাউন্টারে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম।পরদিন সূর্য উঠার পূর্বেই পৌছে গেলাম ঢাকায়। আবার শুরু হয়ে গেল প্রতিদিনের যান্ত্রিক জীবন।

Sharing is caring!

Leave a Comment