৭ বছরেও কাটেনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের বেহাল দশা

৭ বছরেও কাটেনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের বেহাল দশা

সজীব হোসাইন, রংপুর : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ঢুকলেই যে চিত্র দেখা যায়, তা হল বই রাখার ফাঁকা সেল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৭ বছর পার করলেও রয়েছে বিষয়ভিত্তিক বইয়ের তীব্র সংকট।

নেই তথ্যপ্রযুক্তির কোনো ছোঁয়া। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাড়েনি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, ফলে আগ্রহ থাকলেও গ্রন্থাগারে গিয়ে প্রয়োজন মতো বই পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছয়টি বিভাগ প্রতিষ্ঠার চার-পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও গ্রন্থাগারে নেই লোকপ্রশাসন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের বই। ফলে বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট সেল ফাঁকাই রয়ে গেছে। গ্রন্থাগারে এ সংকটের কারণে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে গ্রন্থাগারের জন্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বই ক্রয় করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যেসব বিভাগের বই রয়েছে তা সিলেবাস ভিত্তিক নতুন বই নয় এবং এইসব বইয়ের মধ্যে অধিকাংশই পুরানো ও অপ্রয়োজনীয় বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

গ্রন্থাগারে কম্পিউটারে অডিও-ভিজ্যুয়াল কর্নারে অডিও এবং ভিডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য দেওয়ার কথা থাকলেও গ্রন্থাগারে রয়েছে মাত্র দুটি কম্পিউটার। যা গ্রন্থাগারে কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানায় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন না বলেও জানান।

ছয়টি বিভাগ প্রতিষ্ঠার চার-পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও গ্রন্থাগারে নেই লোকপ্রশাসন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের বই। ফলে বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট সেল ফাঁকাই রয়ে গেছে।

নারী জাগরণের পুরোধা বেগম রোকেয়ার নামে গ্রন্থাগারে একটি কর্নার করা হলেও সেখানে বেগম রোকেয়া সম্পর্কিত বই সংখ্যা তিন-চারটি। পর্যাপ্ত নয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই। ফলে এই মহীয়সী নারী এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ রয়ে যাচ্ছেন তরুণ প্রজন্ম।

অপরদিকে সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন বাদে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গ্রন্থাগারে বই পড়ার সুযোগ পায়। এ সময়ে প্রতিটি বিভাগের প্রতিদিন গড়ে দু-তিনটি করে ক্লাস থাকে। ফলে ক্লাসের সময়টুকু বাদ দিলে প্রতিদিন একজন শিক্ষার্থী গ্রন্থাগারে বসে বই পড়ার সুযোগ পান মাত্র পাঁচ-ছয় ঘণ্টার মতো। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারসমূহে পর্যাপ্ত বই নেই এবং আবাসিক হলসমূহে কোন গ্রন্থাগারই চালু হয়নি। এজন্য কমপক্ষে রাত ৮টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চালু রাখার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য গ্রন্থাগারের পত্রিকা পড়ার কক্ষে আসন সংখ্যা মাত্র ২৫টি। আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় অনেক সময় ধরে তাদের অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। দৈনিক পত্রিকার সংখ্যাও হাতেগোনা। চালু নেই আর্ন্তজাতিক কোন র্জানালই।

দরকারি বইয়ের চাহিদাপত্র দেওয়া হলে ‘নেই’ বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন গ্রন্থাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কথা বললে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক আব্দুস সামাদ প্রধান দ্যা প্রমিনেন্টকে জানান, শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগার বই সংকটে অভিযোগের বিষয়টি একাধিকবার উপাচার্যকে অবহিত করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের বই ক্রয় বাবদ প্রতি বছর কত টাকা বাজেট দেওয়া হয় জানেন না খোদ গ্রন্থাগারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান। উপাচার্য বই সংকটের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল, তবু এ ব্যাপারে কোন অগ্রগতি নেই বলেও জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে গ্রন্থাগার বই সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী বলেন, ‘ দ্রুতই সব বিভাগের পর্যাপ্ত বই গ্রন্থাগারে সরবরাহ করা হবে। বই ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’ favicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment