বেরোবির প্রত্যাশার বছর ২০১৬

বেরোবির প্রত্যাশার বছর ২০১৬

সজীব হোসাইন, রংপুর : নতুন বছর ২০১৬কে সামনে রেখে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যে বেশকিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। বাস্তবায়নের পথে রয়েছে আরও কিছু প্রকল্প।

বিদায়ী বছরে বেরোবির যত সাফল্য : বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আবাসিক সমস্যা নিরসনে চালু করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং শহীদ মুক্তার এলাহী হল নামের দুটি আবাসিক হল। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথম চালু করা হয় তৃতীয় লিঙ্গ কোটা। পাকিস্তানের সাথে একাডেমিক, প্রফেশনাল ও গবেষণা বিষয়ক কোনো প্রকার সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৪৭তম সিন্ডিকেট সভায়। চালু করা হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া বাংলা নববর্ষ উদযাপন ছিল রেখাপাত করার মতো। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখের ঢাকা-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে একদিনের মধ্যে রাস্তায় গতিরোধক নির্মাণ ছিল শিক্ষার্থীদের বিদায়ী বছরটির আন্দোলন গুলো মধ্যে অন্যতম পাওয়া।

ভয়াবহ সেশনজটের কবলে শিক্ষার্থীরা : বছরের শুরুতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী নানামুখি আন্দোলনে কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল ক্লাস-পরীক্ষা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে স্নাতকোত্তরের সিলেবাস প্রণয়ন বিলম্ব অনির্ধারিত বন্ধ সেশনজটকে আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের নতুন করে দেখা দিয়েছে সেই সেশনজট। এর মধ্যে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, গনিত, পদার্থ,ইংরেজি, বাংলা বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া একই কারণে অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৬/৮ মাসের সেশনজটে পড়বেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেশনজট নিরসনে কর্তৃপক্ষ তৎপর থাকায় এবং শিক্ষকরাও আন্তরিক থাকায় চরম এ সেশনজট কিছুটা লাঘব হবে বলেও জানিয়েছেন বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সেশনজট নিরসনে ২০১৫ সালে বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক।

ক্যাম্পাসের নানা সংগঠনের ২০১৫ সালের প্রাপ্তি এবং ২০১৬ সালের প্রত্যাশা : ২০১৫ সাল ঘিরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট অ্যাসোসিয়েশনের রয়েছে বিশেষ অর্জন। আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি বিভাগ নিয়ে আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বছরজুড়ে নানা পুরস্কারের মধ্যে গত ২৬ ডিসেম্বর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিতর্ক উৎসবে রংপুর আঞ্চলিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট এসোসিয়েশন দলটি। চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দু’টি দলই ঢাকায় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হয়েছে। কথা বললে বিজয়ী দলের সদস্য রক্তিম মিলন বলেন, আশাকরি ঢাকাতেও আমরা চ্যাম্পিয়ন হবো।

ক্যাম্পাসের প্রথম ব্যান্ড দল অগ্নিস্নানের পঞ্চম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনের উল্লাসটা ছিল ভিন্ন রকমের। কথা বললে দি প্রমিনেন্টকে রুকুনুজ্জামান হিমু বলেন, ক্যাম্পাসের প্রথম এবং একমাত্র ব্যান্ড হিসেবে অগ্নিস্নান আরও সংগঠিত হচ্ছে। নতুন বছরে তো চমক থাকবেই দর্শক শ্রোতাদের জন্য। সবুজ ক্যাম্পাসের স্বপ্ন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন হোয়াইট। কথা বললে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাধারন সম্পাদক আ.জ.ম ওবায়দুললাহ মাসুম বলেন, আগামীতে শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বৃক্ষরোপন কর্মসূচি অব্যহত রাখব। অপরদিকে ক্যাম্পাস সবুজায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজের পথে সংগঠনটি। বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা রোপণ করেছে প্রায় সাত হাজার নানা প্রজাতির বৃক্ষ। পরবর্তীতে আরও বৃক্ষ রোপণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা শাহ্‌ ফরিদুল ইসলাম।

‘একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন’এই শ্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর থেকে যাত্রা শুরু করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট। এ পর্যন্ত তাঁরা প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগিকে রক্ত প্রদানের ব্যবস্থা করেছে বলে জানিয়েছেন বাঁধনের বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মানস রায়। এছাড়াও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে নতুন বছর ঘিরে রয়েছে তাঁদের নানা কর্ম পরিকল্পনা।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ২০১৬ সাল নিয়ে উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের প্রত্যাশা: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে গতিশীল রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী দি প্রমিনেন্টকে বলেন, ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংকটময় মুহূর্তে আমাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ক্রান্তিকাল কেটেছে। উন্মোচিত হচ্ছে অপার সম্ভবনার দ্বার।’

তিনি আরও জানান, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এক হাজার আসনের ছাত্রী হল নির্মাণ এবং ড.ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণের কাজ। অনতিবিলম্বে চালু করা হবে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটরিয়া এবং কর্মকর্তাদের ডরমেটরি ভবন। সম্পন্ন করা হবে স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যের অবশিষ্ট কাজ। কাজ সম্পন্ন হলে চলতি মাসেই চালু হতে পারে ক্যাম্পাস জুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি-ওয়াইফাই।’

সব মিলিয়ে গত বছরের সফলতাগুলোকে এগিয়ে নিয়ে এবং সকল জরা-জীর্ণতাকে এড়িয়ে নতুন বছরে আরো সমৃদ্ধ হবে বিশ্ববিদ্যালয়- এমন প্রত্যাশাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।favicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment